ভাঙনের মুখে রাজপরিবার! —ফাইল চিত্র।
মুখে রুপোর চামচ নিয়ে জন্মালেও, ছোট থেকে কম ঝড়ঝাপটা সইতে হয়নি তাঁদের। কিন্তু, বিপদে-আপদে ছোট্ট ভাইটিকে দু’হাত দিয়ে আগলে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার আর ধরে রাখতে পারলেন না। ব্রিটেনের রাজপরিবারে ভাঙন নিয়ে গোটা দুনিয়ায় যখন হইচই, তখন ঘনিষ্ঠ মহলে এমনই আক্ষেপ উগরে দিলেন প্রিন্স উইলিয়াম। ভাইয়ের সিদ্ধান্তে যে তিনি মর্মাহত, বন্ধুদের সামনে খোলাখুলি তা স্বীকারও করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে এমনটাই জানা গেল।
ব্রিটেনের ‘দ্য সানডে টাইমস’ পত্রিকা জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বন্ধুদের কাছে দুঃখ করেন প্রিন্স উইলিয়াম। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন নিজে হাতে ভাইকে আগলে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়। আমরা দু’জন দু’টি ভিন্ন ভিন্ন সত্তা। গোট ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই মুহূর্তে ওদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। আশাকরি, এমন একটা সময় আসবে, যখন আমরা সবাই ফের এক ছাতার নীচে জড়ো হব। আমি চাই, প্রত্যেকে একজোট হয়ে কাজ করুক।’’
উইলিয়ামকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম যে মন্তব্য প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজপরিবারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে কেনসিংটন প্যালেসের অন্দরে পরিবারের মধ্যে সমন্বয় রক্ষার সবরকম চেষ্টা চলছে বলে জানা গিয়েছে। সে দেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে স্বয়ং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকেই হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। প্রিন্স চার্লস, প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স হ্যারিকে নিয়ে সার্ডিংহাম প্যালেসে আলাদা করে বৈঠক করবেন তিনি। সেখানে হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হবে। আলোচনা হবে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়েও। এমনকি নিতান্তই যদি, ভাঙন রোখা না যায়, সে ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে হ্যারি কত সম্পত্তি পাবেন, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
প্রিন্স চার্লস এবং ‘পিপলস প্রিন্সেস’ প্রয়াত ডায়ানার ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম এবং হ্যারি। পিঠোপিঠি দুই ভাই একই সঙ্গে বড় হয়েছেন। চার্লস এবং ডায়ানার বিবাহ বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়া যখন উত্তাল, তখন থেকেই একে অপরকে সামলে এসেছেন তাঁরা। ১৯৯৭ সালে পথ দুর্ঘটনায় ডায়ানার আকস্মিক মৃত্যুর পর সেই বন্ধন আরও গাঢ় হয়েছিল বলে একাধিক বার নিজেমুখেই সে কথা জানিয়েছেন উইলিয়াম এবং হ্যারি। এমনকি উইলিয়ামের জীবনে তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন আসার পরেও তাতে ছেদ পড়েনি। বরং তিন জনে মিলে একাধিক সমাজসেবামূলক কাজে যোগ দেন।
যদিও হ্যারির জীবনে মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কলের প্রবেশের পরেই ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে বলে দাবি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ মহলের। তাদের দাবি, আগে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দাদা এবং বৌদির সঙ্গে পরামর্শ করতেন হ্যারি। কিন্তু মেগান আসার পর তাঁদের মধ্যে ক্রমশ দূরত্ব তৈরি হয়। শোনা যায়, উইলিয়াম চেয়েছিলেন পেশায় অভিনেত্রী মেগানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে হ্যারি যেন বুঝে শুনে পা ফেলেন। কিন্তু সে কথা বোঝাতে গেলে দাদাকেই ভুল বুঝে বসেন হ্যারি। তাই ভাইকে আর ঘাঁটাননি উইলিয়াম। বরং মেগান ও হ্যারির বিয়েতে রাজি হয়ে যান তিনিও। সেই মতো ২০১৮-র ১৯ মে গাঁটছড়া বাঁধেন হ্যারি ও মেগান।
কিন্তু স্বাধীনচেতা মেগান শুরু থেকেই রাজপরিবারের আদব কায়দার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না বলে অভিযোগ সমালোচকদের। তাঁদের দাবি, বিবাহবিচ্ছিন্না মেগানের রাজপরিবারে জায়গা পাওয়া নিয়ে অনেকে সন্দিহান থাকলেও, রানি নিজে কোনও আপত্তি করেননি। বরং মেগানের জন্য নিয়ম-কানুনও শিথিল করেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের একাধিক পদক্ষেপের জন্য ব্রিটিশ মিডিয়ার সমালোচনার মুখে পড়তে হয় মেগানকে। তবে সমালোচকদের একটি অংশ আবার অন্য দাবি করেন। তাঁদের দাবি, কৃষ্ণাঙ্গ মেগানকে শুরু থেকেই বিদ্রূপ করে এসেছে ব্রিটিশ মিডিয়া। প্রতি মুহূর্তে তাঁর সমালোচনা করেছে। এ ব্যাপারে রাজ পরিবারের তরফেও তেমন সাহায্য পাননি মেগান।
এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহেই রাজ পরিবারের ‘সিনিয়র সদস্যপদ’ ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন মেগান ও হ্যারি। ‘ডিউক এবং ডাচেস অব সাসেক্স’ উপাধি ধরে রাখতে চাইলেও, রাজ পরিবারের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে নিজেদের মতো রোজগার করতে চান বলে ঘোষণা করেন তাঁরা। তাতেই উদগ্রীব হয়ে পড়েন রাজ পরিবারের সদস্যরা। রানিকে না জানিয়ে তাঁরা এত বড় ঘোষণা করলেন কীভাবে, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে যায়। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ মেশ মাঠে নামতে হয় রানিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy