পরমাণু চুক্তি বাতিলের রুশ ঘোষণার সমালোচনায় আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ফাইল চিত্র।
আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণাকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলল আমেরিকা। আমেরিকার বিদেশসচিব টনি ব্লিঙ্কেন জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির আগে পুতিনের এই ঘোষণা সত্ত্বেও আলোচনার দরজা বন্ধ করছে না তাঁর দেশ।
ঘটনাচক্রে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেন সফরের পর দিনই পরমাণু অস্ত্র চুক্তি বাতিলের ঘোষণা করেন পুতিন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘আমি ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছি, কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে আসছে।’’ আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’-ই ছিল শেষ চুক্তি।
গ্রিস সফরের সময় এ প্রসঙ্গে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক যে পর্যায়েই থাকুক না কেন, কৌশলগত অস্ত্রের সংখ্যা কমানোর বিষয়ে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যে কোনও সময় আলোচনায় বসতে রাজি।’’ যদিও সেই সঙ্গেই তিনি জানান, পরমাণু সংঘাত প্রশমনে রুশ প্রেসিডেন্টের সদিচ্ছা নিয়ে আমেরিকা সন্দিহান।
কৌশলগত ভাবে পরমাণু অস্ত্র কমানোর ক্ষেত্রে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি বাতিলের কথা মঙ্গলবার বার্ষিক ‘স্টেট অফ দ্য নেশন’ বক্তৃতায় ঘোষণা করেন পুতিন। তাঁর এই নেতিবাচক অবস্থান পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা উস্কে দিল বলে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ২০১০ সালে, বারাক ওবামা তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেডভেদেভের সঙ্গে সঙ্গে ‘নিউ স্টার্ট’ নামে ওই চুক্তি সই করেছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই চুক্তির মেয়াদ ফুরোনোর কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বাইডেন সরকারের আমেরিকান বিদেশসচিব টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়ে দেন, এই চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। এ বার একতরফা ভাবে সেই চুক্তি ভাঙার কথা ঘোষণা করলেন পুতিন।
ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকার-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার অবস্থানই এই সিদ্ধান্তের ‘কারণ’ বলে জানিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়া যুদ্ধ চায় না। পশ্চিমি শক্তি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। তারা ক্রাইমিয়ার উপরে হামলা চালানোর ছক কষছে।’’ প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পরে একই ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত ‘পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তি’ সই করতে অসম্মত হয়েছিল রাশিয়া। রাষ্ট্রপুঞ্জের রুশ প্রতিনিধি ইগর ভিশনেভেতস্কি বলেন, ‘‘ওই চুক্তির বয়ানে সমতা নেই। আমাদের মূল আপত্তি চুক্তিপত্রের বয়ানের কিছু অংশ নিয়ে। যা ভীষণ ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ।’’
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে রেগন ও গর্বাচভ যে চুক্তিতে সই করেছিলেন, তার নাম- ‘ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি (আইএনএফ)’। সেই চুক্তির প্রেক্ষিতে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার (৩১০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ মাইল) পাল্লার মধ্যে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে নিষিদ্ধ করেছিল আমেরিকা ও রাশিয়া। ওই পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হানা বন্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল দু’টি দেশ। চুক্তির প্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালে ২ হাজার ৭০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে আমেরিকা এবং রাশিয়া। এ বার পুতিন সেই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের সেই প্রক্রিয়া থামিয়ে দেওয়ায় নতুন করে পরমাণু উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy