অতীতে উদ্বাস্তু শিবিরে থাকা মেয়েটি জানত না কোথা থেকে আসবে রাতের খাবার। দীর্ঘদিন স্বাদ পায়নি পরিস্রুত পানীয় জলের। এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে পৌঁছনোর প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষা করত অনিশ্চয়তা। আজ, তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে বিশ্বের সেরা ফ্যাশন পত্রিকাগুলি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:৩৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১২
‘আমেরিকায় অপেক্ষা করে আছে স্বপ্নের জীবন’— ভাবত খিদের জ্বালায় অস্থির মেয়েটি। প্রথমে কেনিয়া, তারপর ইথিয়োপিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরে বসে। গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত সুদান থেকে পালিয়ে আসার পথে উদ্বাস্তু শিবিরে কেটেছিল শৈশবের অনেকটাই।
০২১২
একদিন আমেরিকায় পৌঁছনো গেল। সেইসঙ্গে চুরমার হয়ে গেল যাবতীয় আশা-ভরসা। ভালভাবে থাকা তো দূর অস্ত্। সেখানে সমাজ তো গ্রহণ করতেই নারাজ বালিকাকে। কারণ, সে যে ঘোর কৃষ্ণাঙ্গী।
০৩১২
শ্বেতাঙ্গ প্রধান দেশে এসে সুদানের কিশোরী ন্যাকিম গাটওয়েক জীবনে প্রথম জানল কাকে বলে বর্ণবিদ্বেষ। প্রতি মুহূর্তে তাঁর মনে হত, সে এই দেশের নয়।
০৪১২
স্কুলে গিয়ে আরও প্রকট হল সমস্যা। প্রথমত ইংরেজি বুঝতে বা বলতে না পেরে নিজেকে গুটিয়ে রাখত। ইংরেজি বুঝতে শেখার পরে আরও গভীর হল ক্ষত। কারণ বালিকা শুনল, বন্ধুরা তাকে স্নান করতে বলছে! তাতে যদি গায়ের ময়লা কিছুটা দূর হয়!
০৫১২
এই বক্রোক্তি শুনতে শুনতেই বড় হওয়া। আজ ন্যাকিম প্রথম সারির মডেল। মডেলিং করেছেন আন্তর্জাতিক মানের ব্র্যান্ডের জন্য। যে রঙের জন্য বিদ্রূপ সহ্য করতে হত, এখন সেটাই তাঁর তুরূপের তাস।
০৬১২
সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডিং ন্যাকিমের ছবি। ইনস্টাগ্রামের অনুরাগীর সংখ্যা কুড়ি হাজার থেকে রাতারাতি পৌঁছেছে সাড়ে তিন লক্ষের কাছাকাছি। ন্যাকিমকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান বিশ্বের নানা প্রান্তের অসংখ্য ভক্ত। মিনেসোটার বাসিন্দা ন্যাকিমকে অনেকেই বলেন, ‘অন্ধকারের রানি’। সেটাও তাঁর কাছে প্রশংসা। অপমান নয়।
০৭১২
৭।সাফল্যের মাঝেও ফিরে আসে অতীতের অপমানের দগদগে ক্ষত। যখন আংশিক সময়ের শিক্ষকতা আর টুকটাক মডেলিং করে জীবিকা নির্বাহ করতে হত। আরও মনে পড়ে, একদিন অ্যাপক্যাব চালক তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ব্লিচ করানোর! চালককে যাত্রী পাল্টা বলেছিলেন, তিনি যেমন, তাতেই তিনি খুশি।
০৮১২
অথচ অতীতে একদিন ন্যাকিম-ই ভেবেছিলেন ব্লিচ করাবেন বলে। তখন তাঁকে বুঝিয়েছিলেন তাঁর বোন। বোনের কথায় ব্লিচ করানোর ভাবনা থেকে সরে এসেছিলেন ন্যাকিম।
০৯১২
আজ নিজের জীবন নিয়ে খুশি ন্যাকিম। সৃষ্টিকর্তার প্রতিও কোনও অভিযোগ নেই। একদিন যে সমাজে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, আজ তাঁরাই সাদরে আপ্যায়ন করেছে তাঁকে।
১০১২
অতীতে উদ্বাস্তু শিবিরে থাকা মেয়েটি জানত না কোথা থেকে আসবে রাতের খাবার। দীর্ঘদিন স্বাদ পায়নি পরিস্রুত পানীয় জলের। এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে পৌঁছনোর প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষা করত অনিশ্চয়তা। আজ, তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে বিশ্বের সেরা ফ্যাশন পত্রিকাগুলি।
১১১২
যশ-খ্যাতি-অর্থ সব পেয়েছেন ন্যাকিম। তবে জানিয়েছেন, তাঁর জীবনের সেরা পুরস্কার হল সেই কিশোরীরা। যারা তাঁকে দেখে নিজেদের ঘোর কৃষ্ণবর্ণকে ভালবাসতে পেরেছে। অপমান ভুলে নতুন করে বাঁচতে শিখেছে।
১২১২
ন্যাকিমের অন্যরকম লুক এখন ফ্যাশন দুনিয়ায় চাহিদার তুঙ্গে। নিজের চেহারা নিয়ে রসিকতাও করেন এই সুদানিজ সুন্দরী। বলেন, তাঁর ত্বক সূর্যরশ্মি বেশি শোষণ করে। আর একমাথা ঝাঁকড়া চুল? তারা নাকি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি মানে না। তাই সবসময় উঁচু হয়ে থাকে। নিজেকে ভালবেসে এভাবেই কালো নিয়ে মানুষের মনের কালোকে দূর করে যেতে চান এই অন্ধকারের রানি। (ছবি: ফেসবুক)