রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হামলায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে বসতবাড়ি। জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন ইউক্রেনের একটি গ্রামের বাসিন্দারা। ছবি: রয়টার্স।
গত মাসে আজকের দিনেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল রাশিয়া। এক মাসে কার্যত ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে গোটা দেশ। ভিন্দেশে শরণার্থী লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয়। দেশেই আশ্রয়হীন আরও বহু লক্ষ। আজ ইউক্রেন-পরিস্থিতি নিয়ে নেটোর জরুরী বৈঠক বসেছিল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে। বৈঠক শুরুর আগে নেটোর সদস্যদের সামনে ভার্চুয়ালি উপস্থিত হন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। বলেন, ‘‘রাশিয়া কোনও কিছু মানছে না। আরও সামরিক সাহায্য প্রয়োজন। আমাদের বাঁচান।’’ জবাবে বৈঠকে অপ্রত্যাশিত কোনও পদক্ষেপ করেনি নেটো। ইউক্রেনে আরও সামরিক সাহায্য পাঠানোর কথা জানিয়েছে তারা। এবং সেই সঙ্গে ঘোষণা করেছে, জোটের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোকে রক্ষা করতে আরও এককাট্টা নেটো। এই বৈঠক শেষ হতেই বসেছে জি-৭-এর বৈঠক।
বৈঠক শুরুর আগে নেটোর সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জ়েলেনস্কি। এ পর্যন্ত তারা যা যা সাহায্য করেছেন, সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ জানান। আজ আর তাঁর মুখে নেটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়নি। ইউক্রেনের আকাশকে নো-ফ্লাই জ়োন ঘোষণার আবেদনও আর করেননি। তা যে হওয়ার নয়, বুঝে গিয়েছেন জ়েলেনস্কি। আজ বলেন, ‘‘আপনাদের বিমানের ১ শতাংশ আমাদের দিন। ১ শতাংশ ট্যাঙ্ক দিন। ১ শতাংশ চাইছি!’’ তাঁর অভিযোগ, কোনও নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করতে বাকি রাখছে না রাশিয়া। মস্কো নিজেই সম্প্রতি ঘোষণা করেছিল, তারা শব্দের চেয়ে ১০ গুণ গতিসম্পন্ন, অতিশক্তিশালী হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। জ়েলেনস্কির দাবি, ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে রাশিয়া। এটি অনেকটা পাউডারের মতো ছড়িয়ে যায়। অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলেই জ্বলে ওঠে এবং ভয়াবহ ভাবে পুড়িয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘সকালেই এই ফসফরাস বোমা ছুড়েছে রুশ বাহিনী। অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন।’’
রুশ হামলার কড়া নিন্দা করে নেটো জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনকে সাহায্য করে আসছে এই পশ্চিমি জোট। তাদের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়েছে। নেটোর বার্তা, ইউক্রেনকে তারা সাহায্য করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সাইবার-নিরাপত্তা দেবে, রাসায়নিক, জৈব, তেজস্ক্রিয় ও পরমাণু অস্ত্র থেকে নিরাপত্তা দেবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের মানুষকে বাঁচাতে সাহায্য তো করবেই। পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর কথা জানিয়েছে নেটোর সদস্যেরা। রুশ ডুমার ৩২৮ জনকে আজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আমেরিকা। ৪৮টি প্রতিরক্ষা বিষয়ক ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের কথা ঘোষণা করেছে তারা। নেটোর ৩০ সদস্যের প্রত্যেকেই বলেন, ‘‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে বার্তা, অবিলম্বে বন্ধ করা হোক যুদ্ধ। ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করা হোক।’’ বেলারুশকেও এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসার বার্তা দিয়েছে তারা। গত ১৬ মার্চ রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক আদালত রাশিয়াকে হামলা বন্ধের নির্দেশ দেয়। আজ সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে নেটো। তাদের বক্তব্য, ইউক্রেনে হামলার ঘটনায় শুধু সেই দেশই নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে।
নেটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ কাল বলেন, ‘‘ইউক্রেন ছাড়িয়ে এই যুদ্ধ যাতে অন্য কোনও দেশে ছড়িয়ে না-পড়ে, আরও বড় আকার না-নেয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’ ইউরোপ আসলে ভয় পাচ্ছে, ইউক্রেন সীমান্ত ছাড়িয়ে যুদ্ধের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি-সহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে। নেটোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে বলে জানানো হয়েছে বৈঠকে। যেমন, পূর্ব ঘেঁষে ৪০ হাজার বাহিনী নিয়োগ করা হবে। আকাশপথে ও নৌপথে সামরিক মহড়া বাড়বে। ইউক্রেন-পার্শ্ববর্তী বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ায় অতিরিক্ত সেনাদল তৈরি করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy