রুশ সেনার অবমাননা এবং যুদ্ধবিরোধী বার্তা দেওয়ার ‘অপরাধে’ রাশিয়ায় ১৯ বছর বয়সি এক তরুণীকে প্রায় তিন বছরের কারাদণ্ড দিল আদালত। শুক্রবার ওই তরুণীকে সাজা শুনিয়েছে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনীকে একাধিক বার ‘অসম্মান’ করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনীয় এক কবির মূর্তিতে তাঁরই যুদ্ধবিরোধী কবিতার একটি উদ্ধৃতি লেখারও অভিযোগ উঠেছে তরুণীর বিরুদ্ধে।
রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই তরুণীর নাম দারিয়া কোজিরেভা। দারিয়াকে দু’বছর আট মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে সে দেশের আদালত। স্বাধীন রুশ মানবাধিকার সংস্থা ওভিডি-ইনফো সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সেন্ট পিটার্সবার্গে ইউক্রেনীয় কবি তারাস শেভচেঙ্কোর একটি স্মৃতিসৌধে তাঁরই লেখা একটি কবিতার পংক্তি লেখার অপরাধে দারিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শেভচেঙ্কোর ‘মাই টেস্টামেন্ট’ নামে ওই কবিতার লাইনটি ছিল, ‘আমাকে কবর দাও, তার পর তোমরা উঠে দাঁড়াও/ তোমাদের ভারী শৃঙ্খল ভেঙে ফেল/ আর তোমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছ, তাকে অত্যাচারীদের রক্ত দিয়ে পুষ্ট কর।’ অভিযোগ, ওই পংক্তি লিখে যুদ্ধবিরোধী বার্তা দিতে চেয়েছিলেন দারিয়া। শুধু তাই নয়, বছরখানেক আগে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি ইউক্রেনের উপর রুশ সেনার হামলাকে ‘ভয়াবহ’ এবং ‘অপরাধমূলক’ বলেও অভিহিত করেছিলেন। এর পর ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন:
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, শুনানির সময় দারিয়া দাবি করেছিলেন যে, তিনি শুধুমাত্র একটি কবিতার পংক্তি লিখেছিলেন। যদিও যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের কর্মী দারিয়ার বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্কুলে পড়ার সময়েই দারিয়াকে রুশ সেনার বিরুদ্ধে স্লোগান তোলার জন্য আটক করা হয়েছিল। এ জন্য তাঁকে জরিমানাও দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। যদিও দারিয়ার সাজাঘোষণার পরেই সরব হয়েছে সে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। দারিয়াকে রাজনৈতিক বন্দী হিসাবে চিহ্নিত করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে দাবি করেছেন তাঁরা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রাশিয়ার দায়িত্বে থাকা নাতালিয়া জভিয়াগিনা এই রায়ের নিন্দা করে বলেন, ‘‘ইউক্রেনে হামলার বিরুদ্ধে বিরোধী স্বরকে চুপ করাতে রুশ কর্তৃপক্ষ যে কত দূর এগোতে পারে, এটাই তার আর একটি ভয়ঙ্কর উদাহরণ। আমরা দারিয়া-সহ যুদ্ধবিরোধী সকল কারাবন্দীর অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’’