পিট হেগসেথ। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকান সেনেটে হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াইয়ে পিট হেগসেথকে নতুন প্রতিরক্ষা সচিব পদে বেছে নেওয়া হল। ভোট সংখ্যা টাই হয়ে যাওয়ার পরে পিটের পক্ষে নির্ণায়ক ভোটটি দেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। কিন্তু প্রাক্তন সেনানী এবং ফক্স নিউজ়ের প্রাক্তন সঞ্চালক পিটের বিরুদ্ধে এত রকম অভিযোগ রয়েছে যে, তাঁর পদপ্রাপ্তি ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে।
পিটের সমর্থকেরা বলছেন, পিট সেনাজীবনে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। পেন্টাগনে তিনি এক ধরনের যোদ্ধা-সংস্কৃতি আমদানি করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে বিরোধীরা উল্লেখ করছেন, পিটের বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক বার যৌন অশালীনতা, গার্হস্থ্য নির্যাতন, আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। এই বিরোধীদের মধ্যে শুধু ডেমোক্র্যাট বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট নেই, তিন জন রিপাবলিকান সেনেটরও পিটের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। পিটের বদমেজাজ এবং পানাসক্তি নিয়েও অনেকে শঙ্কিত। তা ছাড়া রণক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকার ব্যাপারেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি রক্ষণশীল বলে জানা গিয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে ৫০-৫০ ভোট পড়ার পরে ভান্স তাঁর ভোটটি দেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিরোধী মতকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা দুর্দান্ত প্রতিরক্ষা সচিব পেলাম। আমরা খুব খুশি।’’ অথচ রিপাবলিকান সেনেটর লিসা মুরকোউস্কি মনে করছেন, সামরিক নেতৃত্বের কাছে যে ধরনের মূল্যবোধ প্রত্যাশিত, পিটের আচরণ তার ‘অনেকখানি বিপ্রতীপ’। রিপাবলিকান সেনেটর সুসান কলিন্স একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, রণক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকা নিয়ে পিট তাঁর আগের অবস্থান বদলিয়েছেন বলেও বিশ্বাস হয় না।
২০১৭ সালে পিটের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। তবে চার্জ গঠন হয়নি, পিট অভিযোগকারিণীকে ৫০ হাজার ডলার দিয়ে আপস মীমাংসায় আসেন। সম্প্রতি পিটের প্রাক্তন স্ত্রীর বোন হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, পিট তাঁর স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। স্ত্রী নিজের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত ভীত ছিলেন। পিট নিজে বা প্রাক্তন স্ত্রী সামান্থা অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। বিচ্ছেদের মামলায় এ সব প্রসঙ্গ তোলেননি। পিটের শরীরে আঁকা উল্কি নিয়েও অনেক রকম কথা উঠেছে। সে সব উল্কিতে অতি-দক্ষিণপন্থী খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদী প্রতীক রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, এই জাতীয় বিতর্কিত মতাদর্শের ব্যক্তি প্রতিরক্ষা সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের পক্ষে অনুপযুক্ত।
এর পাশাপাশি আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগও রয়েছে। প্রাক্তন সেনাদের দু’টি সংগঠনের নেতৃত্বে এক সময় ছিলেন পিট— ভেটেরান্স ফর ফ্রিডম এবং কনসার্নড ভেটেরান্স ফর আমেরিকা। সেখানে তাঁর সহকর্মীদের দাবি, সংগঠনের তহবিলকে ব্যক্তিগত তহবিলের মতো ব্যবহার করতেন পিট। আর্থিক কারণেই পরে প্রথম সংগঠনটিকে অন্য একটি সংগঠনের মধ্যে মিশিয়ে দিতে হয়। দ্বিতীয় সংগঠনেও পিটের ভূমিকা প্রশ্নের মুখ পড়েছিল। সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং অলাভজনক চরিত্র তাঁর মেয়াদে টাল খেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল।
তবে প্রতিরক্ষা সচিব পদে যোগ্যতার প্রশ্নে পিটকে প্রত্যক্ষ ভাবে ঝামেলায় ফেলেছে লিঙ্গসাম্য নিয়ে তাঁর রক্ষণশীল মনোভাব এবং পানাসক্তির অভিযোগ। এই নভেম্বর মাসেও তাঁক বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি সোজাসুজি বলছি, মেয়েদের রণক্ষেত্রে কমব্যাটের ভূমিকায় রাখা উচিত নয়। এতে ধারও বাড়ে না, ভারও বাড়ে না। বরং জটিলতা বাড়ে।’’ এখন অবশ্য তিনি দাবি করছেন, তাঁর মতামত বদলিয়েছে। প্রতিরক্ষা সচিব পদে থাকাকালীন অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকবেন বলেও কথা দিয়েছেন। কথা রাখতে না পারলে কী হবে, সেটা অবশ্য বলেননি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy