আগামী কয়েক মাসে দ্বিপাক্ষিক জটগুলি খুলতে পারলে মোদী-হাসিনার বৈঠক সফল হবে। ফাইল ছবি।
আগামী সেপ্টেম্বরে, অর্থাৎ বাংলাদেশে ভোটের মাত্র কয়েক মাস আগে নয়াদিল্লি আসার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। উপলক্ষ্য অবশ্যই ভারতের আমন্ত্রণে জি ২০ শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেওয়া। বাংলাদেশ এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীভুক্ত দেশ নয়। কিন্তু এ বারের সভাপতি রাষ্ট্র ভারত। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকেই ঢাকার কাছে আমন্ত্রণ গিয়েছে অতিথি দেশ হিসাবে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার। সূত্রের খবর, ঢাকা এই আমন্ত্রণ স্বীকারও করেছে।
জি ২০-র পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক করবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে। কূটনৈতিক শিবির বলছে, এই বৈঠক বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তখন সে দেশে নির্বাচনের মরসুম। ওয়াকবিহাল মহলের মতে, এই বছর ভারতের কাছ থেকে বেশ কিছু ‘কূটনৈতিক উপহার’ আশা করছে হাসিনা সরকার। ঘরোয়া রাজনীতিতে ভারত-বিদ্বেষী একটা বড় অংশের মুখ বন্ধ করতে তা সহায়ক হবে বলেই মনে করছে আওয়ামীলিগ সরকার।
ঢাকা সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসের ওই সম্ভাব্য সফরকে সফল করার জন্য কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করে এখন থেকেই দৌত্য শুরু করতে চাইছে বাংলাদেশ। তাদের হিসাব, আগামী কয়েক মাসে দ্বিপাক্ষিক জটগুলি খুলতে পারলে মোদী-হাসিনার বৈঠক সফল হবে। যা নির্বাচনের আগে যথেষ্ট ইতিবাচক আবহাওয়া তৈরি করবে।
যে বিষয়গুলির উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে ঢাকা, তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হত্যা। বিষয়টি দেশবাসীর আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। ঢাকার বক্তব্য, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে কোনও হত্যা ঘটছে না, কিন্তু দেখা যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ঘটছে। সম্প্রতি ঢাকায় একটি সম্মেলনে বাংলাদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়র আলম বলেছেন, “আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা (সীমান্ত হত্যা) যে একটা বিরক্তিকর জায়গা, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এটা আমাদের বিব্রত করে। আমাদের সম্পর্কটাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে না পারার একটা কারণ হল সীমান্ত হত্যা।” তাঁর কথায়, “ভারতের কাছে অপ্রিয় সত্য তুলে ধরতে কখনও পিছপা হইনি। গত সপ্তাহে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি ভারতের কাছে আমরা কূটনৈতিক ভাষায় জানিয়েছি।”
দ্বিতীয়ত, ঢাকা চাইছে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রফতানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিছুটা সরবরাহের কোটা বহাল রাখতে। তার কারণ যে মুহূর্তে নয়াদিল্লি পেঁয়াজ বা গম বা ডালের মতো পণ্য রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলাদেশের বাজারে তা অগ্নিমূল্য হয়ে ওঠে। আপাতত গম রফতানি ভারত বন্ধ করায় বাংলাদেশকে কানাডা থেকে গম আমদানি করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেশি পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে বিদেশ মন্ত্রক পর্যায়ে দু’দেশের ঐকমত্য হয়েছে। কথা চলছে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রকের সঙ্গে। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষোভ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্যে ভারতের বাজার ভরিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্কের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। ঢাকা আশা করেছিল এটা আর নবীকরণ করা হবে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশ এবং নেপাল থেকে পাটজাত পণ্য ভারতে রফতানি হবে তাতে আগামী পাঁচ বছর শুল্ক জারি থাকবে। ঢাকার বক্তব্য, নেপাল থেকে পাটজাত পণ্য ভারতে সামান্যই আসে। অর্থাৎ এটি বাংলাদেশের কথা ভেবেই চাপানো হয়েছে। হাসিনার ভারত সফরের এটির পরিবর্তন করার জন্য ভারতের কাছে তদ্বির করবে ঢাকা।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানো নিয়েও মায়ানমারকে বোঝানোর জন্য নয়াদিল্লির উপর চাপ বাড়াতে চায় ঢাকা। বাংলাদেশের বক্তব্য, ভারতের পাশাপাশি চিনের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকারের উপর প্রভাব বজায় রাখার দায় চিন এবং ভারত উভয়েরই রয়েছে। মায়ানমারকে সঙ্গে রাখা বেজিং এবং নয়াদিল্লির কৌশলগত বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy