ইউক্রেনে যা ঘটছে, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় তেমন কিছু হতে দেওয়া চলবে না— এই বিষয়ে একমত হল কোয়াডের চার দেশ।
গোটা বিশ্বের, বিশেষ করে পশ্চিমি দেশগুলির নজর এখন ইউক্রেন-রাশিয়ার দিকে। এই সুযোগে চিন সামরিক ভাবে স্বশাসিত তাইওয়ানের দখল নেওয়ার বা ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় তাদের ক্ষমতা জাহিরের চেষ্টা করতে পারে— এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বেজিং তার ‘অ্যালার্ট লেভেল’ বাড়ানোয়। এমন এক পরিস্থিতিতে কোয়াড দেশগুলির প্রধানরা আজ ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে সেই বৈঠকের পরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, “ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় একতরফা ভাবে স্থিতাবস্থায় কোনও বদল আনতে না দেওয়ার বিষয়ে আমরা সহমত হয়েছি। ইউক্রেনের পরিস্থিতিই এই এলাকাকে মুক্ত ও অবাধ রাখার জন্য আমাদের আরও তৎপর থাকাটা জরুরি করে তুলেছে।” জাপানের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য সরাসরি চিন বা তাইওয়ানের নাম উল্লেখ করেননি। প্রধানমন্ত্রী মোদীও বৈঠকে চিন বা রাশিয়ার প্রসঙ্গে না গিয়ে কোয়াডে সহযোগিতা বাড়ানো ও শান্তি-স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন।
ইউক্রেন নিয়ে কোয়াডে ফাটল স্পষ্ট হয়েছে সম্প্রতি। আমেরিকার নেতৃত্বে বাকি দুই সদস্য জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া রাশিয়ার বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোট দিয়েছে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিক অনুরোধ সত্ত্বেও রাশিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করেনি ভারত। জাপান ইতিমধ্যেই আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাশিয়ার উপরে। অস্ট্রেলিয়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রাশিয়াকে একঘরে করে দেওয়া হোক।
কোয়াডের চার দেশের মধ্যে এক মা্ত্র ভারতই রাশিয়ার ভূমিকার নিন্দায় একেবারে মুখ খোলেনি। কারণ ভারতকে চলতে হচ্ছে ভারসাম্য রেখে। এক দিকে চিনের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘ বন্ধুত্বের কারণে বেজিংয়ের সঙ্গেও ভারসাম্য রেখে চলতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। উল্টো দিকে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্য আমেরিকার তরফে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কার কথাও ভাবনায় রাখতে হচ্ছে ভারতকে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী যে কারণে আজকের বৈঠকে চিন বা রাশিয়ার দিকে আঙুল না তুলে বলেছেন, “ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখার মূল লক্ষ্যের দিকে দিকেই নজর দিতে হবে কোয়াডকে। মানবিক কারণে ও বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে ত্রাণ, ঋণ, পণ্যের সরবরাহ, দূষণহীন শক্তি, যোগাযোগের মতো ক্ষেত্রে বাস্তবিক সহযোগিতা কী ভাবে বাড়ানো যায়, মোদী এ দিন সেই সব দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কোয়াড বৈঠকে। জাপানে চলতি বছরেই কোয়াড শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে সুনির্দিষ্ট ভাবে কোয়াডের লক্ষ্যগুলি পূরণ করার জন্য চার দেশ পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ দিন।