শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মারকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা আওয়ামী লীগের। নিজস্ব চিত্র।
‘ওরা আসবে, চুপি চুপি/ যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ/ সব ক’টা জানালা খুলে দাও না...’
ডিসেম্বরের ১৬ই বিজয় দিবস। ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ পাকিস্তানি সেনাদের। জন্ম নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। তার দু’দিন আগে ১৪-ই রাতে বাঙালিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্য নিয়ে বরেণ্য অধ্যাপক, চিকিৎসক, শিল্পী, অভিনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলে এনে গুম-খুন করে পাকিস্তানি সেনারা। ১৪-ই ‘ওরা আসে চুপি চুপি’। শীতের ওমে সেই সূর্যসন্তানদের গল্প পড়ুয়াদের বলেন শিক্ষকেরা। কথায় কথায় আসবেই— সে দিন এঁদের চিনিয়ে দিয়েছিল যে রাজাকার-আল শামসের লোকেরা, স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল যারা, তারাই আবার ছিল জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী।
এ বারেও স্কুল-কলেজে ‘যথাযোগ্য মর্যাদা’-য় ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালনের সরকারি নির্দেশ ছিল। শনিবারে সেই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ছিল সারা। শুক্রবার রাতে নতুন সরকারি নির্দেশ পৌঁছয় শিক্ষকদের কাছে। শ্রদ্ধা নিবেদন করা যাবে। তবে এ বিষয়ে কোনও অনুষ্ঠান বা আলোচনাসভা করা যাবে না। কেন? ইউনূস সরকারের নির্দেশনামায় কারণ দর্শানো হয়নি। তবে বাংলাদেশের সচেতন মানুষ ঠিকই বুঝেছেন। শহিদদের নিয়ে আলোচনায় বেরিয়ে পড়তে পারে অস্বস্তিকর তথ্য। সে দিন পাকিস্তানি সেনাদের কারা পৌঁছে দিয়েছিল বিশিষ্ট জনেদের ঘরে ঘরে? কারা চিনিয়ে দিয়েছিল কোন জন কে? তারা যে জামায়াতেরই তখনকার ছাত্র-কর্মীদের দলবল। যে জামায়াতে ইসলামী আজ ইউনূস সরকারের কার্যত প্রধান নিয়ন্ত্রক। ২০২৪-এ যে দলটির ‘আমির’ শফিকুর রহমান এখন ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ও ‘বিজয় দিবস’ পালনের নির্দেশ দিচ্ছেন কর্মীদের।
প্রশ্ন হল, জামায়াতের এই ডিগবাজিতে দেশবাসী কি অতীত ভুলে যাবেন? এই সে দিনও শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর পর এই আমির বলেছেন, “একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি, ভারতের দখলে গিয়েছিল। সেই কারণেই জামায়াত ওই স্বাধীনতার বিরোধী ছিল। সেই সিদ্ধান্ত জামায়াত নেতাদের দূরদর্শিতারই প্রমাণ।” এ দিনও এক জামায়াত কর্মী সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘জামাত যদি ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা না করত, আমরা ২৪-এ এসেও স্বাধীনতা পেতাম না। জামাত যা ৫০ বছর আগে বোঝে, বাঙালি তা বোঝে এত দিনে।’
১৫ অগস্ট শেখ মুজিবের মৃত্যুদিনে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডে তাঁর ভস্মীভূত বাসভবনে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া সকলকে বেধড়ক মারধর করেছিল সরকার-সমর্থক দুষ্কৃতীরা। চটুল হিন্দি গান বাজানো হয়েছিল মাইক বেঁধে। আওয়ামী লীগের এক যুবনেতা মারে পঙ্গু হয়ে পরে মারা যান। এ দিন ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’-এ ঢাকার মিরপুরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে’ মানুষের ঢল নামলেও ছিল চোরাগোপ্তা পাহারা। বিকেলে প্রায় গেরিলা কায়দায় সেই কবরস্থানে পৌঁছে স্মারকের নীচে আওয়ামী লীগের নামে ফুলের স্তবক রেখে যান কয়েক জন। তার আগে কাকভোরেও শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন কয়েক জন কর্মী। তবে ফুল নিয়ে যেতে পারেননি তখন। ১০ নভেম্বর ‘স্বৈরাচার দিবসে’ সরকারপন্থীদের প্রবল মারে ভেস্তে যায় আওয়ামী কর্মীদের মিছিল করার চেষ্টা। তার পরে এ দিনের ‘সাফল্য’কে বড় করেই দেখছেন দলের নেতারা।
এ মাসের ৩ তারিখে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে প্রায় ৬০টি সংখ্যালঘু পরিবার ও তাঁদের উপাসনালয় তছনছ করে মৌলবাদীরা। তার ১০ দিন পরে প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে আজ জানানো হয়েছে, ওই ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নামও জানানো হয়েছে। মাঝখানে ঢাকা সফর করে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তৎপরতার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। সংসদ থেকে বাংলাদেশকে বার্তা দিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। উদ্বেগ জানিয়েছে আমেরিকাও। তার পরে খোদ প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে প্রচার করতে হল ৪ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারের খবর। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ঘোষণা করেছিলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনায় সরকার অন্তত ৭০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy