আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ভারত-আমেরিকা ‘আংশিক’ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সফল না হলে নরেন্দ্র মোদী সরকার অন্তত তার কাঠামো ও রূপরেখা ঘোষণা করে দিতে চাইছে। যাতে ৯০ দিন পরে ফের ডোনাল্ড ট্রাম্পের চড়া শুল্ক এড়ানো যায়।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শুক্রবার বলেছেন, ‘‘আমরা খুবই জরুরি ভিত্তিতে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করতে চাইছি।’’
বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, সাধারণত ভারতের বিরুদ্ধে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষির ক্ষেত্রে ধীর গতিতে চলার অভিযোগ ওঠে। এখন ভারত উল্টে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দ্রুত গতিতে এগোতে চাপ দিচ্ছে। অন্য দিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানিয়েছেন, দ্রুত গতিতে এগোলেও ভারত দেশের স্বার্থ, মানুষের স্বার্থ মাথায় রেখেই দর কষাকষি করছে। আমেরিকার যেমন ভারতের চড়া শুল্ক নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে, তেমনই ভারতের অনেক বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতিকে সামনে রেখেই বাণিজ্য চুক্তি হবে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে ভারত-সহ এক গুচ্ছ দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপরে চড়া শুল্ক বসিয়ে বুধবার আচমকাই সেই সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন। এই ৯০ দিন সময়কে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আংশিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে চায় মোদী সরকার। যাতে ভবিষ্যতে ট্রাম্পের শুল্ক এড়ানো যায়। আজ বিদেশমন্ত্রী ভারতের এই সক্রিয়তার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ট্রাম্প বাকি দুনিয়ার সঙ্গে লেনদেনের নীতিটাই বদলে ফেলেছেন। তার প্রভাব সমস্ত ক্ষেত্রে পড়বে। বিশেষত প্রযুক্তি ক্ষেত্রে।
সরকারি সূত্রের খবর, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স এপ্রিলের শেষে ভারতে আসছেন। সেই সফরের সময়েও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা হবে। তার পরে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিতে যাবেন। আমেরিকায় পণ্য রফতানি ধাক্কা খেলে যাতে ইউরোপের বাজারে বেশি করে পণ্য পাঠানো যায়, সেই লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চাইছে ভারত।
বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের বক্তব্য, ‘‘প্রথম ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে চার বছর ধরে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা হয়েছিল। ওঁদের আমাদের সম্পর্কে কিছু মতামত ছিল। আমাদের আমেরিকা সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ছিল। সে বার চুক্তি হয়নি। এ বার নতুন করে ট্রাম্প সরকার আসার এক মাসের মধ্যে রফা হয়েছে যে, বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে।’’ কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘যদি ৯০ দিনের মধ্যে আংশিক বাণিজ্য চুক্তি সম্ভব না হয়, তা হলে অন্তত চুক্তির কাঠামো ও রূপরেখা ঘোষণা
করা যাবে।’’
ট্রাম্প ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের উপরে চড়া শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখলেও চিনের উপরে চড়া শুল্ক কমাননি। উল্টে বাড়িয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকার মনে করছে, চিনের পণ্য আমেরিকার বাজারে ঢুকতে না পারলে চিন ভারতের বাজারে যেমন সস্তার পণ্য ঢোকানোর চেষ্টা করবে, তেমনই ভারতের মাধ্যমে আমেরিকায় পণ্য রফতানির চেষ্টা করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শুল্ক দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও ক্ষেত্রে রফতানি বা আমদানি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে কি না, সে দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, নয়া শুল্ক যুদ্ধের ফলে এক দিকে যেমন নতুন রফতানির ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আশা, তেমনই কয়েকটি দেশের তরফে বা কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি বাড়ানোর চাপও সামলাতে হবে ভারতকে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)