তাঁর মা ডাচেস অব ইয়র্ক চেয়েছিলেন ছোট মেয়ের নাম রাখবেন ‘অ্যান মার্গারেট’। তবে তাঁর ঠাকুরদা রাজা পঞ্চম জর্জের নাতনির এই নাম পছন্দ হয়নি। পরিবর্তে তিনি নামকরণ করেছিলেন ‘মার্গারেট রোজ’। তাঁর শৈশব কেটেছিল লন্ডন এবং উইন্ডসরের প্রাসাদে। গুজব রটেছিল, রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানি এলিজাবেথের ছোট মেয়ে মূক ও বধির। পরে ১৯৩৪ সালে কাকা যুবরাজ জর্জের বিয়ের আসরে মার্গটকে দেখে সকলের ভুল ভাঙে।
দিদির সঙ্গে মার্গারেটেরও লেখাপড়া শুরু হয়েছিল প্রাসাদের অন্দরমহলেই। শোনা যায়, মূলত মায়ের ইচ্ছেতেই গভর্নেসের তত্ত্বাবধানে চলত দুই বোনের পড়াশোনা। বাকি পাঁচজন বাচ্চার মতো স্কুল যেতে না পারার দুঃখ আজীবন সঙ্গী ছিল মার্গারেটের। এর জন্য তিনি নিজের মাকেও দোষারোপ করেছেন। তবে পরবর্তীতে রানি এলিজাবেথের দাবি ছিল, রাজকন্যাদের অন্তঃপুরে রেখে পড়াশোনা করানোর সিদ্ধান্ত ছিল তাঁদের ঠাকুরদা পঞ্চম জর্জের। সেই নির্দেশই অনুসরণ করা হয়েছে।
আমেরিকান সুন্দরী ওয়ালিস সিম্পসনের প্রেমে পড়েছিলেন অষ্টম এডওয়ার্ড। কিন্তু সাধারণ পরিবারের তরুণী তথা দু’বারের ডিভোর্সি ওয়ালিসকে ব্রিটেনের মহারানি বলে মানতে রাজি ছিল না রাজপরিবার। চার্চ অব ইংল্যান্ড এবং তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার (ডোমিনিয়ন গভর্নমেন্ট), দুই তরফেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ওয়ালিসকে মহারানি হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না।
রাজসিংহাসন এবং প্রেয়সীর মধ্যে অষ্টম এডওয়ার্ড বেছে নিয়েছিলেন দ্বিতীয়টিকেই। ১৯৩৬ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি সিংহাসনচ্যুত হন। ব্রিটেনের রাজা হন তাঁর ভাই রাজা ষষ্ঠ জর্জ। এর পর বাবা মা এবং দিদির সঙ্গে মার্গারেট চলে আসেন বাকিংহাম প্রাসাদে। উত্তরাধিকারসূত্রে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই প্রাসাদ হয়ে ওঠে তাঁদের বাসস্থান।
১৯৫১ সালে মার্গারেটের ২১তম জন্মদিনের কয়েক মাস পরেই তাঁর বাবা ফুসফুসের ক্যানসারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার নির্দেশে মার্গারেটকে কিছু রাজকর্তব্য পালন করতে হয়। কর্কটরোগের বিরুদ্ধে ৫ মাসের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রয়ারি মারা যান রাজা ষষ্ঠ জর্জ। সিংহাসনে বসেন তাঁর বড় মেয়ে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পরে তাঁর মেয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সময়েও ‘ইক্যুয়ারি’ পদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি ছিলেন কুইন মাদার এলিজাবেথের (প্রথম) নতুন বাসভবন ক্ল্যারেন্স হাউসের কম্পট্রোলার-ও। প্রাচীন এই পদাধিকারীর দায়িত্ব ছিল, নির্দিষ্ট কোনও প্রাসাদের কোষাগার সামলে রাখা। পরে অবশ্য ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে পদটি বিলুপ্ত হয়।
মার্গারেট-টাউনসেন্ড সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ছিলই। ১৯৫২ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যু পরে টাউনসেন্ড তাঁর প্রথম স্ত্রী রোজমেরিকে ডিভোর্স করলে সেই গুঞ্জন আরও তীব্র হয়। বিয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন দু’জনেই। আপত্তি ছিল না মার্গারেটের মা এবং দিদিরও। কিন্তু বাদ সাধল রক্ষণশীল চার্চ অব ইংল্যান্ড এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহল। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলও ছিলেন এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে। শেষ অবধি একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন মার্গারেট এবং টাউনসেন্ড।
১৯৫৮ সালে ব্রিটিশ চিত্রগ্রাহক তথা পরিচালক অ্যান্টনি আর্মস্ট্রং জোন্সের সঙ্গে এক পার্টিতে আলাপ হয় মার্গারেটের। সুন্দরী রাজকন্যার পাণিপ্রার্থী হতে সময় নেননি জোন্স। কিন্তু মার্গারেট তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি দেননি প্রথমে। ১৯৬০ সালে টাউনসেন্ড তাঁকে জানান তিনি এক বেলজিয়ান তরুণীকে বিয়ে করতে চলেছেন এবং ওই তরুণীকে দেখতে নাকি মার্গারেটের মতোই। শোনা যায়, এ কথা শোনার পরেই জোন্সের সঙ্গে নিজের বিয়ের কথা ঘোষণা করেন মার্গারেট।
চুনি এবং হিরে বসানো আংটি দিয়ে মার্গারেটকে প্রোপোজ করেন জোন্স। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে তাঁদের বিয়ে হয় ১৯৬০ সালের ৬ মে। ব্রিটিশ রাজপরিবারে তাঁদের বিয়েই প্রথম সম্প্রচারিত হয়েছিল টেলিভিশনে। ব্রিটিশ রাজপরিবারে বিয়ের সূত্রে জোন্সের নতুন উপাধি হয় ‘আর্ল অব স্নোডন’। ১৯৬১ সালে ছেলে ডেভিড এবং ১৯৬৪-তে মেয়ে সারা-র জন্ম দেন মার্গারেট। বিয়ের পরে স্বামীর সূত্রে সমাজের বিভিন্ন মহলে তাঁর অবাধ গতি তৈরি হয়। বহু ক্ষেত্রেই তিনি রাজপরিবারের বিধিনিষেধ ভেঙেছিলেন।
বিয়ের পরেও মার্গারেটের প্রেমিকা সত্ত্বা নষ্ট হয়নি। বিবাহিত মার্গারেটেরও একাধিক প্রণয়ী ছিল। শেষ অবধি ১৯৭৮ সালে ভেঙে যায় তাঁর বিবাহিত জীবন। এর পর রাজকন্যার জীবন অনেকটা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল। কৈশোর থেকেই তিনি ছিলেন ধূমপায়ী। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল সুরাসক্তি। সাতের দশকে তিনি স্নায়ুরোগের শিকার হন। এক দশক পরে ১৯৮৫ সালে বাদ দেওয়া হয় তাঁর ফুসফুসের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy