নিজেদের অবস্থানে অনড় নেপাল।
কোনও অবস্থাতেই মানচিত্রে বদল ঘটানো হবে না। এক বার ফের সাফ জানিয়ে দিল নেপাল। লিপুলেখ গিরিপথ, লিম্পিয়াধুরা এবং কালাপানিকে নিজেদের দেশের অংশ হিসেবে দেখিয়ে সম্প্রতি নয়া মানচিত্র প্রকাশ করে তারা। তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা নিজেদের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকবে বলে জানিয়ে দিল কাঠমান্ডু।
গত মে মাসে ওই বিতর্কিত মানচিত্র প্রকাশ করে নেপাল। তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গয়ালি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে গত ২ নভেম্বর নিজেদের মানচিত্র বদল ঘটায় ভারত। তার পরই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই। এটা স্থায়ী সিদ্ধান্ত কারণ ওই এলাকাগুলি নেপালের মধ্যেই পড়ে। এ নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা নেই। তবে কোন এলাকা নেপালের মধ্যে পড়ছে, তা নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হওয়া দরকার।’’
সম্প্রতি লিপুলেখ গিরিপথ থেকে কৈলাস-মানস সরোবরে যাওয়ার পথ পর্যন্ত একটি রাস্তার উদ্বোধন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তাতে প্রতিবাদ জানায় কেপি শর্মা ওলির সরকার। তার পরই ওই বিতর্কিত মানচিত্র প্রকাশ করে তারা। তা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় ভারত। এমনকি এর পিছনে চিনের উস্কানি থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেয় ভারত। তাতে দু’দেশের মধ্যে উত্তাপ আরও বাড়ে। এর পর কিছুটা সুর নরম করে বিদেশ সচিব স্তরে আলোচনার প্রস্তাব দেয় নেপাল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত দিল্লির তরফে কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি।
আরও পড়ুন: চিন্তা বাড়ল ভারতীয়দের, এইচ-ওয়ানবি-সহ সব কাজের ভিসা বন্ধ করতে পারেন ট্রাম্প
তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গয়ালি। তিনি বলেন, ‘‘বিদেশ সচিব স্তরে আলোচনা চালাতে ভারতকে চিঠি দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার জবাব পাইনি। কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চালাতে দু’দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’ এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ওলি কি নরেন্দ্র নোদীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে দু’জনের মধ্যে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। আমরা তো আগেই বলেছি, নেপাল আলোচনার জন্য প্রস্তুত।’’
করোনা সঙ্কটের মধ্যেই গত এক মাস ধরে লাদাখ সীমান্তে চিনা বাহিনী ও ভারতীয় সেনার মধ্যে সঙ্ঘাতের আবহ দেখা দিয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমন করতে দুই দেশের সেনাবাহিনী স্তরে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তাহলে কাঠমান্ডুর সঙ্গে আলোচনায় বসতে দিল্লির সমস্যা কোথায়, প্রশ্ন তোলেন প্রদীপ গয়ালি। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্ত সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি ভারত ও চিনা বাহিনীর কম্যান্ডাররা আলোচনায় বসেন। ভারত ও চিনের মতে আলোচনা হলে, বাংলাদেশ বা নেপালের সঙ্গে নয় কেন? ’’
লিপুলেখ গিরিপথ ও কৈলাস-মানস সরোবরের মধ্যে রাস্তা তৈরি নিয়ে তাদের আপত্তির পিছনে চিনা উস্কানি রয়েছে কি না জানতে চাইলে, সরাসরি তা খারিজ করে দেন গয়ালি। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নেপালই একমাত্র দেশ, যা কখনও বিদেশি ঔপনিবেশিকদের হাতে ওঠেনি। ভারত এবং চিন, দুই প্রতিবেশি দেশের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। কারও মুখের উপরই দরজা বন্ধ করে দিতে পারে না নেপাল। ভারত ও নেপালের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনও তুলনাই চলে না। কারণ ব্যবসা বাণিজ্য হোক বা সীমান্ত সংযোগ, নানা ভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত ভারত ও চিন।’’
আরও পড়ুন: ২০ লক্ষের সীমাও পার করল আমেরিকা
এ নিয়ে দিল্লির তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন নেপালের প্রসঙ্গ উঠে এলে, বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানান, ‘‘এ নিয়ে আগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারত। নেপালের ঐতিহ্যপূর্ণ সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে গভীর ভাবে সম্মান করি আমরা। দু’দেশের বহুমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গত কয়েক বছরে আরও প্রসারিত ও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। নেপালের মানবিক, উন্নয়নমূলক ও যোগাযোগ স্থাপন প্রকল্পে ভারতের সহায়তা আরও বেড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy