দুই ছেলেমেয়ের দেহ ময়নাতদন্ত হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তাদের দেহ রাখা হয়েছে। অথচ বাবা-মা সেখানে নেই! তাঁরা তত ক্ষণে ঢাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন জামালপুরে। মঙ্গলবার জামালপুরেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে ওই দুই শিশুর। মর্গ থেকে দুই সন্তানের দেহ আনতেও যাননি আমান উল্লাহ এবং মাহফুজা মালেক। বুধবার সকালে জামালপুর থেকেই তাঁদের আটক করে বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে তাঁদের। সন্তানদের খুনের অভিযোগে নিজের স্ত্রী মাহফুজা মালেকের বিরুদ্ধেই মামলা করলেন ওই দুই শিশুর বাবা আমান উল্লাহ। বৃহস্পতিবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন আমান। ঢাকা পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার মাহফুজা মালেককে আদালতে তোলা হবে। একই সঙ্গে ওই শিশুদের এক মাসিকেও আটক করেছে র্যাব। পুলিশ যদিও সরকারি ভাবে আটকের কথা না বলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে বলে দাবি করেছে।
গত সোমবার রহস্যজনক ভাবে ঢাকার বনশ্রীতে মৃত্যু হয় নুসরাত আমান (১২) ও আলভী আমান (৬) নামে দুই ভাইবোনের। স্কুল থেকে ফিরে খাওয়াদাওয়ার পর তারা শুয়ে পড়েছিল। কিন্তু, বিকেলে অনেক ডাকাডাকির পর তারা ঘুম থেকে না ওঠায় মাহফুজা ফোন করে স্বামীকে গোটা ঘটনার কথা জানান। এর পর বাড়িতে ফিরে আমান উল্লাহ তাদের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিত্সকেরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে তাদের দেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাদের দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। দুই ভাইবোনের অস্বাভাবিক এই মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশে কোনও অভিযোগ করেননি আমান উল্লাহের পরিবার। কিন্তু, অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই পুলিশে খবর দেন। এ দিন পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ না জানানো হলে তারাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করবে। তাদের কাছেও গোটা বিষয়টা একটা রহস্য।
আরও খবর
সাগরে ভাসছিল নৌকা, ভিতরে বসে একা মমি
কেন?
পেশায় ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ও চিকিত্সকদের জানিয়েছিলেন, রবিবার তাঁর বিবাহবার্ষিকী ছিল। সেই উপলক্ষে একটি চিনা রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনিয়েছিলেন তিনি। ওই রাতে সপরিবারে সেই খাবার খাওয়ার পরেও কিছু খাবার রয়ে যায়। তাঁর স্ত্রী মাহফুজা সেই খাবার ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলেন। পর দিন দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পর সেই খাবার গরম করে দুই ভাইবোনকে খেতে দিয়েছিলেন তিনি। এর পরেই বাচ্চারা অন্যান্য দিনের মতো শুয়ে পড়ে। কিন্তু, বিকেলে তাদের ডাকতে গিয়ে কোনও সাড়া পাচ্ছিলেন না মাহফুজা। শেষে আমান উল্লাহকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে পাঠান তিনি। কিন্তু, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ওই শিশুদের শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশের দাবি, মৃত্যু নিশ্চিত করতে বিষও ব্যবহার করা হয়েছিল। দেহের বেশ কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্নও ছিল। ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত নুসরাত। আর আলভী পড়ত হলি ক্রিসেন্ট স্কুলে। নার্সারি শ্রেণির পড়ুয়া ছিল সে।
যে চিনা রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে আনা হয়েছিল, তার মালিককে আটক করা হয় প্রথমে। গ্রেফতারের পর তাঁকে আদালতে হাজির করানোয় বিচারক তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ফ্ল্যাটের নিরাপত্তারক্ষী-সহ কয়েকজনকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। এর পরেই নিজেদের বয়ান পাল্টে ফেলেন আমান উল্লাহরা। দাবি করেন, ওই দিন বিকেলে দুই গৃহশিক্ষক তাঁর ছেলেমেয়েকে পড়াতে এসেছিলেন। মাহফুজা তখন পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পর তিনি ছেলেমেয়েদের ডাকতে গিয়ে দেখেন অচৈতন্য অবস্থায় তাঁরা মেঢেতে পড়ে রয়েছে। এর পরেই আমন উল্লাহকে ফোন করেন তিনি। ধোঁয়াশা বাড়তে থাকে। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে বাবা-মাকেও সন্দেহের বাইরে রাখছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy