Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: খাবার নেই, জল নেই, রাস্তায় পচছে মৃতদেহ, যুদ্ধবিধ্বস্ত মারিয়ুপোল যেন নরক

টিভি নেই, ফোন নেই, বিদ্যুৎ সংযোগই নেই। গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছে রুশরা। হঠাৎ আদিম কোনও দুনিয়ায় চলে আসা, দিনের বেলাতেও যেন ‘অন্ধকার’।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত মারিয়ুপোল।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত মারিয়ুপোল। ছবি রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২২ ০৪:৩২
Share: Save:

রান্নাঘর ছিল বোধহয়। রুশ বোমায় গোটা বাড়িটা পড়ে গেলেও ও ঘরের একটা দেওয়াল এখনও সোজা দাঁড়িয়ে। তার সামনে একটা ছোট্ট রান্নার জায়গা। চারপাশে ইঁট-কাঠ-পাথরের স্তূপ, ভাঙা জানলা-দরজার ফ্রেম, কী না পড়ে। কিছুটা জায়গা সাফ করে দু’টো চেয়ার পেতেছেন বৃদ্ধা। ওভেনে কড়াই চাপানো। রান্না করা হলে ওখানেই বসে গরম গরম খেয়ে নেওয়া। যত ক্ষণ প্রাণ আছে, পেটে দু’টো দানাপানি দিয়ে যেতে হবে।

এ ভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে মারিয়ুপোলের। টিভি নেই, ফোন নেই, বিদ্যুৎ সংযোগই নেই। গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছে রুশরা। হঠাৎ আদিম কোনও দুনিয়ায় চলে আসা, দিনের বেলাতেও যেন ‘অন্ধকার’। পোড়া গাছের সংখ্যা কেউ না গুনলেও মৃত্যুর চিহ্ন নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে। রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা দেহগুলো পচতে শুরু করেছে। সৎকারের জন্যও কেউ নেই। কিছু জায়গায় গণকবর দেওয়া হয়েছে। এ শহরের কত হাজার বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই। যুদ্ধের আগে মারিয়ুপোলে সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষের বাস ছিল। এখনও ১ লক্ষ মতো মানুষ রয়েছে। মেয়র বাদিম বয়চেঙ্কো বলছেন, ‘‘আর খাবারও মজুত নেই। জল নেই। খুব খারাপ অবস্থা। যাঁরা পালাতে পেরেছেন, তাঁরা বলছেন, পৃথিবীতে নরক আছে, এই মারিয়ুপোলেই।’’

রাশিয়ার দখল করে নিয়েছে এই শহর। আজ়ভস্টল কারখানা এলাকায় কোণঠাসা হয়ে ‘বন্দি’ ইউক্রেনীয় বাহিনী একাংশ। তাদের মধ্যে রয়েছে অন্তত ৫০০ জন জখম সেনা। আর হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ। উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছে, এর মধ্যে রাশিয়া বোমা ফেলেছে কারখানার উপরে। গুঁড়িয়ে দিয়েছে বেশির ভাগ অংশ। কারখানার নীচে বাঙ্কারে কত জন বেঁচে আছেন, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মারিয়ুপোল থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করা হবেই। মস্কো দাবি করেছে, আজ়ভস্টলের কাছ থেকে ২৫ ও ২১ জনের দু’টি দলকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন প্রশাসন জানিয়েছে, গত কাল ২০ জন কারখানা থেকে বেরোতে পেরেছেন। তর্ক-বিতর্কের মধ্যে একটাই আশার আলো, মারিয়ুপোলবাসীকে উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো উঠেপড়ে লেগেছে। ইউক্রেন সরকারও আশ্বাস দিয়েছে, মারিয়ুপোল ছাড়তে আগ্রহী সকলকে উদ্ধার করা হবে। এরই মধ্যে আজ আচমকা ইউক্রেনের লিভিভে হাজির অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই বিশেষ দূত যুদ্ধে ঘরহারা মানুষদের সঙ্গে দেখা করেন। স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের সঙ্গে শিশু-শরণার্থীদের কথা বলেন। তাঁকে জানানো হয়েছে, যুদ্ধের অভিঘাত থেকে শিশুমনকে বাঁচাতে নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন মনোবিদেরা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মারিয়ুপোল। গোটা শহরটাকে কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। এখন ধ্বংসস্তূপ থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারে একপ্রকার নিমরাজি হয়েছে তারা। কিন্তু ইউক্রেনের অন্যত্র তাদের ধ্বংসলীলা চলছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনের বিভিন্ন গ্রাম-শহরে। মস্কো আজ দাবি করেছে, গত কাল তারা ইউক্রেনে ১৭টি সেনা ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। তাদের হামলায় ২০০-রও বেশি ইউক্রেনীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে। একটি অস্ত্রাগারও ধ্বংস করেছে তারা। ২৩টি যুদ্ধযান গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ওডেসার গভর্নর দাবি করেছেন, রুশরা তাদের বিমানবন্দরেও ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়েছে। রানওয়ে ভেঙে গিয়েছে। সে কথা অবশ্য প্রকাশ করেনি মস্কো। তারা দাবি করেছে, ওডেসায় একটি বায়ুসেনা ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেনের দু’টি এসইউ-২৪এম বোমারু বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে। এ-ও দাবি করা হয়েছে, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War Mariupol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE