সামনেই শীতকালীন অলিম্পিক বেজিংয়ে। অলিম্পিক্স টাওয়ারের কাছে বরফে ঢাকা পার্কে চলছে হইচই। রয়টার্স
এত করেও শেষরক্ষা হল না। বেজিংয়ে ঢুকে পড়ল করোনার ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট। দেশকে করোনা-শূন্য করতে বদ্ধপরিকর চিন কড়াকড়ির সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কোনও অঞ্চলে সংক্রমণ ধরা পড়লেই বাসিন্দাদের তুলে নিয়ে গিয়ে দু’-তিন সপ্তাহের জন্য কোয়রান্টিন ক্যাম্পে ‘বন্দি’ করা হচ্ছে। সংক্রমণে আশঙ্কায় কোভিড-শূন্য অঞ্চলেও লকডাউন করে রাখা হচ্ছে। রাজধানী বেজিংকে প্রায় গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল সরকার। সামনেই এই শহরে শীতকালীন অলিম্পিক্স শুরুর কথা। ওমিক্রন নিয়ে সদা-সতর্ক ছিল সরকার। কিন্তু এত করেও অলিম্পিক্স শুরুর তিন সপ্তাহ আগে ওমিক্রন ঢুকেই পড়ল বেজিংয়ে।
শনিবার প্রথম ওমিক্রন সংক্রমণটি ধরা পড়েছে বেজিংয়ে। সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন জারি করা হয়েছে শহরের নির্দিষ্ট এলাকায়। শুরু হয়েছে গণ-পরীক্ষা। বেজিং সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংক্রমিত ব্যক্তির বাড়ি ও অফিস চত্বর ঘিরে ফেলেছে সরকারি সেনা। ওই অঞ্চলে থাকা ২৪৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
বেজিং চিনের রাজনৈতিক কেন্দ্র। দেশের শীর্ষনেতাদের আবাস এই শহর। সেই চিন্তাও রয়েছে প্রশাসনের। তা ছাড়া, অলিম্পিক্স শুরুর আগে একে একে বিভিন্ন দেশ থেকে অ্যাথলিট আসা শুরু হয়ে যাচ্ছে। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বসবে শীতকালীন অলিম্পিক্সের আসর। বিদেশ থেকে এত মানুষ আসবেন, সে ক্ষেত্রেই বা কী করে ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। বেজিং মিউনিসিপালিটির মুখপাত্র শু হেজিয়াং বলেন, ‘‘নতুন ওমিক্রন সংক্রমণের খবরটি বিপদ-সঙ্কেত।’’
সামনেই লুনার নিউ ইয়ার। এ সময়ে বিদেশে থাকা চিনা নাগরিকেরা দেশে ফেরেন, পরিবারের সঙ্গে উৎসবে যোগ দেন। চিনের পর্যটনের সবচেয়ে বড় মরসুম এটি। সরকারের নির্দেশে সে সব আগে থেকেই বন্ধ। বহু আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা বা দেশের ভিতরের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ রয়েছে, এমন কোনও এলাকা থেকে বেজিংয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। এ হেন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও ভেঙে ঢুকে পড়ল অপ্রতিরোধ্য স্ট্রেন ওমিক্রন।
বিশ্বের অন্য প্রান্তে অবশ্য ওমিক্রন-ঝড়ের গতি ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। সে বার্তা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেন-সহ বিশ্বের একাধিক দেশ। আমেরিকাও একই ইঙ্গিত দিয়েছে। আজ নিউ ইয়র্কের প্রাদেশিক প্রশাসনও ঘোষণা করল, আমেরিকায় সংক্রমণের ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা এই প্রদেশে ওমিক্রনের আক্রোশ কমেছে ৪৭ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞেরা গোড়া থেকেই বলে আসছেন, যত দ্রুত ওমিক্রন-সংক্রমণ বেড়েছে, তত দ্রুতই এটি কমবে। নিউ ইয়র্কের সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৯ জানুয়ারি শীর্ষ ছুঁয়েছিল সংক্রমণ। তার পর থেকে কমতে শুরু করেছে ওমিক্রনের দাপট। নিউ জার্সি, ম্যাসাচুসেটস, কানেক্টিকাট, রোড আইল্যান্ডেও ওমিক্রনের একই গতিপ্রকৃতি লক্ষ করা যাচ্ছে। নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, ‘‘এই শীতের মতো সংক্রমণ ঢেউের দাপট শেষের পথে। কিন্তু অতিমারি শেষ হয়নি। টিকা নিতে থাকুন। বুস্টার নিতে থাকুন। বাচ্চাদের টিকাকরণ জরুরী। কাপড়ের মাস্ক নয়, মেডিক্যাল মাস্ক পরুন। এত পরিশ্রম করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে, একে ব্যর্থ হতে দেবেন না।’’
ওমিক্রনের দাপটে আমেরিকায় দৈনিক সংক্রমণ বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। এক দিনে কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়েছিল ১৩ লক্ষ বাসিন্দার। সেই তুলনায় সংক্রমণ কমেছে। তাতেও গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ লক্ষের বেশি মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন আরও ১০২৮ জন। এই নিয়ে সে দেশে কোভিডে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮,৭৩,১৪৯। মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৬ কোটি ৬৬ লক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy