মহম্মদ হাবিব জাহির কী ভাবে নিখোঁজ হলেন, নেপাল সে রহস্য এখনও ভেদ করতে পারেনি। —প্রতীকী ছবি।
রাওয়ালপিন্ডি থেকে লাহৌর। সেখান থেকে ওমান হয়ে নেপালের কাঠমান্ডু। তার পর ফের বিমানে ভারত-নেপাল সীমান্ত ঘেঁষা লুম্বিনি। এই লুম্বিনিতে পৌঁছেই হঠাৎ যেন শেষ হয়ে গিয়েছিল পথ। কারণ, তার পর থেকেই আর কোনও খোঁজ মেলেনি পাক সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহম্মদ হাবিব জাহিরের।
পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ লুম্বিনি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাবিব জাহিরকে। কুলভূষণ যাদবকে ছাড়ানোর জন্যই নাকি পণবন্দি করা হয়েছে পাক সেনার ওই প্রাক্তন কর্তাকে। ইসলামাবাদ অন্তত তেমনই বলছে। গত এপ্রিল থেকে নিখোঁজ পাকিস্তানের ওই প্রাক্তন সেনাকর্তা। এত দিন বিষয়টি নিয়ে ভারতের দিকে আঙুল তোলা হয়নি। কুলভূষণ যাদব মামলায় যখন আন্তর্জাতিক আদালতে নাস্তানাবুদ দশা পাকিস্তানের, আঙুলটা তোলা হল ঠিক তখনই। ভারতকে চিঠি দিয়ে মহম্মদ হাবিব জাহিরের বিষয়ে তথ্য চাইল পাকিস্তান। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য জানাচ্ছে, হাবিব জাহিরের বিষয়ে নয়াদিল্লির কাছে কোনও তথ্য নেই।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাবিব পাক সেনার আর্টিলারি বাহিনীর অফিসার ছিলেন। তিনি পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গেও বেশ কিছু দিন কাজ করেছেন। ২০১৪-র অক্টোবরে হাবিব পাক সশস্ত্র বাহিনী থেকে অবসর নেন। অবসরের পর তিনি ফয়সলাবাদের রাফহান মিলসে চাকরি নিয়েছিলেন। ২০১৭-র ৬ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর ছেলে সাদ জাহির রাওয়ালপিন্ডির রাওয়াত থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশকে সাদ জাহির জানান, অন্য একটি সংস্থায় মোটা বেতনের চাকরি পেয়ে নেপাল গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। সেখান থেকেই তিনি নিখোঁজ হয়েছেন।
সাদ ঠিক কী জানিয়েছেন পাক পুলিশকে?
সাদ জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাবিব জাহিরের কাছে ব্রিটেনের একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। স্ট্র্যাটেজিক সলিউশনস কনসালটেন্সি নামে একটি সংস্থায় তাঁকে উচ্চ পদ এবং মোটা বেতনের চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। খুব তাড়াতাড়িই নাকি ই-মেলে অফার লেটার পৌঁছয়। সেই চিঠিতে হাবিব জাহিরকে নাকি জানানো হয়েছিল, জোনাল ডাইরেক্টর হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব নিতে হবে। মাসিক বেতন হবে, ৮ হাজার ৫০০ ডলার। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা। পাকিস্তানি মুদ্রায় প্রায় ৯ লক্ষ টাকা।
লুম্বিনি বিমানবন্দরে নেমে নিজের পরিবারের কাছে এই ছবি পাঠিয়েছিলেন হাবিব জাহির। এই নাকি শেষ যোগাযোগ। ছবি: সংগৃহীত।
পুলিশকে সাদ জাহির জানিয়েছেন, ৪ এপ্রিল লাহৌর গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। পর দিন অর্থাৎ ৫ এপ্রিল তাঁকে ওমান হয়ে নেপাল যাওয়ার বিমানে তুলে দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে নামেন তিনি। সেখান থেকেই বুদ্ধ এয়ারের একটি বিমানে তুলে দেওয়া হয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) মহম্মদ হাবিব জাহিরকে। পুলিশকে সাদ আরও জানিয়েছেন, নেপাল যাত্রার সময় প্রতিটি পদক্ষেপেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন তাঁর বাবা। কখন কোথায় পৌঁছচ্ছেন, তা পরিজনদের জানাচ্ছিলেন। লুম্বিনি বিমানবন্দরে যে তিনি নেমেছেন, সে ছবিও বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, তার পর থেকে আর কোনও খোঁজ নেই হাবিব জাহিরের। যে সংস্থার জোনাল ডিরেক্টর হিসেবে তিনি নেপাল গিয়েছিলেন, সেই সংস্থা হাবিবকে নেপালি নেটওয়ার্কের একটি ফোন নম্বরও দিয়েছিল। সেই নম্বরে নাকি যোগাযোগই করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ২ কিশোরকে পাক বাহিনীর হাতে ফেরাল ভারত
পাক সেনার প্রাক্তন কর্তা তথা প্রাক্তন পাক গুপ্তচরের এ ভাবে নিখোঁজ হওয়ার খবর এপ্রিলেই হইচই ফেলে দিয়েছিল পাক সংবাদমাধ্যমে। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ তাঁকে লুম্বিনি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে জল্পনা ছড়াচ্ছিল সে দেশের মিডিয়ায়। কিন্তু পাক বিদেশ মন্ত্রক সরকারি ভাবে তেমন কোনও অভিযোগ জানায়নি। ভারতের কাছ থেকে কিছু জানতেও চাওয়া হয়নি। নেপালের বিদেশ মন্ত্রকের কাছ থেকেই বরং জানতে চাওয়া হয়েছিল হাবিব জাহিরের বিষয়ে। নয়াদিল্লির নেপালি দূতাবাস ভারতীয় মিডিয়াকে জানিয়েছে, হাবিব জাহিরের বিষয়ে খোঁজখবর চলছে। কিন্তু পাক বিদেশ মন্ত্রক এখন আর নেপালের কাছ থেকে তথ্য পেতে খুব একটা উৎসাহী নয়। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর হাতেই হাবিব জাহির বন্দি বলে নাকি পাক কর্তারা নিশ্চিত। পাক মিডিয়ায় এ বিষয়ে তাঁরা খোলাখুলি মন্তব্যও করেছেন।
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু নেতাজির, জানাল কেন্দ্র
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, কুলভূষণ যাদব মামলায় নাস্তানাবুদ হয়েই এই পথ নিয়েছে পাকিস্তান। তালিবান জঙ্গিরা ইরান থেকে অপহরণ করে কুলভূষণকে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হাতে তুলে দিয়েছিল বলে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর। আন্তর্জাতিক আদালতকেও ভারত জানিয়েছে যে, কুলভূষণকে ইরান থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। এ বার ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান একই রকম অভিযোগ তুলছে। কুলভূষণ মামলায় নতুন প্যাঁচ কষতেই এই নতুন কৌশলে পাকিস্তান, বলছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy