Advertisement
E-Paper

Storm Ida: লন্ডভন্ড নিউ ইয়র্ক, ইদায় বিধ্বস্ত শহর থেকে পড়ুন আনন্দবাজার অনলাইনের রিপোর্ট

নিজের বাড়ি তো বটেই, প্রতিবেশীদের বাড়ির লনেও যেন রাতভর কোনও দৈত্য দাপাদাপি করেছে। গাছপালা পড়ে রয়েছে। কারও বাড়ির ছাদ উড়ে গিয়েছে।

ছবি লেখকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে

ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য

ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:২২
Share
Save

স্টেট অব ইমার্জেন্সি! ঘুম থেকে ওঠার পর চার পাশে এমন ছবি দেখব ভাবিনি। যেন কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ। গোটা এলাকা জলের তলায় ডুবে! আমার শহর কলকাতায় একটু ভারী বর্ষা হলেই যেমনটা দেখা যায়।

কয়েক মুহূর্ত কাটতেই বুঝলাম পরিস্থিতি ভয়াবহ! চার দিকে গাছপালা পড়ে গিয়েছে। নিজের বাড়ি তো বটেই, প্রতিবেশীদের বাড়ির লনেও যেন রাতভর কোনও দৈত্য দাপাদাপি করেছে। রাস্তায় সারারাত আটকে-থাকা জলবন্দি গাড়ি থেকে সহ নাগরিকদের উদ্ধার করছে পুলিশ-দমকল। একের পর এক গাড়ি গলাজলে ডুবে। কারও বাড়ির ছাদ উড়ে গিয়েছে। অনেকের বাড়ির বেসমেন্ট যেন সুইমিং পুল! এ কোন নিউ জার্সি! অফিস যাব কী ভাবে? বাচ্চাদের স্কুল! সেটা কি খোলা? অফিসে একটা জরুরি মিটিংও ছিল। বাইরে থেকে কয়েক জন এসেছেন। রাতেই হোটেলে পৌঁছেছেন। ওঁদের তো অফিসে আসার কথা। আসবেন কী ভাবে! আমিই বা যাব কী ভাবে! স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে বাচ্চাদের বাড়িতে একা রেখে অফিস যাওয়াও তো অসম্ভব!

সব আশঙ্কা কয়েক গুণ বাড়িয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হল একটা ফেসবুক পোস্টে। স্থানীয় গভর্নর ঘোষণা করেছেন— ‘স্টেট অব ইমার্জেন্সি’। পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক!

আগের সন্ধ্যায় লোডশেডিং হয়েছিল। তার পর ঝেঁপে বৃষ্টি। ঝড়টা শুরু হল রাত ৮টা নাগাদ। ধাপে ধাপে দুয়েরই প্রাবল্য বেড়েছে। আমাদের একটা গাড়ি, যেটা সব সময় ব্যবহার করা হয়, সেটা বিকেল থেকে রাস্তায় ছিল। বৃষ্টির দাপট দেখে আমার স্বামী সেটাকে গ্যারাজে তুলতে গেলেন। যদি জলে ডুবে যায়! খুব ভয় পাচ্ছিলাম। ও ফিরল একেবারে কাকভেজা হয়ে। বলল, ‘‘অনেক গাছ পড়ে গিয়েছে।’’ আমাদের কাঠের বাড়িটা থর থর করে কাঁপছে। অ্যাসফল্টের ছাদটা উড়ে যাবে না তো! কাঠের ডেকটা নিয়েও খুব চিন্তা হচ্ছিল। ভয়ে ভয়েই রাত ১১টা নাগাদ শুতে গেলাম। তখনও ঝড়বৃষ্টির তুমুল আওয়াজ। কারেন্ট আসেনি। ভয়ানক টেনশন। পরিস্থিতি তখনই বেশ গুরুতর!

কয়েক মুহূর্ত কাটতেই বুঝলাম পরিস্থিতি ভয়াবহ!

কয়েক মুহূর্ত কাটতেই বুঝলাম পরিস্থিতি ভয়াবহ! ছবি লেখকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে

ঘুম ভাঙল মোবাইলের পর পর অ্যালার্ট টোনে। একের পর এক হোয়াটসঅ্যাপ। ফেসবুক নোটিফিকেশন। তখনও বুঝতে পারিনি। ছবি আর মেসেজগুলো দেখে একটা আঁচ পাওয়া গেল। বাইরে গিয়ে যা দেখলাম, তাতে ২০১২ সালের ‘স্যান্ডি’ ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে পড়ে গেল। আয়লা, ফণী, আমপান বা ইয়াসের অভিজ্ঞতা আমার নেই। দেশে থাকতে কালবৈশাখীর দাপট দেখেছি। কিন্তু তার কাছে তো এ সব শিশু! আমাদের এখানকার নিকাশি ব্যবস্থা তেমন জোরালো নয়। বৃষ্টি হলে জল নেমে যায় বটে। কিন্তু রাতভর যে বৃষ্টি হয়েছে, এ জল নামবে কবে! আপাত ভাবে মনে হচ্ছে, এ যাত্রা আমরা রক্ষা পেয়েছি। তেমন বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি আমাদের অন্তত হয়নি। তবে পরিস্থিতি বেশ জটিল!

সকাল থেকে অবশ্য আর বৃষ্টি নেই। আকাশ মেঘলা। তবে তার ভিতরে কোনও দুর্যোগ লুকিয়ে আছে কি না জানি না। কারেন্ট আসছে-যাচ্ছে। ফ্রিজে রাখা খাবারগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। শুধু আমরা কেন, এখানকার সকলেই তো রান্না করে ফ্রিজে সেটা বেশ কয়েক দিনের জন্য মজুত করে রাখেন। বিদ্যুৎ না এলে খাব কী! আমাদের না হয় গ্যাস সংযোগ। যাঁরা ইলেকট্রিকে রান্না করেন, তাঁরা কী করবেন! জল আসবে তো! অন্য সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হলে সংস্থা থেকে মেসেজ করে। এ বারের লন্ডভন্ড পরিস্থিতিতে আর সে সবের বালাই নেই। আমাদের বাড়িতে অবশ্য জল ওঠেনি। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, পাশের কয়েকটা বাড়ি জলে ডুবে গিয়েছে। বাড়ির লন না সুইমিং পুল বোঝা যাচ্ছে না। ‘সামার ব্লুম’ লন্ডভন্ড। ছাদ উড়ে গিয়েছে। আমাদের কোনও গাছ প্রতিবেশীর কোনও ক্ষতি করেনি তো! এখানকার নিয়ম, গাছের গোড়া যার, সেই গাছ যদি কারও ক্ষতি করে, ক্ষতিপূরণ তাকেই দিতে হয়। চিন্তা হচ্ছে। এখনও সে সব দেখে উঠতে পারিনি। হোয়াটসঅ্যাপে এক বন্ধু জানাল, হাডসন নদী নাকি গতিপথ বদল করে বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েছে! বুঝতে পারছি, জলের তোড় এবং পরিমাণের কথা বোঝাতেই মজার ওই বার্তা! তবু বাস্তবের ছবিটার একটা আন্দাজ পেলাম।

কিন্তু রাতভর যে বৃষ্টি হয়েছে, এ জল নামবে কবে!

কিন্তু রাতভর যে বৃষ্টি হয়েছে, এ জল নামবে কবে! ছবি লেখকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে

আমাদের এখানে টেন্টন বলে একটা জায়গা আছে। শুনলাম, সেখান থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমার বাড়ি থেকে নিউ ইয়র্ক আধ ঘণ্টার পথ। সেখানে আট জন মারা গিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে একটা বাচ্চাও আছে। ফেসবুক থেকে জানলাম, এক মাসে যা বৃষ্টি হয়, গত রাত থেকে কয়েক ঘণ্টায় তা-ই হয়েছে। নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক ভাসছে! এমন পরিস্থিতি স্যান্ডির সময়েও হয়েছিল কি! মনে করতে পারছি না। আন্দবাজার অনলাইনের জন্য এই লেখা পাঠিয়ে অফিস যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বুঝতে পারছি না, শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছতে পারব কি না। বাড়ি থেকে অফিস ১০ মিনিটের রাস্তা। এখন কতক্ষণ লাগবে কে জানে! কোন কোন রাস্তা খোলা আছে, তা-ও তো বুঝতে পারছি না।

শুধু এটুকু বুঝতে পারছি, নিউ ইয়র্ক আর নিউ জার্সির পরিবেশ-পরিস্থিতি লন্ডভন্ড! আমাদের জীবনও!

(লেখক নিউ জার্সির বাসিন্দা। পেশায় রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কেমিস্ট)

america New Jersey Ida Storm

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।