বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। তা সত্ত্বেও লন্ডনের কিংস ক্রস স্টেশনে ভিড়। সোমবার। রয়টার্স
এত দিন ভক্তদের স্লোগান ছিল, ‘‘ঘরে আসছে ফুটবল।’’ ইংল্যান্ডের ঘরে কাপ আসেনি। কিন্তু ভাইরাস যে ঘরে এসেছে, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত বিশেষজ্ঞেরা।
গোড়ার দিকে ম্যাচগুলোতে নিয়ম হয়েছিল, স্টেডিয়ামে বসার জায়গার ২৫ শতাংশের বেশি দর্শককে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সেমিফাইনাল থেকে সেই সব নিয়ম মাথায় উঠেছে। অন্তত ৬০ হাজার দর্শক ভিড় করেছিলেন সেমিফাইনালে। ফাইনালে সেই সংখ্যাও ছাপিয়ে গিয়েছে। ইউরোর ফাইনালে উঠেছে দেশ। উত্তাপ অন্যই। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে যাঁরা ঢুকতে পারেননি, তাঁরা ভিড় করেছেন বিভিন্ন পাবে-রেস্তরাঁয়। সেখানে টিভি স্ক্রিনে এক সঙ্গে খেলা দেখা, উল্লাস। বদ্ধ জায়গা তো কী! মাস্কের কথা ভুলে গেছিলেন প্রায় সকলেই। আনন্দ হোক, কী দুঃখ, উল্লাস, গলা জড়াজড়ি, কান্না, দূরত্ব ঘুচে গিয়েছে নিমেষে। এবং সব শেষে খেলায় হেরে ইংল্যান্ডের সমর্থকদের মারপিট, ভাঙচুর।
ব্রিটেন সরকার আগেই জানিয়েছিল, এই এক দিনে (ফাইনালে) অন্তত ৩০০ কোটি পাউন্ড ব্যবসা হবে। সরকারি ভাষায়, ‘‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধার।’’ তাই জন্যই হয়তো করোনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা প্রায় হেলায় উড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। অতিসংক্রামক ডেল্টা স্ট্রেন নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব আতঙ্কে, ব্রিটেনে যখন ডেল্টার কোপে কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে সংক্রমণ, সরকার বলেছে ‘খেলা হবে’।
ফাইনালের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, ইংল্যান্ড ও ইটালির সমর্থকদের উল্লাস দেখে প্রহর গুণছেন বিশেষজ্ঞেরা। দুই দেশেই সংক্রমণ মারাত্মক বেড়েছে। গত বছর ইউরোপে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইটালি। ভেঙে পড়েছিল সে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
সেই ইটালিই সেমিফাইনাল থেকে যে ভাবে উৎসবে মেতেছে, তাতে এপিডিমিয়োলজিস্টরা বলছেন, এ বারে বেশি সংক্রমিত হবেন ছেলেরা, অল্পবয়সিরা। এদের একটা বড় অংশ আবার টিকাও পায়নি। ফলে টিকাহীন শরীরে জাঁকিয়ে বসবে করোনাভাইরাস।
ইমিউনোলজিস্ট ডেনিস কিনেনের ব্যাখ্যা, ‘‘একটি বিশেষ জনগোষ্ঠী— ফুটবলপ্রেমী, মূলত পুরুষ, একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমার, এদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নামেই লকডাউন চলছে। সব খোলা রয়েছে। কোনও নিয়ম নেই। এ বার সংক্রমণ বাড়বেই।’’ ইম্পেরিয়াল কলেজ ইতিমধ্যেই একটি সমীক্ষা করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে মেয়েদের থেকে অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন ছেলেরা।
লন্ডন ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক স্টিভেন রাইলি বলেন, ‘‘এর একটাই কারণ। ছেলেরা অনেক বেশি ভিড় করছে। দূরত্ব বজায় রাখছে না। সামাজিক দূরত্ব বিধিও মানা হচ্ছে না।’’ খেলায় জয় হোক বা হার, রাস্তায় জনসমুদ্র। বাসের মাথায় উঠে নাচ। পাবে ঠেসাঠেসি ভিড়। এর মধ্যে যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। যাঁদের আছে, থুতনিতে ঝুলছে।
গোটা ইউরোপ জুড়ে সংক্রমণ বাড়ছে। সব চেয়ে বেশি টের পাওয়া যাচ্ছে ব্রিটেন ও রাশিয়ায়। বাকি দেশগুলোতেও টের পাওয়া যাচ্ছে। বেলজিয়ামে করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধার। শঙ্কার বিষয়, তাঁর শরীরে করোনার দু’টি স্ট্রেন মিলেছে। আলফা ও বিটা। এক সঙ্গে দু’টি স্ট্রেনে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম সামনে এল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy