Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
The Great Barrington Declaration

মাস্ক পরে বিধি মেনে ‘নর্মাল’ হোক অর্থনীতি

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২৭
Share: Save:

চার কোটি ছুঁতে চলল করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। মারা গিয়েছেন ১০ লক্ষেরও বেশি। কিন্তু এ তো গেল, করোনার সরাসরি প্রভাব। পাশাপাশি বাড়ছে সংক্রমণের ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ও। তাতে ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘ হতে পারে মৃত্যুমিছিল। যার মধ্যে অন্যতম, বিশ্বের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি ডেকে আনছে খাদ্যাভাব। আসন্ন এই বিপদের কথা উল্লেখ করে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন মুলুকে। যাঁর অন্যতম কাণ্ডারি দুই বাঙালি বিজ্ঞানী।

‘দ্য গ্রেট ব্যারিংটন ডিক্লারেশন’। ঘোষণাপত্রটি যাঁদের মস্তিষ্কপ্রসূত, তাঁরা হলেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা এপিডিমিয়োলজিস্ট সুনেত্রা গুপ্ত, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল স্কুলের এপিডিমিয়োলজিস্ট জয় ভট্টাচার্য এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক মার্টিন কালডর্ফ। সুনেত্রাদের রিপোর্টে সই করে সমর্থন জানিয়েছেন কানাডা, ব্রিটেন, স্কটল্যান্ড, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে রয়েছেন ২০১৩ সালের রসায়নে নোবেলজয়ী মাইকেল লেভিট-ও। রয়েছেন এ দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর বিজ্ঞানী পার্থপ্রতিম মজুমদারও।

জনস্বাস্থ্য নিয়ে যে কারণে (এ দেশে যেগুলি উল্লেখযোগ্য) চিন্তায় বিজ্ঞানীরা— এক) পোলিয়ো-সহ একাধিক রোগের টিকাকরণ থমকে। পোলিয়ো পৃথিবী থেকে মুছে গেলেও ভাইরাস কিন্তু এখনও সক্রিয় রয়েছে। দুই) প্রায় বিনা চিকিৎসায় রয়েছেন ক্যানসার রোগীরা। শহরের বাসিন্দারা কিছু একটা ব্যবস্থা করে ফেলতে পারলেও, গ্রাম কিংবা মফস্সলের লোকজন ঘোর বিপাকে। তিন) করোনা বাদ দিয়ে যে কোনও রোগে (হৃদ্রোগ থেকে দাঁতে ব্যথা), মানুষ কী করবে, তা নিয়ে সন্দিহান। চার) স্কুল বন্ধ। এক শ্রেণির মানুষের কাছে ‘অনলাইন’ শব্দটাই অচেনা। অর্থাৎ গত ছ’মাসে পড়াশোনা প্রায় বন্ধ। পাঁচ) মানসিক স্বাস্থ্য। বড়দের নিয়ে কখনওসখনও চর্চা হলেও, ছোটদের কথা কেউ ভাবছে না। খেলার মাঠ নেই, বন্ধুদের সঙ্গে হইচই নেই। ঘরবন্দি কেটে যাচ্ছে শৈশব।

এ ছাড়াও রয়েছে অগণিত সমস্যা। ইউরোপ, আমেরিকার একাধিক জায়গায় ফের লকডাউনের পরিকল্পনা চলছে। এতে অর্থনীতি আরও তলানিতে ঠেকবে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে, এ ভাবে চললে ২০২১-এর মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে পৌঁছবে। অনাহারে মারা যাবে অসংখ্য প্রাণ। সুনেত্রার কথায়, ‘‘লকডাউন করে সমাধান মিলবে না। উল্টে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। সব চেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়বেন দরিদ্ররা। বরং যাঁরা বয়স্ক, যাঁরা অন্য রোগে অসুস্থ, তাঁদের সাবধানে রেখে, বিধি মেনে, অর্থনীতি ‘নর্মাল’ করতে হবে।’’ অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে ‘দ্য গ্রেট ব্যারিংটন ডিক্লারেশন’-এ এই সমাধানের পথই দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য, মানুষ সুরক্ষিত থাকুক, কিন্তু তা হোক ‘ফোকাসড প্রোটেকশন’।

পার্থ জানান, বিজ্ঞানীদের মূল বার্তা হল, অতিমারি পরিস্থিতি হলেও অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য স্বাভাবিক রাখতে হবে। মাস্ক পরে, পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি বজায় রেখেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে সকলকে। এতে ভ্যাকসিন আসতে দেরি হলে, নিয়ন্ত্রিত ভাবে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। অর্থাৎ গোষ্ঠী সংক্রমণ ঘটে গিয়ে ভাইরাস নতুন করে আর কাউকে সংক্রমণের জন্য খুঁজে পাবে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।

তবে বয়স্ক বা অসুস্থদের মাস্ক পরেও বাইরে বেরোতে দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। পরিবারের বাকিরা রাস্তায় বেরোলে, বাড়ির চৌহদ্দিতেও দূরত্ববিধি মানতে হবে। প্রয়োজনে মাস্ক পরতে হবে বাড়িতেও। বিজ্ঞানীকূলের কথায়, ‘‘নিউনর্মাল যুগে অর্থনীতি স্বাভাবিক না-হলে, মৃত্যু বাড়বে। তাঁরা করোনায় মরবেন না। না-খেতে-পেয়ে মরবেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy