মায়ের কোলে খুদে চার্লস।
বয়স হিসেব করলে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে এই প্রথম। প্রায় বার্ধক্যে পৌঁছে ৭৩ বছর বয়সে ব্রিটেনের রাজা হলেন চার্লস। তবে এখন আর তিনি চার্লস নন, রাজা তৃতীয় চার্লস।
এর জন্য কোনও অনুষ্ঠান হয়নি, কোনও রাজকীয় ঘোষণারও প্রয়োজন পড়েনি। রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী গত কাল ঠিক যখন প্রয়াত হয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ, সেই মুহূর্ত থেকে নতুন রাজা হয়েছেন চার্লস। ২৬ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেছিলেন দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। দীর্ঘ ৭০ বছর রাজত্বের পর গত কাল তাঁর প্রয়াণ ঘটেছে। রাজা হিসেবে চার্লসকে প্রথম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, কী হবে তাঁর নাম। চার্লস, ফিলিপ, আর্থার ও জর্জ, এই চারটি নামের মধ্যে যে কোনও একটি নাম বেছে নিতে হয় তাঁকে। পরিবারের বাকিদের ক্ষেত্রেও উপাধির নানা বদল হয়েছে। চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা হয়েছেন কুইন কনসর্ট। বাবার উপাধি ডিউক অব কর্নওয়াল উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন চার্লসের বড় ছেলে উইলিয়াম। তিনি ও তাঁর স্ত্রী কেট এখন থেকে ডিউক ও ডাচেস অব কর্নওয়াল এবং কেমব্রিজ। উইলিয়াম ও কেট শীঘ্রই প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস উপাধিতে ভূষিত হবেন। অর্থাৎ, তাঁরা হবেন যুবরাজ ও যুবরানি। রাজা তৃতীয় চার্লস স্বয়ং এই খেতাব প্রদান করবেন বড় ছেলেকে।
শোনা যাচ্ছে, শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ-দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে চার্লসের হাতে। এর পরে শুধু ব্রিটেন নয়, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজ়িল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনির মতো আরও ১৪টি দেশের ‘প্রধান’ হবেন তিনি।
রাজা তৃতীয় চার্লসের ৭৩ বছরের জীবন কিন্তু কাহিনিময়। বহু চর্চিত ও বিতর্কিতও। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর স্যানড্রিংহ্যাম রয়্যাল এস্টেটে জন্ম হয় চার্লসের। রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের প্রথম সন্তান তিনি। চার্লসের যখন তিন বছর বয়স, তখন তাঁর দাদু রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা যান। ১৯৫২ সালে সিংহাসনে বসেন দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। আরও তিন ভাইবোন রয়েছে চার্লসের— অ্যান, অ্যান্ড্রু ও এডওয়ার্ড। প্রথম সন্তান হওয়ার সুবাদে তিনিই হন প্রিন্স অব ওয়েলস। ন’বছর বয়সে তাঁকে সেই খেতাব দেন রানি। প্রথম সন্তান হওয়ায় আরও কিছু উপাধি পেয়েছিলেন চার্লস। যেমন ডিউক অব কর্নওয়াল, ডিউক অব রোদসে, আর্ল অব ক্যারিক, ব্যারন অব রেনফ্রিউ, লর্ড অব দ্য আইলস এবং প্রিন্স ও গ্রেট স্টুয়ার্ড অব স্কটল্যান্ড।
চার্লসকে বড় করার সময়ে রাজপরিবারের বহু প্রথা ভেঙেছিলেন দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। প্রাসাদে শিক্ষক না রেখে তাঁকে বাইরের স্কুলে পড়তে পাঠানো হয়েছিল। ওয়েস্ট লন্ডনের হিল হাউস স্কুল ও পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনা করেন চার্লস। কেমব্রিজে পড়ার সময়ে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণও নেন তিনি।
১৯৮১ সালে যুবরাজ চার্লস বিয়ে করেন ডায়ানাকে। যাঁকে বলা হত ‘সাধারণ মানুষের রাজকুমারী’। তাঁদের বিয়ের রূপকথায় বুঁদ হয়েছিল বিশ্ব। ডায়ানার সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের ছটায় কোথাও যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন চার্লসও। কয়েক বছর পরেই জানা যায়, এই রূপকথা সুখের নয়। ১৯৯৬ সালে তাঁদের বিয়ে ভেঙে যায়। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলো লিখেছিল, পরকীয়ার জেরেই বিচ্ছেদ। ব্রিটিশ দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডায়ানাও বলেছিলেন, ‘‘এই বিয়েতে তিন জন মানুষ ছিল... বড্ড ভিড়।’’ সেই তৃতীয় মানুষটি রাজা তৃতীয় চার্লসের বর্তমান স্ত্রী, কুইন কনসর্ট ক্যামিলা।
১৯৯৭ সালের ৩১ অগস্ট প্যারিসে প্রেমিক ডোডি আল-ফায়েদের সঙ্গে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ডায়ানা। চার্লসের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ছিলই, এ বার ষড়যন্ত্রের গন্ধও পান অনেকে। তাঁর রাজা ‘সাজা’ হল ঠিকই, কিন্তু ডায়ানার মৃত্যুর ২৫ বছর পরেও সেই বিতর্কের কালি মুছতে পারেননি চার্লস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy