Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

বাংলার নির্বাচনে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিতে বাংলাদেশে মতুয়াদের তীর্থে যেতে চান মোদী?

বিজেপি সূত্রের দাবি, বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকতে পারেন। আমন্ত্রণের প্রাপ্তিস্বীকার করেছেন শান্তনু।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ০৬:৩৬
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া ভোট টানতে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে কি ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?

২৭ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে ভোট শুরু। আর ২৬ মার্চ ঢাকা সফরে গিয়ে পরের দিন, অর্থাৎ ২৭ তারিখ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি দেখতে যাওয়ার কথা মোদীর। সূত্রের দাবি, এই একই সফরে গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি ঘুরে আসতে চান প্রধানমন্ত্রী। ১৮১২ (মতান্তরে ১৮১১) সালে ১১ মার্চ ওড়াকান্দিতে জন্ম মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের। তাঁর বাণী ও নির্দেশাবলি গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর যে পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের হাত ধরে, তাঁরও জন্মস্থান ওড়াকান্দি। প্রত্যন্ত এই গ্রামে একটি মন্দির রয়েছে, যা মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার তীর্থস্থান হিসেবে গণ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়ে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদকে প্রণাম করে এলে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া-ভোট টানা বিজেপির পক্ষে সহজ হবে বলে মনে করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কারণ ভারতের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাননি। যদিও পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধা থাকায় শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সেখানে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিদেশমন্ত্রক ও ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। তবে বিজেপি সূত্রের দাবি, বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও ওড়াকান্দি সফরে মোদীর সঙ্গে থাকতে পারেন। এ মাসে ওড়াকান্দি যাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে শান্তনু খানিকটা থমকে যান। তার পরে বলেন, “ওড়াকান্দি থেকে আমন্ত্রণ এসেছে, কিন্তু যাওয়ার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”

মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় নেতা দিল্লিবাসী সুশীল মল্লিকের কথায়, “প্রধানমন্ত্রী সত্যিই এই কাজটি করলে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মতুয়া সম্প্রদায়ের ৫ কোটি মানুষের কাছে আপন হয়ে উঠবেন। এর পরে সেখানে দাঁড়িয়ে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে যাওয়া মতুয়া সম্প্রদায়কে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দানের মতো ঘোষণা যদি প্রধানমন্ত্রী করেন— তো জয়জয়কার পড়ে যাবে!”

বাংলাদেশের প্রশাসন সূত্রের খবর, ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে গোপালগঞ্জ পৌঁছে টুঙ্গিপাড়ার পাশাপাশি ওড়াকান্দি মতুয়া মন্দির, বরিশালের শিকারপুরে সতীপীঠ হিসেবে পরিচিত সুগন্ধা শক্তিপীঠ, কুষ্ঠিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি এবং বাঘা যতীনের বসতবাড়ি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বাকি জায়গাগুলোয় সমস্যা না-হলেও, গোল বেঁধেছে ওড়াকান্দি নিয়ে। কারণ, প্রশাসনের বক্তব্য মোদীর মতো ভিভিআইপি-র সফরের জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো সেখানে নেই। ঘিঞ্জি রাস্তায় গাড়ির কনভয় ঢুকবে না, কাছেপিঠে হেলিপ্যাড বানানোর জায়গাও অপ্রতুল। তবে তার পরেও সফরসূচি থেকে ওড়াকান্দি বাদ না-দেওয়ার জন্য ভারতের তরফে ‘জোর দেওয়া হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসার। তবে তাঁরা চিন্তিত। কারণ, এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে ভারতের হাই কমিশনার বীণা সিক্রি ওড়াকান্দিতে এলে মাত্রাছাড়া ভিড়ে বেশ কয়েক জন পদপিষ্ট হয়েছিলেন। শুক্রবার ভারতীয় হাই কমিশনের ৯ জনের একটি দল সুগন্ধা শক্তিপীঠের পাশাপাশি ওড়াকান্দিও ঘুরে গিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, সেখানে মোদীর সফর যাতে হয়, তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে মতুয়াদের নাগরিকত্বের বিষয়টি ফয়সালা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোকসভায় এই সম্প্রদায়ের ঢালাও ভোট পেয়েছে বিজেপি। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচিত হয়েছেন হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরি শান্তনু ঠাকুর। কিন্তু তার পরে বিষয়টি অথৈ জলে। শান্তনু বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন, ক্ষোভের কথা নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি বনগাঁ-গাইঘাটায় সভা করে এলেও নাগরিকত্ব প্রশ্নের জবাব মতুয়ারা পাননি। তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ, ঠাকুরবাড়ির বধূ মমতা ঠাকুর মাঠে নেমে বোঝাচ্ছেন— মতুয়াদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সব রয়েছে। তাঁরা তো নাগরিকই। বিজেপি মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূলের এই প্রচারে হাওয়া বদলাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মতুয়া ভোট ধরে রাখতে দরকার একটা ‘মাস্টারস্ট্রোক’, যার রূপকার অমিত শাহ। তবে পুরোটাই করা হচ্ছে বেশ রাখঢাক করে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy