লাখ লাখ মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। প্যারিসে এআই সম্মেলনে গিয়ে সে কথাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি, তার ‘কুফল’-এর কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে চাকরি হারাতে পারেন মানুষ। তবে তাঁর আশ্বাস, নতুন ধরনের চাকরিও তৈরি হবে।
সোমবার দু’দিনের সফরে ফ্রান্সে পৌঁছোন মোদী। মঙ্গলবার এআই সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভাল-খারাপ দিকগুলি তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, লাখ লাখ মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে এআই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, বিজ্ঞান ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করা যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এআই সেই পৃথিবী তৈরি করতে পারে, যেখানে সহজে এবং দ্রুত গতিতে উন্নয়ন করা সম্ভব।’’ তবে সাইবার সুরক্ষা, ভুয়ো তথ্য, ‘ডিপ ফেক’-এর মতো বিষয়গুলি নিয়েও সাবধান করেছেন তিনি। মোদীর মতে, মানুষের স্বার্থেই শুধু এআই ব্যবহার করা দরকার। তার পরেই তিনি এআই-এর খারাপ দিকগুলি তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এআই-এর কারণে চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে।’’ তার পরেই তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘ইতিহাসই দেখিয়েছে যে, প্রযুক্তির কারণে মানুষের চাকরি যায়নি কখনও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকরির প্রকৃতি বদলে গিয়েছে। নতুন ধরনের চাকরি এসেছে।’’
চাকরি হারানোর উদ্বেগ কী ভাবে নিরসন করা যায়, তার পথও বাতলে দিয়েছেন মোদী। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যখন এআই-এর বাড়বাড়ন্ত থাকবে, সেই সময়ের জন্য মানুষকে উপযোগী করে তুলতে হবে। সেই নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। এর পরেই মোদী জানিয়েছেন, এআইয়ের জন্য ‘সবুজ শক্তি’-র প্রয়োজন। আর এ জন্য হাত মিলিয়েছে ভারত এবং ফ্রান্স। সৌরশক্তির ব্যবহার করা হবে।
ভারতে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা-ও জানিয়েছেন মোদী। তিনি জানিয়েছেন, ভারতে ১৪০ কোটি মানুষের জন্য ডিজিট্যাল পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। খুব কম খরচে হাতের নাগালে এসেছে ইন্টারনেট। ভারতে অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই ডিজিট্যাল মাধ্যম। আর এটাই এ দেশে গড়ে দিয়েছে এআইয়ের ভিত্তি। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত সকলের জন্য এআই অভিযান শুরু করেছে। ডেটা প্রিভেসির ক্ষেত্রে ভারত এআই ব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। মানুষের স্বার্থে এআইয়ের ক্রমাগত উন্নতি ঘটানো হচ্ছে এ দেশে।’’ ভারতে নানা ভাষা রয়েছে। বৈচিত্র রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখে এআইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভবিষ্যতে এই গ্রহের প্রত্যেকটি মানুষ যাতে এআই দ্বারা উপকৃত হন, সেই চেষ্টাই করছে ভারত। তাঁর কথায়, ‘‘এআই যুগের ভোরে রয়েছি আমরা। কিছু মানুষের মনে ভয় রয়েছে যে, যন্ত্র হয়তো মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাপিয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ আসলে আমাদেরই হাতে। সেই কর্তব্যবোধই আমাদের পথ দেখাবে।’’
২০২৩ সালে এআই সম্মেলন শুরু হয় ব্রিটেনে। ২০২৪ সালে এই সম্মেলন বসেছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়। এ বার আয়োজিত হয়েছে ফ্রান্সে। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য, এআই প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরেঁর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করার কথা মোদীর। বুধবার মোদী এবং মাকরঁ— দু’জনে মার্সেইতে মাজ়ারগুয়েস যুদ্ধের সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শন করবেন। যুদ্ধে শহিদ ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন মোদী। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।