অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার দুফলো।
এত দিন তেমন করে বোঝেননি। এই নোবেলের শহরে পা দিয়ে বিশ্বের সেরা পুরস্কার জয়ের ব্যাপারটা ভাল ভাবে মালুম হচ্ছে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার দুফলোর। তাই ‘দারুণ ভাল’ লাগছে স্টকহলম আর স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে নোবেল জেতার ব্যাপারটা তো ‘ভেরি স্পেশ্যাল’।
এস্থারের পক্ষে নোবেল জয়টা আরও একটু স্পেশ্যাল। কারণ, সবচেয়ে কম বয়সে অর্থনীতির নোবেল পেয়েছেন তিনি। তা-ও আবার মাত্র দ্বিতীয় মহিলা হিসেবে। ফলে একটা ছোটখাটো পারিবারিক রি-ইউনিয়নই হতে চলেছে এই স্টকহলমে। সাত আর পাঁচ বছরের দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন অভিজিৎ-এস্থার। এসে গিয়েছে এস্থারের পরিবার। অভিজিতের মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভাই অনিরুদ্ধের আসার কথা আজ রাতে।
দশ তারিখ, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিনে বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতির হাতে অর্থনীতির নোবেল তুলে দেবেন সুইডেনের রাজা। তাঁদের সঙ্গেই পুরস্কার পাবেন আব্দুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব (জে-ল্যাব)-এর সহযোগী গবেষক মাইকেল ক্রেমার। পুরস্কারের মোট অর্থমূল্য ৯০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনা। তিন নোবেলজয়ীই ঠিক করেছেন, পুরস্কারের টাকাটা গবেষণার কাজে লাগাবেন। ‘‘গুগ্লিয়েলমো মার্কনি তাঁর নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়ে এক গ্রাম রেডিয়াম কিনেছিলেন, যাতে আরও গবেষণা করতে পারেন,’’ বললেন এস্থার। ‘‘আমরা ভাবলাম, অর্থনীতিতে এক গ্রাম রেডিয়ামের সমতুল কী হতে পারে? তার পর ঠিক করেছি, আমাদের র্যান্ডমাইজ়ড কন্ট্রোল ট্রায়াল (আরসিটি) ঘিরে যে আন্দোলন তৈরি হয়েছে, তার জন্য টাকাটা খরচ করব। কেননা, আমাদের থেকে এই আন্দোলনটা অনেক বড়। আমরা এই আন্দোলনটাকে লালনপালন করতে চাই। এই সংক্রান্ত গবেষণার জন্য একটা ফান্ড তৈরি করতে চাই। টাকা দিতে চাই আরও অন্তত এক ডজন গবেষণা প্রকল্পে।’’
ভারতে কি তাঁদের আরসিটি প্রকল্পের সংখ্যা বাড়াতে চান তাঁরা? অভিজিতের জবাব, ‘‘আমরা নিজের থেকে কোনও প্রশাসনকে গিয়ে বললাম যে আমাদের এই নীতিটা তোমরা অনুসরণ কর, এমন ঘটনা খুবই বিরল। আমাদের যদি কেউ কাজ করতে ডাকেন, সাধারণ ভাবে তখনই আমরা যাই। আশা করি, আমাদের কাজের একটা চাহিদা তৈরি হবে এবং তখন আমরা সেই চাহিদার প্রয়োজনে সাড়া দেব।’’
নোবেল জয়ের ঘোষণার পরেই দেড় দিনের জন্য কলকাতা ঘুরে এসেছেন অভিজিৎ। তখনই বলেছিলেন, পরের বার এস্থার আসবেন। কিন্তু এ বারও তাঁর যাওয়া হয়ে উঠছে না। এস্থার বললেন, ‘‘কলকাতায় যেতে আমি খুবই ভালবাসি। আমার প্রথম কাজ আমি ওখানেই করেছিলাম এবং দারিদ্র কী সে ব্যাপারে আমার চোখ খুলে দিয়েছিল কলকাতা। ...আমি আশা করি, শহরের যে চরিত্র, সেটা একই রকম থাকবে। আপনি একটা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, হঠাৎ দেখলেন একটা পুরনো বাড়ি। ঠিক যেন শান্তি আর বিক্ষোভের সহাবস্থান। কলকাতার রাস্তায় যে প্রাণটা আছে, সেটা ভারতের অন্য শহরে আমি পাইনি। আমার মনে হয়, সেটা কলকাতার নিজস্ব স্থাপত্যের জন্য এবং সেটাকে রক্ষা করা হবে।’’
আপাতত অবশ্য স্টকহলম এবং আগামী কয়েক দিনের ব্যস্ততা নিয়েই মগ্ন অভিজিতেরা। আজ সকালে অন্য নোবেলজয়ীদের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে অনেকটা সময় কেটেছে। তার পর একের পর এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পত্রপত্রিকাকে। কাল স্টকহলম বিশ্ববিদ্যালয়ে নোবেলজয়ীদের আলাদা আলাদা বক্তৃতা। তার পর ১০ তারিখ সন্ধ্যায় স্টকহলম কনসার্ট হলে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
পুরস্কার প্রদান পর্ব মেটার পরেও কয়েকটা দিন স্টকহলমে কাটাবেন অভিজিতেরা। আলো আর অন্তর্দৃষ্টির দিশারী সেন্ট লুসিয়ার স্মরণে ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ ছোট ছোট মেয়েরা মাথায় মোমবাতির মুকুট পরে ভোরবেলা নোবেলজয়ীদের ঘুম ভাঙাবে— এমনটাই প্রথা। ‘‘আমাদের এখনও কিছু বলা হয়নি,’’ হাসতে হাসতে বললেন এস্থার। ‘‘তবে সম্ভবত না-ই বলব,’’ বলছেন অভিজিৎ, ‘‘একটা কারণ, বাচ্চারা সম্ভবত ভয় পাবে।” আর দ্বিতীয় কারণটা বোধহয়, তিনি মোটেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে পারেন না। নোবেল জয়ের খবর পাওয়ার মুহূর্তের কথাটা সাংবাদিক সম্মেলনে তো নিজেই জানিয়েছিলেন অভিজিৎ, “এস্থারকে খবরটা দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy