প্রতিমা তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের ঢাকায়। ছবি: রূপম চৌধুরী
পদ্মার উপরে ঝলমল করছে শরতের মেঘ। ইতিউতি মুখ দেখাচ্ছে কাশফুলও। কিন্তু মা দুর্গার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গত বারের ভয়ানক হিংসার স্মৃতিও ফিরে আসছে বাংলাদেশের কিছু জেলায়। তাই কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী ও নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যস্ততাও তুঙ্গে।
দুর্গাপুজোর সময় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং আইনশৃঙ্খলা অটুট রাখতে সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিস্তারিত বৈঠক করেন বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কর্তাদের সঙ্গে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রকের জন-নিরাপত্তা বিভাগ, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রক, পুলিশ এবং গোয়েন্দা বাহিনী এনএসআই, ডিজিএফআই-এর কর্তারা। গত বারের তুলনায় এই বছর ১ হাজার পুজো বেড়েছে বাংলাদেশে। দেশ জুড়ে পুজোর সংখ্যা এ বছর ৩২ হাজার। মন্ত্রকের বক্তব্য, সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় চাপ পড়ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরে। দেশের উগ্রপন্থী, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি এর ফলে তাদের অপকর্মের তৎপরতা বাড়াবে। পুজোর সংখ্যা কমাতে অনুরোধ করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু মহানগর সার্বজনীন পুজা কমিটি এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ-এর পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, এতে ভুল বার্তা যাবে। দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। আহত হবে সংখ্যালঘু মন। যা আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেও কাম্য নয়।
ঢাকা কেন্দ্রিক মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি তৈরি হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। যার সভাপতি মণীন্দ্রকুমার নাথ জানাচ্ছেন, “আমাদের কাছে ইতিমধ্যেই খবর এসেছে বগুড়া, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া-সহ মোট ৫-৭টি জায়গায় মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় এ সব হয় না। বিভিন্ন জেলায় এ সব যারা করছে তারা যে সব সময় ধরা পড়ছে এমনও নয়।”
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই বৈঠকে স্থির হয়েছে মণ্ডপগুলিতে কট্টরপন্থীদের হামলা ঠেকাতে সর্বক্ষণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে যেমন প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েন করা হবে তেমনই পুজো কমিটির কয়েক জন সদস্য ২৪ ঘণ্টা মণ্ডপে উপস্থিত থাকবেন। দফায় দফায় ছোট ছোট দল (মনিটরিং সেল)-এ ভাগ হয়ে তাঁরা মণ্ডপ পাহারা দেবেন। এ ছাড়াও, মোবাইল ভ্যানে পুলিশের লাগাতার টহলদারি চলবে। কোনও অঘটনের ইঙ্গিত পেলেই বিশেষ নম্বরে ফোন করে তাঁদের সাহায্যের জন্য ডাকা যাবে। প্রত্যেকটি মণ্ডপে সিসিটিভি লাগানো বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া মণ্ডপে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রবেশ, নমাজের সময় ঢাক ও মাইক বন্ধ রাখার মতো বিষয়গুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের উপরে নিপীড়নের বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে চলে এসেছে। শেখ হাসিনার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরে দু’দেশই এই বিষয়ে আলোচনা করেছে বলে খবর। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, এমনতিই কট্টরপন্থী জামাতে ইসলামির রাজনীতির প্রধান কথা হল ভারত-বিরোধিতা, হিন্দু-বিরোধিতা। আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার কথায়, গত বছর পুজোর সময় কুমিল্লায় অশান্তির পরে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর দাবি, সে সময়ে বিএনপি-জামাত জোটের পক্ষ থেকে স্লোগান শোনা গিয়েছিল, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান!’
শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে গত বারের মতো অশান্তি সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে এ বার আগে থাকতেই সতর্ক থাকতে চাইছে হাসিনা সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy