Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Indian Rebellion of 1857

এডিনবরার ফলক বদলাবেন বঙ্গতনয়

কী ছিল সেই ফলকে? দুর্গ-চত্বরেই রয়েছে আকাশচুম্বী ‘ইন্ডিয়া ক্রস’। ১৮৫৭-র ভারতীয় সিপাহি বিদ্রোহ দমনে অংশ নিয়েছিলেন যে-সব ব্রিটিশ সেনা, তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়েই তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়া ক্রস।

বিবেক মজুমদার

বিবেক মজুমদার

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০ ০৫:২৪
Share: Save:

নতুন ভাবে ভারতীয় ইতিহাসের আখ্যান লিখতে বসেছে ব্রিটেনের একটি পুরাতাত্ত্বিক সংস্থা। সৌজন্যে, এক তরুণ বঙ্গতনয়।

এডিনবরা দুর্গে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই ফলকটি চোখে পড়েছিল বিবেক মজুমদারের। বছর ছাব্বিশের বিবেক পেশায় চিকিৎসক, থাকেন এডিনবরারই মার্চমন্ট এলাকায়। শহরের অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্যস্থান এডিনবরা দুর্গের গায়ে লেখা ১৮৫৭-র সিপাহি বিদ্রোহের গল্পটা বেশ আপত্তিজনক লেগেছিল তাঁর। তখনই চিঠি লেখেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ফলও মিলেছে হাতেনাতে। জানানো হয়েছে, সরিয়ে দেওয়া হবে সেই ‘আপত্তিকর’ ফলক।

কী ছিল সেই ফলকে? দুর্গ-চত্বরেই রয়েছে আকাশচুম্বী ‘ইন্ডিয়া ক্রস’। ১৮৫৭-র ভারতীয় সিপাহি বিদ্রোহ দমনে অংশ নিয়েছিলেন যে-সব ব্রিটিশ সেনা, তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়েই তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়া ক্রস। সেই সৌধেরই নীচের দিকে এক ফলকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কী ভাবে ‘নায়কের’ মতো যুদ্ধ করে লখনউকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করেছিল। যা পড়েই অত্যন্ত চটে যান বিবেক। ‘ইতিহাস বিকৃতির’ অভিযোগ তুলে ই-মেল করেন ‘হিস্টোরিক এনভায়রনমেন্ট স্কটল্যান্ড’-কে। এই সংগঠনই এডিনবরা দুর্গের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। বিবেকের কথায়, ‘‘ওই ফলকে সিপাহি বিদ্রোহ সম্পর্কে যা লেখা হয়েছিল তা একপেশে, কারণ সেটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা। খুবই হেয় করে দেখানো হয়েছে ভারতীয় সেনার কৃতিত্বকে। ভারতীয় সেনার এই অমর্যাদা মেনে নিতে পারিনি।’’

বিতর্কিত সেই ফলক। —নিজস্ব চিত্র।

বিরক্তি ও রাগ নিয়ে লেখা ই-মেলটির যে এত তাড়াতাড়ি উত্তর আসবে, তা অবশ্য প্রত্যাশা করেননি তরুণ চিকিৎসক। এক সপ্তাহের মধ্যে পাঠানো জবাবি মেলে সংগঠনটির তরফে বিবেককে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে তাঁরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, যত দ্রুত সম্ভব ফলকটি সরিয়ে দিয়ে একটি নতুন ফলক লাগানো হবে। ভারতীয় সিপাহি বিদ্রোহের যথাযথ ও সংশোধিত ব্যাখ্যা থাকবে এডিনবরা দুর্গের সেই নতুন ফলকে। উল্লেখ থাকবে ভারতীয় সেনাদের বীরত্বের প্রসঙ্গও।

ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের মতে, ইতিহাসকে কখনওই একমাত্রিক চোখে দেখা যায় না। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়। মনে রাখতে হবে, এ দেশের ইতিহাসবিদেরা অনেকেই সিপাহি বিদ্রোহের মধ্যে স্বাধীনতার যুদ্ধকে দেখলেও তাতে জাতীয়তাবোধের স্ফুরণ ঠিক খুঁজে পান না। তবে স্কটিশ সংস্থাটির অবস্থানে পরিণতমনস্কতাই দেখছেন রজতবাবু। তাঁর মতে, ‘‘ভারত দক্ষিণ এশিয়ার বড় শক্তি। ব্রিটেনের বন্ধু দেশ। তা ছাড়া, ভারতীয়রা ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। তাই ভারতীয় ভাবাবেগকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ সংখ্যালঘুদের প্রতি এই সংবেদনশীলতা ভারতেরও শেখার আছে বলে মনে করেন রজতবাবু। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশীয় ইতিহাসের অধ্যাপক ক্রিসপিন বেটসও বলছেন, ‘‘আসলে সিপাহি বিদ্রোহকে ব্রিটিশরা বরাবরই নিজেদের বিশাল সাফল্য বলে মনে করে এসেছে। উল্টো দিকে, ভারতীয়েরা কিন্তু প্রথম থেকেই এই বিদ্রোহকে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ বলে মনে করেন।’’

বিবেকের কথায়, ‘‘স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ঔপনিবেশিকতাকে মহিমান্বিত করাটা খুব বিরল নয়। কিন্তু সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যে ভাবে ওই ফলকে নির্লজ্জ ভাবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদকে গৌরবান্বিত করা হয়েছিল, কা কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি।’’ তাঁর এই প্রচেষ্টার খবর প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল স্থানীয় কিছু স্কটিশ সংবাদপত্রে। তার পরে ব্রিটেনের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকও এই ‘ইতিহাস পুনর্লিখনের’ খবর প্রকাশ করেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy