অক্সফোর্ড সিটি সেন্টার। —ছবি : সংগৃহীত
স্বপ্নের শহর অক্সফোর্ড। বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এখানে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেলেমেয়েরা স্বপ্ন ছুঁতে পাড়ি জমায় এই শহরেই। তবে সম্প্রতি একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মধ্যযুগে এই অক্সফোর্ডই ছিল ত্রাস। খুন হত অহরহ। সেই রক্তের দাগ আজও লেগে রয়েছে শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাসের কানাগলিতে।
১২৯৬ সাল। এক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এক যৌনকর্মীকে আনে। প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সহপাঠীদের হাতে তার খুন হয়ে গিয়েছিল। ১৩০৩ সাল। একটি ছাত্র রাস্তায় বল নিয়ে খেলছিল। তিন আইরিশ গবেষক-পড়ুয়ার মুখোমুখি হয় সে। কিশোরের মুখে ও গলায় ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছিল তারা। ১৩২৪ সাল। গ্রীষ্মের রাত। এক পুলিশকর্মীকে তলোয়ার দিয়ে খুন করেছিল একদল ছাত্র।
তিনটি ঘটনাই অক্সফোর্ডের। যে স্থাপত্য দেখে আজ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকেন মানুষ, সেই অক্সফোর্ডই ছিল পড়ুয়া-হিংসার জ্বলন্ত উদাহরণ। লন্ডন বা ইয়র্কের থেকেও বেশি খুন হত এই শহরে। একুশ শতকে ইংল্যান্ডের শহরগুলিতে যে সংখ্যক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে থাকে, মধ্যযুগে হিংসা-হানাহানির সংখ্যা ছিল তার প্রায় ৫০ গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ফুটবল ম্যাচের সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে খুন হয়ে যাওয়া কোনও বিরল ঘটনা ছিল না। এমন নজিরও রয়েছে যে, যৌনকর্মী পারিশ্রমিক চাইতেই তাঁর বুকে ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছে কোনও অক্সফোর্ড-ছাত্র।
মধ্যযুগে গোটা ইংল্যান্ডই অপরাধীদের মুক্তক্ষেত্র ছিল। খুন ও রক্তপাত, অতিপরিচিত ঘটনা ছিল। তবে এর মধ্যে অক্সফোর্ড ছিল বিভীষিকা, এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। ১৪ শতকের গোড়ার দিকে অক্সফোর্ডের জনসংখ্যা ছিল ৭ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১৫০০। ‘দ্য মিডিয়েভাল মার্ডার ম্যাপ’ নামক নতুন গবেষণাটিতে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের খুনের ঘটনাগুলির একটি ‘মানচিত্র’ তৈরি করা হয়েছে। সাতশো বছরের পুরনো অপরাধের ইতিহাস ঘেঁটে হত্যার নানাবিধ ঘটনা, তার নেপথ্যে থাকা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এসেছে দীর্ঘ তদন্তে। অক্সফোর্ডের ক্ষেত্রে দেখা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডগুলিতে ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনও না কোনও পড়ুয়া, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যই খুনি।
খুনের মানচিত্র যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ম্যানুয়েল এসনার। তিনি কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব ক্রিমিনোলজি-র ডিরেক্টর। এসনার বলেন, ‘‘মধ্যযুগে অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর এক মিশ্র পরিস্থিতিতে আবদ্ধ ছিল।’’ তখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বলতে সবই অল্পবয়সি ছেলে। বয়স ১৪ থেকে ২১। এসনার বলেন, ‘‘এক দিকে কম বয়স, অন্য দিকে মদের ফোয়ারা, এক বীভৎস রসায়ন।’’ রক্ষণশীল পরিবার থেকে মুক্তির পরেই বেপরোয়া জীবনের হাতছানি। সে সময়ে হাতে ছুরি, তলোয়ারের মতো অস্ত্র পাওয়া কঠিন কাজ ছিল না। প্রায় সব পড়ুয়ার কাছে কিছু না কিছু হাতিয়ার থাকত। শহরের সরাইখানাগুলো ছিল অপরাধের আখড়া। সেখানে কিংবা যৌনপল্লিতে ছাত্রদের আনাগোনা লেগে থাকত। মদ খেয়ে পথেঘাটে খুন-রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটত প্রায়শই। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন— এক বার একটি ধর্মীয় উৎসবের পরে তিন ছাত্র তির-ধনুক-তলোয়ার নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল। মত্ত অবস্থায় তারা পথচারীদের উপরে হামলা করে। এসনার বলেন, ‘‘সে সময়ও শহর ও মফস্সল থেকে আসা পড়ুয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকত।’’
‘কেমব্রিজ’স ভায়োলেন্স রিসার্চ সেন্টার’-এর নতুন ওয়েবসাইটে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের তিনটি শহরের নথিভুক্ত থাকা যাবতীয় খুনের বিষয়ে বিশদে জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনও উৎসাহী ব্যক্তি যদি চান, নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে খুন, তার নেপথ্যে থাকা কাহিনি, খুনের প্লট, তাতে ব্যবহৃত অস্ত্র— এ বিষয়ে যাবতীয় সব কিছু পড়তে পারেন। তবে অপরাধের মুক্তক্ষেত্র হলেও আইন ঠুনকো ছিল না ইংল্যান্ডে, এমনটাই দাবি এসনারের। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ তখনও তাঁর অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং প্রয়োজনে আইনের দ্বারস্থও হতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy