শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
ছাত্র আন্দোলন হাইজ্যাক করে দেশজুড়ে নাশকতা ছড়ানোর অভিযোগ তোলার পরে বাংলাদেশের মৌলবাদী রাজনৈতিক দল জামাত-ই-ইসলামি এবং তাদের জঙ্গিবাদী সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে চলেছে শেখ হাসিনা সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় ১৪ দলের জোটের শরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এর আগে দেশে কার্ফু জারি ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও এই ১৪ দলের জোটের বৈঠক ডাকেন হাসিনা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এই বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ নেতা এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “মৌলবাদী ও স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামাত-ই-ইসলাম এবং তাদের জঙ্গিবাদী শাখা সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির-কে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। সরকার সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চলেছে।” সূত্রের খবর, শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বৈঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময়েই জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। এ বার আর বিলম্ব করা উচিত নয়। জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুও দুই পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী সংগঠনকে এখনই নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। আগে নির্বাচন কমিশন জামাতের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছিল।
জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবি বাংলাদেশে বহু দিনের। সরকারের বিরুদ্ধে এই কাজে ঢিলেমির অভিযোগ রয়েছে মুক্তমনা রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মীদের। সরকারের যুক্তি ছিল, নিষিদ্ধ করলে মৌলবাদী জামাত চোখের আড়ালে চলে যাবে। আবার জামাত-শিবিরের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খুবই কাছের। আমেরিকার নীতিনির্ধারকেরা জামাতকে তালিবানের চেয়ে উন্নত ইসলামি শক্তি বলে সওয়াল করেন। জামাতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের ফাঁসির আদেশ রদ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে তদবির করেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। হাসিনা তাতে আমল না দেওয়ায় হুমকি দিতেও শোনা গিয়েছিল হিলারিকে।
সোমবার কোটা-বিরোধী আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর তরফে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা নিয়েও বিতর্কের ঝড় উঠল। নিরাপত্তার যুক্তি তুলে সংগঠনটির ৭ সমন্বয়কারীকে গোয়েন্দা পুলিশ নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। তাঁদের ছ’জন পাশাপাশি বেঞ্চে বসে লিখিত বয়ানে জানান, সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে কোটা সংস্কার করেছে। সোমবারই তাই কোটা-বিরোধী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস এ বার খুলে দেওয়া হোক। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম লিখিত বিবৃতিটি পাঠ করেন। এর পরে গোয়েন্দা পুলিশের তরফেই ভিডিয়োটি সংবাদমাধ্যমগুলিতে পৌঁছে দেওয়া হয়। যদিও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানান, এখনই স্কুল-কলেজ খোলার মতো পরিস্থিতি দেশে নেই।
প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলন প্রত্যাহার কি গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নাকি পুলিশের চাপে? সংগঠনের অন্য সমন্বয়কেরা জানিয়েছেন— চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে বিবৃতি পড়ানো হয়েছে নেতাদের। এর আগে একটা ভিডিয়োয় দেখানো হয়, গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে এক টেবিলে খাওয়াদাওয়া করছেন জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া ছাত্রনেতারা।
ছাত্রনেতাদের গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে আটকে রাখাকে বেআইনি ঘোষণার আর্জি নিয়ে এ দিনই দুই আইনজীবী হাই কোর্টে মামলা করেন। মামলাটি গ্রহণ করে দুই বিচারপতি গোয়েন্দাপ্রধান হারুনের উদ্দেশে বলেন, “জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না! যাকে ধরে নেন, খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন। কেন করেন এ সব? কে আপনাকে এগুলা করতে বলেছে?” কাল ফের শুনানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy