১৯৬৯-এর ১ অগস্ট স্যান ফ্রান্সিসকো এগজামিনার, সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল এবং ভালেজো টাইমস-হেরাল্ড নামে তিনটি আলাদা সংবাদমাধ্যমে চিঠি পাঠায় সে। যাতে লেখা ছিল, ‘প্রিয় সম্পাদক: লেক হারমানে গত বড়দিনে আমি দু’জন কিশোরীকে খুন করেছি’। তার পর চিঠিতে ওই খুনের বিশদ বিবরণ দেওয়া ছিল। শেষে হুমকি ছিল, যদি তার এই চিঠি প্রথম পাতায় ছাপা না হয় তা হলে আবার কেউ না কেউ খুন হবে। খামের উপরে প্রতিটি চিঠিতেই একটি চিহ্ন (বৃত্তের মধ্যে ক্রস) আঁকা ছিল। চিঠির ভিতরে থাকতে কয়েকটি সাঙ্কেতিক লাইন। খুনির দাবি ছিল, এই সঙ্কেতেই নাকি তার পরিচয় লুকিয়ে।
১৯৬৯ সালে পল স্টাইন নামে এক ট্যাক্সিচালক খুন হন। জোডিয়াকের দাবি অনুযায়ী, এটা ছিল তার চতুর্থ খুন। ফের খবরের কাগজে চিঠি লিখে খুনের বিবরণ জানিয়েছিল সে। সঙ্গে পলের রক্তমাখা জামাও পাঠিয়েছিল সে। ওই চিঠিতেই আবার হুমকি ছিল, এর পর সে একটি স্কুলবাসের চাকায় গুলি করবে। শিশুরা যখন একে একে রাস্তায় নেমে আসবে তখন তাদের অপহরণ করবে এবং তার পর খুন। প্রতিটি চিঠিতে পুলিশকে ব্যঙ্গ করতে ভুলত না সে।
যে খুনগুলির কথা চিঠিতে নিজে স্বীকার করেছিল, তার মধ্যে প্রথমটি হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর। সে দিন ১৭ বছর বয়সি ডেভিড এবং ১৬ বছরের প্রেমিকা বেট্টিকে লেক হারমন রোডে তাঁদের গাড়ির কাছেই গুলি করে খুন করেছিল সে। ১৯৬৯ সালের এক সকালে ভ্যালেজোর একটি প্রত্যন্ত পার্কের কাছে গাড়িতে বসে থাকা ২২ বছরের এক যুবক এবং ১৯ বছরের যুবতীর উপর হামলা চালায় সে। সেই ঘটনায় যুবতী প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল। পরে তাঁর থেকে শুনে খুনি জোডিয়াকের স্কেচ আঁকিয়েছিল পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান তদন্তের গতি ফিরিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও জোডিয়াককে ধরতে পারেনি তারা। এর পর ফের ১৯৬৯ সালে সমুদ্রসৈকতে শুয়ে থাকা এক যুগলকে খুন করে সে। ওই বছরই এক ট্যাক্সিচালককেও খুন করে। খুনের পর প্রতি বারের মতো নিজেই পুলিশে ফোন করে খবর দিয়েছিল এবং খবরের কাগজে চিঠিও পাঠিয়েছিল।
১৯৭৪ সালে শেষ বারের মতো এমন চিঠি পেয়েছিল খবরের কাগজগুলো। তার পর আর কোনও চিঠি আসেনি। কিন্তু তদন্ত থেমে থাকেনি। খুনি ধরাও পড়েনি। ২০২০ সালে প্রথম খুনের ৫২ বছর পর খবরের কাগজের চিঠিতে লেখা জোডিয়াকের সঙ্কেত একজন বিশেষজ্ঞ উদ্ধারের দাবি করেন। তাতে নাকি মৃত্যু, স্বর্গ, খুন সংক্রান্ত লেখা ছিল। জোডিয়াক যে মৃত্যুকে ভয় পায় না, ছত্রে ছত্রে সেটাই লেখা ছিল।
জোডিয়াক বেঁচে রয়েছে কি না তা জানা যায় না। আর কোনও চিঠিও আসে না খবরের কাগজের দফতরে। খুনের দাবি করে কেউ পুলিশে ফোনও করে না। তা সত্ত্বেও তদন্ত থেমে নেই। তার স্কেচের সঙ্গে অনেকের মুখের মিলও পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু খুনি ধরা পড়েনি। আজও রহস্য সমাধানের চেষ্টা করে চলেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু জোডিয়াক রহস্য হয়েই রয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy