(বাঁ দিকে) ঋষি সুনক এবং কিয়ের স্টার্মার (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স।
আগামী পাঁচ বছরের জন্য ওয়েস্টমিনস্টারে নিয়ন্ত্রণ যাবে কার হাতে? বৃহস্পতিবার তার রায় দেবেন ব্রিটেনবাসী। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ কমন্স’-এর ৬৫০ আসনের ভোটগ্রহণের পরেই শুরু হয়ে যাবে গণনা।
এ বারের ভোটে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের নেতৃত্বাধীন কনজ়ারভেটিভ পার্টির (টোরি) ভরাডুবি হতে চলেছে বলেই বিভিন্ন জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত। এমনকি, ৪৪ বছরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেতা নর্থ ইয়র্কশায়ারে রিচমন্ডে নিজের ‘গড়ে’ হারতে পারেন বলেও পূর্বাভাস রয়েছে। প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টার্মার।
পাঁচ বছর আগে কনজ়ারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচারে বিপুল সাড়া মিলেছিল। ‘গেট ব্রেক্সিট ডান’ স্লোগানে ভর করে ‘হাউস অফ কমন্স’-এর ৩৬৫টিতে জিতে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন বরিস জনসন। কিন্তু ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সরকারি বাসভবনে আড়াই বছরের বেশি কাটাতে পারেননি তিনি। দলের অন্দরে বিদ্রোহ এবং কোভিভবিধি ভেঙে পানভোজনের আসর বসানোর অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০২২ সালে জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন।
এর পর লিজ় ট্রাসের ৪৯ দিনের প্রধানমন্ত্রিত্ব পর্বের শেষে দলের অন্দরে ভোটাভুটির মাধ্যমে ওয়েস্টমিনস্টারে আসীন হয়েছিলেন ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির জামাই সুনক। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ব্রিটেনে ভোট করাতে হবে। সুনক আগে বলেছিলেন, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে হবে ভোট। কিন্তু গত ২২ জুন হঠাৎই রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আর্জি জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এর পর ৪ জুলাই ভোটের দিন ঘোষিত হয়েছিল।
এ বার অবশ্য সুনকের বিদায় নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। ভোট পণ্ডিতদের বড় অংশ বলছেন, শুধু হার নয়, এ বারের নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বে টোরিরা। জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, লেবার পার্টি ৪০ শতাংশ ভোট পেতে চলেছে। টোরিরা পাবে ২০ শতাংশের সামান্য বেশি। নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী দল রিফর্ম ইউকে পেতে পারে ১৬ শতাংশ ভোট। এ ছাড়া, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-সহ ছোট–বড় প্রায় ৯৮টি রাজনৈতিক দল ভোটে অংশগ্রহণ করছে। মোট চার হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ বারের নির্বাচনে।
ভারতের মতোই ব্রিটেনেও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষার ফল অতীতে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভারতের মতোই বহুদলীয় গণতন্ত্র, জটিল এবং মিশ্র জনবিন্যাস, প্রধান শত্রুকে হারাতে ‘ট্যাকটিক্যাল ভোট’, এ সবই নানা ভাবে কঠিন করে তোলে নির্বাচনী ফলাফলের অনুমান। প্রচারপর্বের শেষবেলায় লেবার পার্টির প্রধান স্টার্মারের একটি বক্তব্যের জেরে বাংলাদেশি-সহ এশীয় বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীতে অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। ‘অভিবাসন বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত এই নেতা গত সপ্তাহে ব্রিটেনে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ।
প্রতিবাদে প্রচারের শেষ পর্বে সে দেশের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এলাকাগুলিতে দেখা গিয়েছে লেবার বিরোধী ভোটদানের আহ্বান। সম্প্রতি গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েল সেনার হানাদারির প্রসঙ্গে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের পক্ষ নিতে দেখা গিয়েছিল স্টার্মারকে। লেবার পার্টির বেশ কিছু মুসলিম নেতা তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে দল ছেড়েছিলেন। এ বার একটি সাক্ষাৎকারে স্টার্মারের ‘বাংলাদেশি অভিবাসন বিরোধী’ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দল ছেড়েছেন লেবার পার্টির নেত্রী সাবিনা ইসলাম। উত্তর, মধ্য এবং পূর্ব লন্ডনে লেবার পার্টির ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসাবে পরিচিত এলাকায় প্রায় ৭০টি আসন রয়েছে। সেখানে এশীয় জনগোষ্ঠীর ভোটারদের সংখ্যা নির্ণায়ক। ফলে শেষবেলায় কিছুটা চিন্তায় লেবাররা।
যদিও ব্রেক্সিট–পরবর্তী সময় থেকে ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যা-সহ সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনের জনগণ বিরক্ত বলে জনমত সমীক্ষাগুলির ইঙ্গিত। তা ছাড়া টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতিও রয়েছে ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী ক্ষোভ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy