(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা এবং টিউলিপ সিদ্দিক (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
লন্ডনে ‘বিনা পয়সার ফ্ল্যাট’ বিতর্কে এ বার নিজের বিরুদ্ধেই তদন্ত চাইছেন শেখ হাসিনার বোনঝি টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি ব্রিটেনের লেবার পার্টি সাংসদ এবং সে দেশের অন্যতম মন্ত্রী (সিটি মিনিস্টার)। সম্প্রতি লন্ডনে তাঁর একটি অ্যাপার্টমেন্ট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর থেকে তিনি বিনামূল্যে ওই ফ্ল্যাটটি নিয়েছেন। তা নিয়ে নীতি বহির্ভূত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসিনার বোনঝির বিরুদ্ধে।
ব্রিটেনের মন্ত্রী টিউলিপ সে দেশের আর্থিক দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে রয়েছেন। সেই মন্ত্রীর দিকেই নীতি বহির্ভূত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে লেবার পার্টিও। টিউলিপের ইস্তফার দাবিও তুলেছেন টরি পার্টির সাংসদেরা। যদিও হাসিনার তৎকালীন সরকার কিংবা তাঁর দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজের কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করেছেন টিউলিপ। তাঁর বক্তব্য, “আমি লেবার পার্টির সাংসদ। ব্রিটেনের পার্লামেন্টের সদস্য। মনে রাখবেন, আমি বাংলাদেশি নই। আপনারা যাঁদের বিষয়ে কথা বলছেন, তাঁদের বিষয়ে আমার কোনও ধারণা নেই।”
এই বিতর্কের আবহে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসকে চিঠিও পাঠিয়েছন টিউলিপ। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি তদন্ত করে দেখার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। ব্রিটেনের কোনও স্বাধীন তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে দিয়ে ওই অভিযোগের তদন্ত করাতে চান তিনি। চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন, “আমি জানি কোনও ভুল করিনি। তাও আমি চাই আপনি স্বাধীন ভাবে এই বিষয়টি তদন্ত করে সত্য প্রকাশ্যে আনুন। যাতে কারও মনে কোনও সন্দেহ না থাকে।” ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চিন সফরে যাওয়ার কথা ছিল টিউলিপের। তিনি সেই সফরসূচি বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছেন লেবার পার্টির নেতারা। দাবি করা হচ্ছে, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করার জন্যই ব্রিটেনে থেকে যাচ্ছেন।
সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি দাবি করা হয়, আব্দুল মোতালিফ নামে এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন টিউলিপ। ব্রিটিশ সরকারের জমি ও আবাসন দফতরের ‘মালিকানা হস্তান্তর নথি’ প্রকাশ করে ওই খবরে দাবি করা হয়, মোতালিফের কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা গ্রহণের বিনিময়ে কোনও অর্থ দিতে হয়নি টিউলিপকে। ওই নথি জানাচ্ছে, ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। তখন অবশ্য টিউলিপ মন্ত্রী বা পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন না। এর আগে ২০০১ সালে সেটি ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা) দিয়ে কেনা হয়। ফ্ল্যাটটির বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে একই ভবনের আর একটি ফ্ল্যাট গত অগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৭ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা) বিক্রি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে টানা চার বার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ, হাউস অফ কমন্সের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি সে দেশের মন্ত্রী। অন্য দিকে, প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ৭০ বছরের মোতালিফ ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত। মোতালিফ বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা। ভোটার তালিকা সংক্রান্ত নথি জানাচ্ছে, ওই ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আর এক ব্যক্তিও বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। মোতালিফের ঘনিষ্ঠদের ব্যাখ্যা, ব্যবসায় মন্দার সময় তাঁকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা তথা হাসিনার বোন রেহানা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পদ’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন মোতালিফ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy