রীতা চৌধুরীর বই নেভারল্যান্ড- জ়িরো আওয়ার ট্রিলজির প্রখম খণ্ডর পাঠ-প্রকাশ হল ঢাকা ছায়নটে। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারত বিশেষ করে অসমের ভূমিকা নিয়ে লেখা অসমিয়া সাহিত্যিক রীতা চৌধুরীর বই নেভারল্যান্ড- জ়িরো আওয়ার ট্রিলজির প্রখম খণ্ডর পাঠ-প্রকাশ হল আজ ঢাকা ছায়নটে। এই প্রথম কোনও বিদেশি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন গবেষণামূলক উপন্যাস লিখলেন বলে অনুষ্ঠানে হাজির মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি।
রীতার বাবা, এসএসবির বিস্ফোরক ও গেরিয়া যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ বিরজানন্দ চৌধুরি হাফলংয়ে বিশেষ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। সেই সূত্রে বাহিনীর অনেককে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু বিরজা কোনও তথ্য কাউকে বলেননি। সব তথ্য জ্বালিয়ে দেন। রীতার কথায়, আমরা সবাই এমন যুগে বড় হওয়া যেখানে বাংলা থেকে ঢোকা অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়ণে সংগ্রাম করেছি। অসম আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হয়ে একেবারে উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে, সীমান্তের ও পারের মানুষের দৃষ্টি থেকে, তাঁদের কষ্ট ও লড়াইয়ের আখ্যান তাঁদের ভাষা ও আবেগে জীবন্ত করে তোলা এবং সেই বই খোদ বাংলাদেশে প্রকাশ করা আমার এক অসীম দুঃসাহসী প্রয়াস। বাবার লেখা সেই সময়ের গানও গেয়ে শোনান রীতা।
বই প্রকাশের আগে তিনি প্রথমবার যান মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহালয়ে এবং ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। জানান, বইয়ের পরবর্তী খণ্ডে আসবে মুক্তিযুদ্ধ পর্ব। তৃতীয় পর্ব মুজিবের হত্যা থেকে ২০১১ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
প্রধান অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি আবদুস সামাদের কথায়, চিন ও আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। চিনের চকচকে রাইফেল দিয়ে মানুষ মারা হয়েছে। এখন বাণিজ্য-সম্পর্কের জন্য অনেকে সে কথা আজ বলতে সংকোচ বোধ করেন। রীতা বাংলাদেশ দেখার আগেই এমন জীবন্ত উপন্যাস লিখেছেন যা অভাবিত। এই প্রজন্মের কাছে এ সব গল্প। কিন্তু যারা দেখেছি তাঁদের উপলব্ধি অন্য।
হাফলংয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক বাহিনীর নেতা হাবিবুল আলম ১৭ জন তরুণের একটি গেরিলা দল ১৯৭১ সালের মে মাসে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে গেরিলা অভিযান চালান। তিনি এই বইয়ের এক চরিত্র। হাবিবুর বলেন, এই প্রথম কোনও বিদেশি মুক্তিযুক্ত নিয়ে এমন বই লিখলেন। তাও আবার মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও মুজিবের বাড়ি কখনও না দেখে। এই বিষয় কতটা গভীর ও বিস্তৃত, সেখানে অসম যে কতবড় ভূমিকা রাখতে চলেছে- তার ইঙ্গিতটুকুই দিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনও কিছু লিখতে গেলে অবশ্য শর্তই হল, আপনাকে ভিতর থেকে কাঁদতে হবে। রীতার সেই কান্না ও গবেষণা দুইই আমরা টের পাই।
মুক্তিবাহিনীর সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুল আরিফিন বলেন, বিদেশির চোখে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী পড়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বিদেশিনী হয়ে তৎকালীন সময়চিত্র ফুটিয়ে তুলতে সাহসিকতা প্রয়োজন। এমন সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে সামান্য পদচ্যুতি এমনকী বৈদেশিক সম্পর্কেও তীব্র বিতর্কের জন্ম দিতে পারত।
কবি আমিনুর রহমান বলেন, আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার কাহিনী একজন বিদেশিনী যে মুন্সিয়ানায় ফুটিয়ে তুলেছেন- তা অনবদ্য। পরের খণ্ডগুলিতে হয়ত অনেক বিতর্কিত বিষয় থাকবে। তবে আমরা নিশ্চিত ইতিহাসের নির্মোহ প্রকাশ ফুটে উঠবে রীতার কলমে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy