ফাইল চিত্র।
ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র, মধ্য ইউরোপের স্লোভাকিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে ইউরোপের প্রতি কড়া বার্তা দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর বক্তব্য, ‘নিজেদের সমস্যাকে গোটা বিশ্বের সমস্যা বলে ভাবা বন্ধ করুক ইউরোপ।’ পাশাপাশি জয়শঙ্কর বুঝিয়ে দিয়েছেন, আজ ইউক্রেনে হামলা হয়েছে বলেই একে চিন-ভারত সংঘাতের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক হবে না। স্লোভাকিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবসেক ২২’ সম্মেলনে জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবস্থান কী? বিদেশমন্ত্রীর উত্তর, “ইউরোপকে এই মানসিকতা থেকে বেরোতে হবে যেখানে তাদের সমস্যাই গোটা বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু গোটা বিশ্বের সমস্যার বোঝা তাদের নয়।”
তাঁর কথায়, ‘‘আজ দেখা যাচ্ছে একটি সংযোগ তৈরি করা হচ্ছে। ইউক্রেনে যা ঘটছে, তার সঙ্গে ভারত-চিন সম্পর্কের সংযোগ। এটা আপনাদের সবাইকেই বুঝতে হবে, ভারত-চিনের মধ্যে যা ঘটেছে, সে সব ইউক্রেনে যুদ্ধ হওয়ার অনেক আগেই। ফলে আমাদের সঙ্গে কতটা কঠোর হওয়া উচিত বা অনুচিত, কতটা এগোনো উচিত বা অনুচিত, তা শেখার জন্য বিশ্বের অন্যত্র উদাহরণ খোঁজার কোনও প্রয়োজন চিনের নেই। এই সংযোগ টানার বিষয়টিকে আমার খুব একটা যথার্থ বলেও মনে হয় না।”
জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা হয়, সীমান্তে চিনের সঙ্গে সংঘাত বাড়লে ভারত কি অন্য রাষ্ট্রের সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করবে? জয়শঙ্করের জবাব, “চিনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বেশ জটিল। কিন্তু তাকে সামলানোর জন্য আমরা খুব ভাল ভাবেই দক্ষ। যদি বিশ্বের সমর্থন এবং সহমর্মিতা পাই, অবশ্যই তাতে আমাদের সুবিধা হবে। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক বিনিময়ের নয়। একটি সংঘাতে আমি পাশে থাকলাম আমার সংঘাতে সুবিধা নেওয়ার জন্য— ঠিক এই ভাবে বিশ্বের চাকা গড়ায় না। চিনের সঙ্গে আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে, যার সঙ্গে রাশিয়া বা ইউক্রেনের কোনও সম্পর্ক নেই। চিনের সমস্যা বহু আগের। আর এ বার যদি আমি এই প্রসঙ্গে আসি যে, কে কোন বিষয়ে কখন নীরব ছিল, তা হলে অনেক কথাই বলা যায়।”
ইউক্রেন সম্পর্কে ভারতের অবস্থানকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিদেশমন্ত্রী। ভারত যে বুচা শহরে গণহত্যার তীব্র নিন্দা করেছিল, সেই প্রসঙ্গ তুলে জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত সেই সময় ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিল। সরাসরি ইউরোপের সমালোচনা করে বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, “বিশ্ব এখন আর ততটা ইউরোপকেন্দ্রিক নেই, যা আগে ছিল। আমি যদি সামগ্রিক ভাবে ইউরোপকে ধরি, তা হলে দেখতে পাব, অতীতে বহু বিষয়ে ইউরোপ নিশ্চুপ ছিল। এশিয়ার কেউ কেন ইউরোপকে আদৌ বিশ্বাস করবে?”
গত কয়েক মাস ধরেই ধারাবাহিক ভাবে ইউরোপের তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে জয়শঙ্করকে। এই বছরের এপ্রিলে রাইসিনা সংলাপেও ইউরোপের মন্ত্রী, কর্তাদের সামনে তিনি আফগানিস্তান ও চিনের প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, ‘‘ইউরোপের এখন ঘুম ভাঙার সময় এসেছে। তাঁরা এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখুন আগে।’’ এর পর ওয়াশিংটনে রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনার প্রশ্নেও তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভারত এক মাসে যতটা তেল আমদানি করে ইউরোপ এক বিকেলেই তা করে থাকে।’’ একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে— এই ভাবমূর্তি বদলাতে চেয়ে বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, “রাশিয়া-চিন অথবা আমেরিকা-ইউরোপ—এই দু’টি অক্ষের মধ্যে যে কোনও একটিকেই বাছতে হবে, এমন কোনও মাথার দিব্যি ভারতকে কেউ দেয়নি। আমরা গণতান্ত্রিক, বাজার অর্থনীতির দেশ। আমাদের বহুত্ববাদী সমাজ। আমাদের আইন কানুন এবং চুক্তি রয়েছে। আর্ন্তজাতিক আইন নিয়ে আমাদের নির্দিষ্ট অবস্থান রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy