(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা ও মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
রাত পোহালেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ‘বিজয় দিবস’। সেই উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে বিবৃতিতে দেশছাড়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি বিন্দুমাত্র সংবেদনশীলতা নেই মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের। তারা পারলে ভিন্ন বয়ান উপস্থাপন করে জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্র থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন মুছে ফেলত।’ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা ইউনূস সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘এই সরকার গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। তাদের প্রধান লক্ষ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা এবং তাদের কণ্ঠরোধ করা। বিপরীতে তারা স্বাধীনতা-বিরোধী উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদতদিয়ে যাচ্ছে।’
হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল ‘শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সোনার বাংলা’ গঠন করা। তাঁর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন সেই কঠিন কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে এলেন, পরিবার-সহ হত্যা করা হল তাঁকে। সরকারের অন্য প্রধান চার নেতাকে জেলের মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হল। স্বাধীনতা-বিরোধীদের এই সব কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেওয়া। হাসিনা লিখছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। শুরু হয় হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। ঘাতক এবং তাদের দোসররা ইতিহাসেরএই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে জারি করে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’।’
সেই পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করে হাসিনা বলেছেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে সরকার গঠন করে গত ১৫ বছর ধরে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে আসছিল। আমরা জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিলাম। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম এবং পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছিলাম।... কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য-সহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছিল।... আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ছিল, এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রেখে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। কিন্তু সেই বাংলাদেশ আজ কোথায়?... দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কষাঘাতে জর্জরিত দেশের মানুষ। ক্ষুধার্ত মানুষ ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খাচ্ছেন।’
বিবৃতিতে হাসিনা বলছেন, ‘দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশবিরোধী গোষ্ঠী অবৈধ ও অসাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে অগণতান্ত্রিক এই গোষ্ঠীর জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা ক্ষমতা দখল করে সকল জনকল্যাণমুখী কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে।’ মুজিবকন্যার দাবি, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সংশ্লিষ্ট যা কিছুতে তারা দায়সারা গোছের আচার পালন করছে সেটা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দেশের মানুষের নির্ভেজাল অনুরাগেরচাপের কারণে।’
ঢাকা সফরে যাওয়া ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর কাছে ইউনূস সরকার অনুযোগ করেছিল, দিল্লি থেকে হাসিনা যে বিবৃতিগুলি প্রকাশ করছেন, তাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আক্রমণ করা হচ্ছে। দিল্লি এটা বন্ধ করতে বলুক। মিস্রী পাল্টা জানিয়ে দেন, হাসিনা তাঁদের অতিথি। অর্থাৎ অতিথিরও মতপ্রকাশের অধিকারে বিশ্বাসী দিল্লি। তবে এই সব বিবৃতির সঙ্গে ভারতের কোনও যোগ নেই। এই চাপ যে দিল্লি বা হাসিনাকে স্পর্শ করেনি, ফের বিবৃতি প্রকাশে তা স্পষ্ট হল।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে একাত্তরে স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়ানো জামায়াতে ইসলামীও। রবিবার একটি সংগঠনের আলোচনা সভায় জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির (প্রধান) হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ১৯৭১ নয় ১৯৬৫-র চেতনায় বাংলাদেশিদের আলোকিত হতে হবে। তাঁর ব্যাখ্যা, ১৯৬৫-তে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে পরাজিত হয় ভারত। তার প্রতিশোধ নিতেই ভারত আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানকে দু’টুকরো করে। হেলাল বলেন, “আমরা বলতে চাই, ১৯৬৫ সালের যে ইমান ছিল— সেই ইমান এখনও বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে জাগ্রত রয়েছে। অথএব হুমকি দিয়ে লাভ নেই।” ওই জামায়াত নেতার ব্যখ্যা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধারা ‘বিশ্বাসঘাতক ও দেশদ্রোহী’।
সভায় বিএনপি-র নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মহম্মদ রহমাতুল্লা বলেন, “একটা কথা বার বার বলা হয়, ভারত নাকি যুদ্ধের সময় আমাদের সাহায্য করেছে। আমি দ্বিমত পোষণ করি। ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশের মানুষকে সহযোগিতা করার ভান করেছিল। পুতুল সরকার বসিয়ে বাংলাদেশকে শোষণ করা ছিল ভারতের লক্ষ্য।”
দেশবাসীর উদ্দেশে বিবৃতির শেষে শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের বারে বারে পরাস্ত করেছেন বাঙালিরা। এ বারেও ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার মধ্যেও লড়াই শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিখা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাহিত হয়ে জয়ী করবে বাঙালিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy