ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে এই দৃশ্যও, যেখানে এক গবেষকের টুপির উপর ঝুলে রয়েছে বাদুড়। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
নোভেল করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে চিনকে আড়াল করার অভিযোগ আগেই উঠেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বার তাদের বিরুদ্ধে রীতিমতো মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠছে, যার নেপথ্যে রয়েছে পুরনো একটি ভিডিয়ো, যাতে দেখা গিয়েছে, উহানের গবেষণাগারে একঝাঁক জ্যান্ত বাদুড় খাঁচায় ভরে রাখা হয়েছে। তাদের শরীর থেকে নানা ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন গবেষকরা। অথচ এর আগে, হু জানিয়েছিল, উহানের গবেষণাগারে জ্যান্ত বাদুড় নিয়ে কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়নি। তাতেই নতুন করে প্রশ্নের মুখে হু-র ভূমিকা।
বিগত দেড় বছর ধরে গোটা বিশ্ব অতিমারির কবলে থাকলেও, মারণ ভাইরাসের উৎস নিয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি গবেষকরা। তবে বাদুড়ের শরীরে ইতিমধ্যেই এই সার্স কোভিড ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকেই মানুষের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করেছে বলে মত গবেষকদের একটা বড় অংশের। তাঁদের মতে, জ্যান্ত বাদুড় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে উহানের ওই গবেষণাগার থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট জোরালো। সে নিয়ে একাধিক বার চিনকে কাঠগড়ায় তুলেছে আমেরিকা-সহ বহু দেশ। কিন্তু বেজিংয়ের তরফে বরাবরই তা অস্বীকার করা হয়েছে।
তার মধ্যেই সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার খবরের চ্যানেল ‘স্কাইনিউজ’-এর তরফে কয়েক বছর আগের একটি ভিডিয়ো সামনে আনা হয়েছে। ২০১৭ সালে মে মাসে উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষণাগারে চারস্তরীয় জৈব নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। চিনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর তরফে তার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়, যাতে দেখা যায়, খাঁচায় ভরে রাখা হয়েছে একঝাঁক জ্যান্ত বাদুড়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা বিশেষ পোশাক পরে বাদুড়গুলিকে চিমটি দিয়ে পোকা খাওয়াচ্ছেন গবেষকরা। একজনের টুপির উপর ঝুলে রয়েছে একটি বাদুড়। নিরাপত্তা মেনে কী ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়, সে কথা ভিডিয়োয় তুলে ধরা হয়।
এই ভিডিয়ো সামনে আসার পরই করোনার উৎস নিয়ে তদন্ত করতে যাওয়া হু-র গবেষকদের বিবৃতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উহানের ওই গবেষণাগারে যে তদন্তকারী দল পাঠিয়েছিল হু, তাতে শামিল ছিলেন প্রাণীবিদ পিটার দ্যাজাকও। উহানের ওই গবেষণাগারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠছে, তা ষড়যন্ত্র বলে সেই সময় উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ২০২০-র ডিসেম্বরে টুইটারে আলাদা করে লেখেন, ‘জেনেটিক পরীক্ষার জন্য উহানের গবেষণাগারে কোনও বাদুড় পাঠানো হয়নি। বিজ্ঞানের কাজ অন্যরকম। বাদুড়ের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠানো হয়। যেখানে বাদুড় ধরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেখানেই বাদুড়গুলিকে ছেড়ে দেওয়াই নিয়ম।’
অন্য একটি টুইটে পিটার লেখেন, ‘উহানের গবেষণাগারে বাদুড় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার তত্ত্ব ষড়যন্ত্রমূলক ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন গবেষণাগারের সঙ্গে কাজ করছি, গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছি। ওই গবেষণাগারে কোনও জ্যান্ত বাদুড় নেই। জ্যান্ত বাদুড় নিয়ে সেখানে গবেষণা হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণও মেলেনি। এটা একটা ভুল ধারণা। আশাকরি তা শুধরে নেওয়া হবে।’ পরে যদিও নিজের মন্তব্য থেকে সরে আসেন পিটার। জ্যান্ত বাদুড় নিয়ে কখনও পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে কি না, তা উহানের গবেষকদের তিনি জিজ্ঞেসই করেননি বলে জানান পিটার। তার পরেই অতিমারির উৎস নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা ‘ড্রাস্টিক’ পুরনো ওই ভিডিয়োটি হাতে পায়। অস্ট্রেলিয়ার একটি চ্যানেলে সেটি সম্প্রচারিত হওয়ার পরই শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
গোটা ঘটনায় হু-র ভূমিকা নিয়ে নতুন করে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। কিন্তু জ্যান্ত বাদুড় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা আবারও অস্বীকার করেছেন উহানের ওই গবেষণাগারের অন্যতম প্রধান ভাইরোলজিস্ট শি ঝেঙ্গলি। করোনাভাইরাস নিয়ে এই মুহূর্তে গবেষণা করছেন তিনি। উহানের গবেষণাগারে জ্যান্ত বাদুড় নিয়ে বিপজ্জনক ভাবে তাঁর বিরুদ্ধেই পরীক্ষা নিরীক্ষায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগে আমেরিকার ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শি বলেন, ‘‘কী ভাবে প্রমাণ দেব আমি? যা কখনও হয়নি, তার প্রমাণ কী করে জোগাড় করব? জানি না গোটা বিশ্ব কিসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। কোন যুক্তিতে বিজ্ঞানীদের কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে, জানি না।’’ যদিও চিন সরকার উহানের গবেষণাগারে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কোনও সংস্থাকে তদন্ত করতে না দেওয়ায় শি-র দাবি মানতে নারাজ অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy