Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Israel-Hamas Conflict

‘রাষ্ট্রপুঞ্জের স্কুল, ওরা ভেবেছিল নিরাপদ’

উত্তর গাজ়ার তাল আজ়-জ়াতারের স্কুলেও হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি সেনা। গাজ়ার খান ইউনিসের এক সাংবাদিক হানি মহম্মদ বলেন, ‘‘স্কুল, হাসপাতালের মতো জায়গাগুলোতে বেছে বেছে হামলা চালানো হচ্ছে।”

An image of Israel-Palestine Conflict

ইজ়রায়েলি হানায় গত ২৪ ঘন্টায় ৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন গাজ়ায়। তাঁদের এক জনের দেহ ঘিরে আত্মীয়েরা। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৯
Share: Save:

রাষ্ট্রপুঞ্জের স্কুল। তাই সকলে ভেবেছিলেন নিরাপদ ঠাঁই। ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছিলেন গাজ়ার আল ফাকৌরা স্কুলের ঘর-বারান্দায়। এখন সেখানে শুধু ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ, পোড়া মাংস আর ছাইয়ের স্তূপ। কার দেহ কোনটা, চেনা দায়। গত কাল ইজ়রায়েলি হামলার পরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের আল ফাকৌরা স্কুলের চিত্রটা এমনই। অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ জখম। এই নিয়ে প্যালেস্টাইনে নিহতের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়াল। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচ হাজার শিশু।

উত্তর গাজ়ার তাল আজ়-জ়াতারের স্কুলেও হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি সেনা। গাজ়ার খান ইউনিসের এক সাংবাদিক হানি মহম্মদ বলেন, ‘‘স্কুল, হাসপাতালের মতো জায়গাগুলোতে বেছে বেছে হামলা চালানো হচ্ছে। দু’টো হামলা মিলিয়ে ২০০-র কাছাকাছি মানুষ নিহত। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। অসংখ্য মানুষ ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন।’’ একটানা হামলার থেকে বাঁচতে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন স্কুল দু’টিতে। আল ফাকৌরার স্কুলে হামলা চলেছে গত কাল সকালে। তাল আল-জ়াতারে হামলা চলে পরে। তারেক আবু আজ়ুম নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, ‘‘চারদিকে মৃতদেহ পড়ে। তার মধ্যেই প্রাণের সন্ধান চলছে। গুরুতর জখমদের খুঁজে খুঁজে বার করা হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, আল ফাকৌরা স্কুলে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই অসুস্থ ছিলেন। ইজ়রায়েল ক্রমাগত উত্তর গাজ়া স্ট্রিপ ছেড়ে চলে যেতে বলছিল। কিন্তু তাঁরা অন্যত্র যাওয়ার অবস্থায় ছিলেন না। তাই প্রাণ বাঁচাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, ওখানে হামলা চালাবে না ইজ়রায়েল।

আল ফাকৌরা স্কুলের হামলায় জখম হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন আহমেদ রাদওয়ান নামে এক প্যালেস্টাইনি যুবক। তিনি বলেন, ‘‘ভয়াবহ দৃশ্য। মহিলা-শিশুদের মৃতদেহ মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছেন লোকজন।’’

যে কোনও হামলা নিয়ে ইজ়রায়েল কখনওই কোনও মন্তব্য করেনি। এ বারেও তারা চুপ। তাদের মুখে শুধু একটাই কথা, ‘হামাস-ই নিশানা’। রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তা মার্টিন গ্রিফিতস বলেন, ‘‘আশ্রয় শিবিরগুলো নিরাপদ স্থান হওয়ার কথা। স্কুল হল শিক্ষাক্ষেত্র। উত্তর গাজ়ায় আল ফাকৌরা স্কুলে যে ভাবে পুরুষ-মহিলা-শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। আর এ রকম চলতে পারে না।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র কর্মী তামারা আলরিফাই বলেন, ‘‘জাবালিয়া থেকে যে সব ছবি আসছে, তাকানো যায় না।’’ নিজের সহকর্মীদেরও খোঁজ পাচ্ছেন না তামারা। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির মাথায় নীল পতাকা দেখে লোকজন নিরাপদ জায়গা ভেবেছিলেন। কিন্তু আমাদের (রাষ্ট্রপুঞ্জের) ৭০টি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে ওরা। ফলে আমরাই নিরাপদে নেই।’’ তামারা জানিয়েছেন, আল ফাকৌরার ঘটনা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ-পরিচালিত অন্য স্থানগুলিতে ইজ়রায়েলি হামলায় অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত কাল আল-শিফা হাসপাতাল ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইজ়রায়েলি বাহিনী। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ বেরিয়ে যান হাসপাতাল থেকে। কিন্তু শতাধিক গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি ও অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশু হাসপাতালে রয়ে গিয়েছিল। আজ ৩১টি শিশু ও ৬ স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করা হয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ছ’টি অ্যাম্বুল্যান্সে করে ওই শিশুদের দক্ষিণ গাজ়ার ইউরোপিয়ান ও নাসের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। তবে এই হাসপাতাল দু’টিতেও জায়গা নেই। নাসের হাসপাতালের ১২টি ইনকিউবেটর ভর্তি। ৩১টি শিশুর জন্য ছ’টি ইনকিউবেটর ফাঁকা রয়েছে। ফলে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলে কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আল-শিফা থেকে নিয়ে যাওয়ার মুখে দু’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, আল-শিফায় আটকে থাকা বাকি রোগীদেরও দ্রুত উদ্ধার করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Israel-Hamas Conflict United Nations israel gaza
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy