আলেক্সেই নাভালনির মৃত্যুর প্রতিবাদে মিছিল। রবিবার বার্লিনে রুশ দুতাবাসের সামনে। ছবি: রয়টার্স।
তাঁর মৃত্যুর পরে পেরিয়ে গিয়েছে দু’দিন। তবু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কঠোর সমালোচক আলেক্সেই নাভালনির মৃতদেহ হাতে পেল না তাঁর পরিবার। নাভালনির ৬৯ বছরের বৃদ্ধা মা গত কাল মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঠান্ডার মধ্যেও সালেখার্দ শহরের মর্গে পৌঁছেছিলেন ছেলের মৃতদেহ নিতে। কিন্তু সেখান থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল নাভালনির মা লুদমিলা নাভালনায়াকে। তাঁকে শুধু নাভালনির মৃত্যুর সময় জানিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, গত শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টো বেজে ১৭ মিনিটে মৃত্যু হয় নাভালনির।
নাভালনির মৃতদেহ রুশ সরকার লুকিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ। এক সাক্ষাৎকারে অবিলম্বে নাভালনির দেহ ফেরতের দাবি জানিয়েছেন কিরা। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা কেউই জানি না নাভালনির দেহ কোথায়, কী অবস্থায় আছে। অবিলম্বে তাঁর পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়ার আর্জি আমরা প্রশাসনের কাছে জানাচ্ছি।’’ এই বিতর্কের মধ্যেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া ইনস্টাগ্রামে স্বামীর সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। পিছন থেকে তোলা সেই ছবিতে ইউলিয়ার মাথায় মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নাভালনি। ছবির ক্যাপশনে ইউলিয়া রুশ ভাষায় শুধু লিখেছেন, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’।
লুদমিলাকে জানানো হয়েছে নাভালনির মৃত্যুর কারণও। একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে আর্কটিক সার্কল জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ‘সাডেন ডেথ সিনড্রোমে’ মৃত্যু হয়েছে পুতিনের কট্টর বিরোধী এই রাজনীতিকের। কোনও আগাম উপসর্গ বা কারণ ছাড়াই আচমকা কারও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে তাকে ‘সাডেন ডেথ সিনড্রোম’ বলা হয়। তবে নাভালনির দেহ কেন পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে এখনও নিরুত্তর রুশ প্রশাসন। কাল নাভালনির মাকে বলা হয়েছে, প্রথম দফার ময়না তদন্তের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ। তাই ফের দেহের ময়না তদন্ত করতে হবে। অথচ নাভালনির মৃত্যুর পরে প্রাথমিক ভাবে জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, নাভালনির মৃত্যুতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। ফলে এই মৃত্যু নিয়ে কোনও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলাও ভিত্তিহীন।
নাভালনির মৃত্যু নিয়ে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি যা যা অভিযোগ তুলেছে, তা পুরো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে ক্রেমলিনও। তবে তাঁর সমালোচকের মৃত্যু নিয়ে এখনও নীরব প্রেসিডেন্ট পুতিন। প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি দেননি তিনি। যদিও নাভালনির মৃত্যুর খবর পুতিন পেয়েছেন বলে আজ জানিয়েছে ক্রেমলিন। গত দু’দিনে রাশিয়ার মোট ৩৬টি শহরে নাভালনির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে নানা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন দেশের অন্তত ৪০০ জন নাগরিক। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গ্রেফতারির খবর এসেছে মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর থেকে।
নাভালনির মৃত্যুর ফলস্বরূপ রুশ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়ে রেখেছে ব্রিটিশ সরকার। জার্মানির মিউনিখে জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মধ্যে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে নাভালনির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবেই। তবে তা ঠিক কী, এখনই খোলসা করেননি ক্যামেরন। এখন মিউনিখে উপস্থিত রয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি-ও। পুতিনকে দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে নাভালনির মৃত্যুর দায় রুশ প্রেসিডেন্টের উপরেই চাপিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy