Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Queen Elizabeth II

রানি হওয়ার কথা ছিল না, সাত দশক ধরে সেই এলিজাবেথই ব্রিটেনের সিংহাসন উজ্জ্বল করে গেলেন

রানি হওয়ার কথা তাঁর ছিল না কখনও। নেহাতই সমাপতন। তাঁর বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট, ডিউক অব ইয়র্ক ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জের ছোট ছেলে। বড় ছেলে অষ্টম এডওয়ার্ডের রাজা হওয়ার কথা ছিল।

মাত্র ২৫ বছর বয়সে রানি হয়েছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

মাত্র ২৫ বছর বয়সে রানি হয়েছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

নিলোভনা চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:১৬
Share: Save:

২০১৫ সালেই রানি ভিক্টোরিয়ার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর আগে এত দীর্ঘ সময় কেউ ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেননি। ব্রিটেনের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হিসাবে তাঁর কার্যকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছেন ১৫ জন। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন ১৪ জন। ব্রিটেনবাসীর কাছে ‘রানি আর রাজতন্ত্র এখন সমার্থক’। এ কথা মাস কয়েক আগে বলেছিলেন খোদ রাজতন্ত্রেরই কট্টর সমালোচক গ্রাহাম স্মিথ।

১৯৫৩ সালের ২ জুন অভিষেক হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। গ্রেট ব্রিটেন এবং উত্তর আয়ার্ল্যান্ডের রাজদণ্ড হাতে তুলে নেন তিনি। যদিও রানি হওয়ার কথা তাঁর ছিল না কখনও। নেহাতই সমাপতন। তাঁর বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট, ডিউক অব ইয়র্ক ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জের ছোট ছেলে। বড় ছেলে অষ্টম এডওয়ার্ডের রাজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক বিবাহ-বিচ্ছিন্নাকে বিয়ে করার কারণে রাজা হতে পারেননি। ১৯৩৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ব্রিটেনের রাজা হন এলিজাবেথের বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট।

যৌবনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

যৌবনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

বড় মেয়ে হিসাবে সিংহাসনের দাবিদার তখন এলিজাবেথ। মেয়ের প্রশিক্ষণের উপর কড়া নজর রাখতে শুরু করেন রানি এলিজাবেথ বাওয়েস-লিওন। বাড়িতে এসে তাঁকে ইতিহাস, ভাষা, সঙ্গীতের পাঠ দিতেন বিখ্যাত শিক্ষকরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এলিজাবেথ আর বোন মার্গারেটকে লন্ডনের বাইরে স্কটল্যান্ড এবং উইন্ডসরে পাঠিয়ে দেন রাজা।

১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর দূরের এক তুতো ভাই লেফটেনান্ট ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে বিয়ে হয় এলিজাবেথের। পরের বছর ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর জন্ম হয় প্রথম সন্তান প্রিন্স চার্লসের। ১৯৫১ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজা অ্যালবার্ট। তখন থেকে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করে স্বামীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যেতে শুরু করেছিলেন এলিজাবেথ।

১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফরে বেরিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপ। পথে কেনিয়া নেমেছিলেন। সেখানেই রাজার মৃত্যুর খবর পান। তড়িঘড়ি দেশে ফিরে আসেন এলিজাবেথ। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫।

ছেলে চার্লসের সঙ্গে রানি।

ছেলে চার্লসের সঙ্গে রানি।

শোক করার আর সময় পাননি তরুণী রানি। তত দিনে প্রথম ছেলে চার্লসের পর একমাত্র মেয়ে প্রিন্সেস অ্যানের জন্ম দিয়েছেন। দুই শিশু সন্তানকে দেশে রেখেই ১৯৫৩ সালের নভেম্বরে ছ’মাসের জন্য কমলওয়েলথভুক্ত দেশের সফরে বেরিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। সঙ্গে স্বামী ডিউক অব এডিনবরা, ফিলিপ। শিশু সন্তানদের অবহেলা করেছেন, এই অভিযোগ বার বার উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন। সব সময় পাশে থাকেননি স্বামীও। বাবার আদরের লিলিবেথ অবশ্য কর্তব্যকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন বরাবর।

১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড দিয়ে এলিজাবেথের ছ’মাসের কমনওয়েলথ সফর শুরু। এলিজাবেথের আগে ব্রিটেনের অন্য কোনও শাসক ওই দুই দেশে যাননি। ১৯৬১ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ সফরে এসেছিলেন রানি। তার আগে ৫০ বছর ব্রিটেনের কোনও শাসক এদেশে পা রাখেননি। এলিজাবেথের আগে কোনও ব্রিটিশ শাসক দক্ষিণ আমেরিকাতেও যাননি। সে দিক থেকে পূর্বতন ব্রিটিশ শাসকদের রক্ষণশীলতা অনেকটাই ভেঙেছিলেন রানি।

ডায়নার মৃত্যুর পর রানির বিরুদ্ধে সমালোচনার বহর আরও বেড়ে গিয়েছিল।

ডায়নার মৃত্যুর পর রানির বিরুদ্ধে সমালোচনার বহর আরও বেড়ে গিয়েছিল।

তা বলে নিজের কার্যকালে কম সমালোচনার মুখে পড়েননি এলিজাবেথ। না চাইতেও জড়িয়েছেন বহু বিতর্কে। বার বার অভিযোগ উঠেছে, স্বামী ডিউক অব এডিনবরার অনেক ভুলই চোখে দেখেও দেখেননি। স্রেফ এড়িয়ে গিয়েছেন। মায়ের ভূমিকাতেও ব্যর্থ, অভিযোগ তেমনটাই। নিজের বিয়ে টিকিয়ে রাখলেও চার সন্তানের মধ্যে তিন জনেরই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। সেই দায়ও ঠারেঠোরে তাঁর উপরেই চাপিয়েছেন সমালোচকরা। বলেছেন, মা-বাবাকে কাছে না পেয়েই পরিবার কেমন হয়, বুঝতে পারেননি প্রিন্স চার্লস, প্রিন্সেস অ্যান এবং প্রিন্স অ্যান্ড্রিউ।

১৯৯৭ সালে যুবরানী ডায়নার মৃত্যুর পর রানির বিরুদ্ধে সমালোচনার বহর আরও বেড়ে গিয়েছিল। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই মুখে কুলুপ এঁটে এড়িয়ে গিয়েছিলেন যাবতীয় সমালোচনা। তার পর কালের নিয়মে থেমে গিয়েছে সব। জীবদ্দশায় কোনও দিন সংবাদ মাধ্যমকে কোনও সাক্ষাৎকার দেননি। ১৯৯৭ সালে শুধু এক বার একটি ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘রাজনীতিকরা ব্যালট বাক্সে প্রত্যাখাত হন। আর আমাদের, রাজ পরিবারের সদস্যদের জন্য এই প্রত্যাখানের বার্তাটা অনেক কঠিন।’’

এ বছরই রানির সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পূর্তি হয়েছে। তবে উৎসব হলেও ঔজ্জ্বল্য ছিল না। কারণ ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল মারা গিয়েছিলেন ডিউক অব এডিনবরা। রানির অভিষেকের ৭০ বছর পূর্তিতেও বিতর্ক রানির পিছু ছাড়েনি। সংবাদ মাধ্যমের দাবি, চার সন্তানের মধ্যে রানির সব থেকে প্রিয় যুবরাজ অ্যান্ড্রু। সেই যুবরাজের বিরুদ্ধে আমেরিকায় যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে সামরিক খেতাব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। হারিয়েছেন রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা।

বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। ছোট নাতি যুবরাজ হ্যারির স্ত্রী মেগান বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ এনেছেন রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে। রাজ পরিবারের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে আমেরিকায় থিতু হয়েছেন হ্যারি। এই নিয়েও একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। করদাতাদের টাকায় এত অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা কেন পাবেন রাজ পরিবারের সদস্যরা, এলিজাবেথের রানি হওয়ার ৭০ বছরে সেই প্রশ্নও উঠেছে। সেই নিয়েও কোনও কথা বলেননি। আর বলবেনও না। সব প্রশ্ন রেখেই ৯৬ বছরে চলে গেলেন লিলিবেথ।

অন্য বিষয়গুলি:

Queen Elizabeth II Buckingham Palace
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy