হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রকেট হানায় জখম এক স্থানীয় বাসিন্দাকে। শনিবার কাবুলে। রয়টার্স
একটা-দু’টো নয়, আফগান রাজধানী কাবুলের ঘনবসতি এলাকা জুড়ে অন্তত ২৩টি রকেট আছড়ে পড়ল শনিবার। জঙ্গি হামলায় মুহূর্তে তছনছ শহর। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮ জন। হামলায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
গত মঙ্গলবার বিদায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ঘোষণা করে, ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা কমিয়ে নেওয়া হবে। আফগানিস্তানে কার্যত অর্ধেক করে দেওয়া হবে আমেরিকান বাহিনী। সে দিন আমেরিকার ওই ঘোষণার পরেই ইরাকে রকেট হামলা চালায় জঙ্গিরা। আর আজ আফগানিস্তানে।
সকাল তখন ৯টা। উত্তর ও মধ্য কাবুলের একাধিক এলাকায় আছড়ে পড়ে জঙ্গিদের রকেট। হামলা চলে দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দফতর সম্বলিত শহরের গ্রিন জ়োনেও। নিমেষে ধ্বংসস্তূপের চেহারা নেয় রাজধানী। চারদিকে ভাঙা দরজা-জানলা-ইট-কাঠ-পাথরের স্তূপ। জঙ্গিদের নিশানা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতালও। স্থানীয় একটি বেকারির ম্যানেজার ফরিদ আহমেদ আমিরি চোখের সামনে দেখেন রকেট এসে পড়তে। তিনি বলেন, ‘‘সে কী ভয়ানক দৃশ্য, বলে বোঝানো যাবে না।’’ বেকারির একাধিক কর্মী জখম হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ধ্বংসের ছবি।
দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র তারিক আরিয়ান বলেন, ‘‘প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৩১।’’ আইএস হামলার দায় নিলেও তিনি এ ঘটনায় সরাসরি তালিবানের দিকে আঙুল তুলেছেন। যদিও তালিবান দায় অস্বীকার করেছে। তারিক অবশ্য যাবতীয় হিসেব দিয়ে দাবি করেছেন, গত ছ’মাসে আফগানিস্তানে অন্তত ৫৩টি আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে তালিবান। ১২৫০টি বিস্ফোরণ। ১২১০ জন বাসিন্দা নিহত হয়েছেন। জখম ২৫০০ জন। শুধু নভেম্বরেই জঙ্গি হানায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৬৩ জন। তারিক এ-ও জানিয়েছেন, রকেট হামলার আগে শনিবার ভোরে দু’টি ছোট বোমা বিস্ফোরণও ঘটে। এর একটিতে এক পুলিশকর্মী মারা যান। জখম হন তিন জন।
সম্প্রতি বেশ কিছু জঙ্গি হামলা ঘটেছে কাবুলে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দু’টি হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন প্রাণ হারান। তালিবান সে বারও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলার দায় নেয় ইসলামিক স্টেট। কিন্তু সরকার দাবি করেছিল, তালিবানের হক্কানি নেটওয়ার্ক জড়িত রয়েছে। আজকের ঘটনাতেও দায় উড়িয়ে তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘‘কাবুলে রকেট হামলার ঘটনায় ইসলামিক সাম্রাজ্যের মুজাহিদিনের কোনও হাত নেই। আমরা এ ভাবে অন্ধের মতো জনবসতি এলাকায় হামলা করি না।’’ যদিও আফগান সরকারের দাবি, চাপের মুখে ওরা অস্বীকার করছে।
চাপে থাকার কারণ রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেছিল তালিবান। শর্ত ছিল, হামলা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু হামলা বন্ধ হয়নি। শুধু হামলার দায় স্বীকারের রীতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর না হলে আইএস দায় নিচ্ছে। কারণ চেনা রীতি মেনে তারা যদি সন্ত্রাসের দায় নেয়, তা হলে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা সরার সম্ভাবনা কমে যাবে।
ভারতের পক্ষ থেকে আজ পাকিস্তান প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে তখনই শান্তি ফিরবে, যখন ডুরান্ড লাইন বরাবর সন্ত্রাস বন্ধ হবে। যারা (পাকিস্তান) দেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেয়, আজকের ঘটনায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করা উচিত বলে জানিয়েছে দিল্লি।
ও দিকে, পশ্চিম এশিয়া সফররত আমেরিকার বিদেশ সচিব মাইক পম্পেয়ো আজ কাতারের দোহায় পৌঁছেছেন। গত সেপ্টেম্বরে এই দোহাতেই তালিবান-আফগান শান্তি বৈঠক হয়েছিল। ফের বৈঠক বসবে। গত কাল আমেরিকার বিদেশ দফতর জানিয়েছে, এ বারের আলোচনায় যোগ দেবেন পম্পেয়ো। আজকের ঘটনার পরে ট্রাম্পের বার্তাবহ পম্পেয়ো কী বলবেন, সেটাই দেখার। সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছিলেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক, ‘আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধ’ থামাতে চান তিনি। অর্থাৎ ইরাক-আফগানিস্তান থেকে সেনা সরাতে চান। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে কূটনীতিকদের একাংশ ‘বড় ভুল হবে’ বলে মনে করলেও, আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁর বিদেশ সচিবের মুখে একই সুরই শোনা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy