Advertisement
E-Paper

Lata Mangeshkar: কাঁটাতার উপেক্ষা করে অটুট ছিল ওঁদের বন্ধুত্ব

দীর্ঘ ফোনালাপে সাক্ষাতের ইচ্ছে যেন আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। এত কাছে থেকে ফিরে যেতে চাননি লতা। তা হলে উপায়?

লতা মঙ্গেশকর ও নুর জহান।

লতা মঙ্গেশকর ও নুর জহান।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৮
Share
Save

ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক অস্ত্রোপচার করে যতই কাঁটাতারের সেলাই করা হোক না কেন, তা কখনওই সঙ্গীত, সিনেমা, সংস্কৃতিকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। তাই লতা মঙ্গেশকর দিল্লিতে যতটা সমাদৃত, ইসলামাবাদেও ততটাই। একই কথা প্রযোজ্য নুর জহানের ক্ষেত্রেও। তাঁদের সঙ্গীত মিলিয়ে দেয় কলকাতা-করাচিকে।

দেশভাগের পরে ‘মল্লিকা এ তরান্নুম’ নুর জহান জন্মভিটেতেই ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বহু ভক্তের মতো সেই ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতাও।

সুরেলা গায়কীর পাশাপাশি নিখুঁত উর্দু উচ্চারণের মিশেলে চল্লিশের দশকে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন নুর জহান। স্বয়ং সাদাত হাসান মান্টো তাঁর বই ‘মান্টো নামা’য় নুর জহানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। কিংবদন্তি শিল্পী গুলাম হায়দরের কাছে প্রশিক্ষিত নুর জহান তত দিনে ‘খানদান’, ‘নওকর’, ‘দোস্ত’ সিনেমায় গেয়ে ফেলেছেন। ‘বড়ী মা’, ‘আনমোল ঘড়ি’, ‘জুগনু’-তে তাক লাগানো পারফরম্যান্সে অনুপ্রাণিত করছেন পরবর্তী প্রজন্মকে।

এমন সময়েই উঠে আসছেন আরও এক প্রতিভা। শুরু থেকেই যেন লতা জানান দিয়েছিলেন, দীর্ঘসময় রাজত্ব করতেই তাঁর আবির্ভাব। তাঁর প্রথম দিকের গান শুনে উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খান, গুলাম হায়দরের মতো সঙ্গীতশিল্পীও ভবিষ্যতের তারকাকে পড়ে ফেলেছিলেন। এ হেন উঠতি প্রতিভা প্রেরণা খুঁজতেন নুর জহানের সঙ্গীতে। শুরুর দিকে তাঁকে অনুসরণের চেষ্টাও করতেন বলে মনে করেন অনেকে। দিলীপ কুমার-রাজ কপূর অভিনীত ‘আন্দাজ়’ সিনেমায় লতার কণ্ঠে ‘উঠায়ে যা উনকে সিতম’ গানে তো অনেকেই নুর জহানের ছায়া দেখেছিলেন।

এমন দুই শিল্পীকে মেলাল ‘বড়ী মা’ (১৯৪৫)। ওই সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন লতা এবং নুর জহান। পরে লতা বলেছিলেন, ‘‘বলতে দ্বিধা নেই, প্রত্যেকের যেমন রোল মডেল থাকে, আমার আদর্শ ছিলেন নুর জহান। ছোটবেলা থেকে ওঁর গান শুনে বড় হয়েছি। ওঁর গানের নোটস মনে গেঁথে গিয়েছিল।’’

অন্য দিকে নুর জহানও বার বার স্বীকার করেছেন, লতার প্রতিভায় তিনি মুগ্ধ। নিছক প্রশংসা নয়, একে অপরের সম্পর্কও ছিল মধুর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তখন বছর চারেক কেটে গিয়েছে। এমন সময়ে এক বার অমৃতসরে গানের রেকর্ডিংয়ে যাচ্ছিলেন লতা। মুখ্য উদ্দেশ্য সঙ্গীত হলেও নুর জহানের সঙ্গে এক বার দেখা করতেও উন্মুখ ছিলেন।

প্রসঙ্গত, নুর জহান থাকতেন লাহোরে। অমৃতসর থেকে সীমান্ত পেরিয়ে পৌঁছতে লাগে কয়েক ঘণ্টা। আবেগপ্রবণ হয়ে লতা ফোন করেন নুর জহানকে। মনে রাখতে হবে, তখন টেলি যোগাযোগ এত সহজলভ্য ছিল না। কিন্তু দুই সম্রাজ্ঞী যখন কথা বলেন তখন সময়ের হিসাব আর কে-ই বা রাখে! একে অপরের খোঁজ নেওয়া তো বটেই ফোনে গল্পও জুড়ে দেন দু’জনে। অনেক দিন পরে খুব আপন মানুষের কণ্ঠস্বর শুনলে যেমনটা হয় আর কী। শুধু সঙ্গীত নয়, ব্যক্তি জীবনের সুখ-দুঃখও বিনিময় করেন দু’জনে।

দীর্ঘ ফোনালাপে সাক্ষাতের ইচ্ছে যেন আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। এত কাছে থেকে ফিরে যেতে চাননি লতা। তা হলে উপায়? ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা সুরকার সি রামচন্দ্রের দ্বারস্থ হন।

সেই সময়ে বলিউডে লতা-রামচন্দ্রের বন্ধুত্ব নিয়ে জল্পনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে। কিন্তু দু’জনেই হেঁয়ালি বজায় রেখেছিলেন। রহস্যের সুতোয় গাঁথা ছিল সম্পর্কের চাবিকাঠি। সহকর্মী হিসাবে দু’জনের তালমিলও ছিল অনবদ্য। লতা ভীষণ ভরসাও করতেন রামচন্দ্রকে। এ হেন সঙ্গীত পরিচালকই সে বার হয়ে উঠলেন ত্রাতা মধুসূদন। নিজস্ব যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে দুই কিংদন্তি শিল্পীর সাক্ষাতের বন্দোবস্ত করেন রামচন্দ্রই। কিন্তু এত কম সময়ে সীমান্ত পেরোবেন কী ভাবে! তার জন্য যে নানা আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাউকেই সীমান্ত পেরোতে হয়নি। কিন্তু সফল হয়েছিল ছুঁয়ে দেখার আকাঙ্ক্ষাটুকু। ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ উপস্থিত হন দু’জনেই। এমন ভাবে গোটা বিষয়টি আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে কোনও দেশের সরকারকেই বিব্রত হতে না হয়।

রামচন্দ্র তাঁর জীবনীগ্রন্থে লিখেছেন, লতাকে দেখে নুর জহান ছুটে আসেন। জড়িয়ে ধরেন একে অপরকে। যেন বহু দিন বিচ্ছিন্ন দুই বন্ধুর মেলবন্ধন। আবেগের অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে যান দু’জনেই। রামচন্দ্র লিখছেন, ‘‘ওঁরা ছাড়াও অকুস্থলে উপস্থিত সকলেই ওই দৃশ্য দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি। এমনকি দু’দেশের সেনাদেরও চোখ ভিজে যায় আবেগে।’’ সময় যেন থমকে যায়। কিছুক্ষণ পরে ধাতস্থ হন দু’জনে। ফের শুরু হয় গল্পগাছা। রামচন্দ্রের কথায়, ‘‘আমরা মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলাম। ওঁরাও লাহোরের থেকে এনেছিলেন। নুর জহানের স্বামীও ছিলেন সেখানে। সেই স্মৃতি কখনও ভুলব না।’’ আক্ষরিক অর্থেই যেন সে দিন সীমান্তের কাঁটাতার চৌচির হয়ে গিয়েছিল দুই নক্ষত্রের ছটায়। কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে ফের নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যান লতা-নুর জহান।

এর বহু বছর পরে ১৯৮২ সালে কনসার্টের জন্য মুম্বই (তখন বম্বে) আসেন নুর জহান। অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন লতা। কাছে আসেন দুই মহারথী। দেশভাগ না হলে কি দু’জন দুই দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠতেন? না কি এক জনের ছটায় ঢাকা পড়ে যেতেন অন্য জন— এই চর্চা সরিয়ে রেখেও বলা যায়, নিছক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, একে অপরকে শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালবাসার নিক্তিতে উজ্জ্বল দুই কিংবদন্তিই। ব্যতিক্রমীও।

lata mangeshkar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।