Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
taliban

Taliban: পাশে নেই ব্রিটেন, রাশিয়া, ইরানও, তালিবান প্রশ্নে আরও নিঃসঙ্গ নয়াদিল্লি

এত দ্রুত যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে, তা ভারতের যাবতীয় অঙ্কের বাইরে ছিল বলেই আজ আঞ্চলিক কূটনীতিতে হতচকিত অবস্থা নয়াদিল্লির।

ছবি রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৭:৪৭
Share: Save:

দেশে বর্ষা আসার ঠিক আগেই ভারত সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, অতীতের নীতি বদলে তালিবানের সঙ্গেও আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

সেই শান্তি প্রক্রিয়ার হাল যে এই হবে, তা আন্দাজ ছিল না সাউথ ব্লকের। কাবুল দখলের মুখে দাঁড়িয়ে আজ তালিবান প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে ভারতকে জানিয়ে দিল, আফগানিস্তানে সেনা পাঠালে বিপদ আছে!

আফগানিস্তানের অধিকাংশ জমি দখল করে নেওয়ার পর কাবুল থেকে অনতিদূরে দাঁড়িয়ে তালিবান। এই পরিস্থিতিতে আজ সংবাদসংস্থাকে তালিবানের মুখপাত্র সুহেল শাহিন বলেন, ‘‘যদি ভারতীয় সেনা আফগান সেনাকে সাহায্য করার জন্য আসে, তা হলে সেটা তাদের জন্য ভাল হবে না। আফগানিস্তানে অন্য দেশের সেনাদের সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবাই দেখেছে। তারা এলে আগে থেকে সব জেনেই আসবে।’’ তবে সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের মানুষের জন্য ভারতের অবদানের প্রশংসাও করেছেন শাহিন। তিনি বলেন, ‘‘আফগানিস্তানের মানুষের জন্য সেতু নির্মাণ, পরিকাঠামোর উন্নতিতে অনেক সাহায্য করেছে ভারত। এতে এখানকার অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। এই ভূমিকার আমরা প্রশংসা করছি।’’

আফগানিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে থেকে নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে ভারত, আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশ। শাহিন অবশ্য আজ বলেছেন, ‘‘দূতাবাস ও কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের কোনও ক্ষতি আমরা করব না। তাদের নিশানা করা হবে না। আমরা সেটা জানিয়েও দিয়েছি। ভারত তাদের নাগরিকদের জন্য যে চিন্তা করছে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা তাদের কিছু করব না।’’

এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান বিষয়ক কাতার-জোটের পক্ষ থেকে (ভারত, জার্মানি, তাজিকিস্তান-সহ কিছু দেশ যার সদস্য) জানানো হয়েছে, সামরিক শক্তি খাটিয়ে আফগানিস্তানে সরকার গঠন করা হলে তাকে মান্যতা দেওয়া হবে না। রণকৌশলগত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই দেশগুলির মান্যতা দেওয়া বা না দেওয়ার উপর ঘটনার গতি আদৌ নির্ভর করছে না। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কোনও সন্দেহ নেই যে, বিশ বছর পর তালিবানের এই উত্থানের পিছনে সম্পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে দু’টি বড় দেশ চিন এবং রাশিয়ার। অন্য একটি দেশ পাকিস্তানও যদি আগাগোড়া তালিবানের পাশে না থাকত, তা হলে তারা এই অবিশ্বাস্য ঝড়ের গতিতে সামরিক ভাবে অগ্রসর হতে পারত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য তালিবানের হুমকি যথেষ্ট উদ্বেগের।

এত দ্রুত যে পরিস্থিতির অবনতি হবে, তা ভারতের যাবতীয় অঙ্কের বাইরে ছিল বলেই আজ আঞ্চলিক কূটনীতিতে হতচকিত অবস্থা নয়াদিল্লির। অথচ শুধু বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নন, কাবুল এবং পাকিস্তান নীতিকে নতুন করে সাজাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে। তাঁর তালিবান-দৌত্যও খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। অন্য দিকে, আফগানিস্তান সরকারও আজ ভঙ্গুর। বরং নিঃশব্দে পাকিস্তান এবং ইরান, রাশিয়ার মতো দেশগুলির সঙ্গে তালিবান নেতৃত্বের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

আমেরিকা তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলেই খুশি। তার বেশি কোনও আন্তর্জাতিক দায় মেটানোর ইচ্ছা বাইডেন সরকারের আপাতত নেই। উপমহাদেশ নিজেদের মধ্যে যুযুধান হলে, তাতে বিশেষ কিছু এসে যাবে না বাইডেন প্রশাসনের, যত ক্ষণ না তার আঁচ আমেরিকায় গিয়ে পড়ছে। শুধু আমেরিকা নয়। সম্প্রতি ভারতের পুরনো মিত্র রাশিয়ার সঙ্গেও তালিবান-প্রশ্নে মতবিরোধ ঘটেছে মোদী সরকারের। ইরান বা ব্রিটেনের সঙ্গেও। তালিবান রাশিয়াকে আশ্বাস দিয়েছে, তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারে, সন্ত্রাস আফগানিস্তানের বাইরে গড়াবে না। ফলে তালিবানি সন্ত্রাস নিয়ে মাথা গলাতে চায় না মস্কো। অনুরূপ আশ্বাস নাকি পেয়েছে ভারতের আদি অকৃত্রিম শক্তি-সহচর ইরানও।

সম্প্রতি ব্রিটেনের পক্ষ থেকেও ভারতকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তালিবান যদি ক্ষমতায় আসে, তবে তাদের স্বীকৃতি দিতে কোনও সমস্যা নেই। আফ-পাক নীতির ক্ষেত্রেও ব্রিটেনের সমর্থন রয়েছে পুরোপুরি ভাবে ইসলামাবাদের দিকে, এমন আশঙ্কা ছড়াচ্ছে সাউথ ব্লকে। ঘটনা হল, ব্রিটেন এটাই বরাবর মনে করে এসেছে, তাদের ভূকৌশলগত অবস্থানের জন্য পাকিস্তানই আফ-পাক অঞ্চলের নিরাপত্তা বহাল রাখতে সবচেয়ে কার্যকরী। ফলে আফগানিস্তান এ বার তালিবান রাষ্ট্র হয়ে উঠলে তাতে পাকিস্তানপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলির ভূমিকা এবং প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা আপাতত একাই লড়তে হবে নয়াদিল্লিকে।

এরই মধ্যে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ বলেন, “আমাদের যে সমস্ত আফগান সহপাঠী এই মুহূর্তে নিজের দেশে আটকে, তাঁদের প্রাণসংশয়। তালিবান যে ভাবে এলাকার পর এলাকা দখল করছে এবং বহু ক্ষেত্রে বেছে বেছে পড়ুয়াদের নিশানা করছে, তাতে তাঁরা সন্ত্রস্ত। কেন্দ্রের কাছে আমাদের আর্জি, আপাতত প্রাণ বাঁচাতে তাঁদের ভারতে আনার বন্দোবস্ত করা হোক। দিল্লিতে পড়াশোনা করা বহু আফগান পড়ুয়ার স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ ফুরোনোর পথে। অথচ এই মুহূর্তে তাঁদের দেশে ফেরার জো নেই। আমাদের দাবি, ওই মেয়াদ বাড়ানো হোক। জেএনইউ প্রশাসনের কাছেও অনুরোধ, আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত আফগান পড়ুয়াকে ক্যাম্পাসে থাকার অনুমতি দিন তাঁরা। মোদী সরকার বিশ্ব মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সব দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়। পড়ুয়া তথা নতুন প্রজন্মের পাশে থাকার কথাও বলে। তা কাজে করে দেখানোর এটাই সুযোগ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

taliban Britain Afghanistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy