মায়ানমারে চলছে সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্য। ছবি: রয়টার্স।
ভারত সীমান্তের অদূরে মায়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর পালেতাওয়ার দখল করল বিদ্রোহী জোট। রাখাইন প্রদেশের অন্তর্গত কালাদান নদীর তীরবর্তী ওই শহর ভারত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বিদ্রোহী বাহিনীর পালেতাওয়ার দখলের ফলে মানানমারের সামরিক জুন্টা সরকার আর্থিক ও বাণিজ্যিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, এর ফলে নতুন করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শরণার্থীদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মায়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সে দেশের সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিল। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ‘অপারেশন ১০২৭’। বিদ্রোহীদের হামলার জেরে ইতিমধ্যেই সে দেশের অর্ধেক এলাকা সরকারি সেনার হাতছাড়া হয়েছে। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম মায়ানমারের শান, চিন আর সাগিয়াং প্রদেশ রয়েছে এই তালিকায়। এ বার লড়াই শুরু হল পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইনে। যা ‘রোহিঙ্গাভূমি’ নামেও পরিচিত।
‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর অন্তর্গত তিন সংগঠনের পাশাপাশি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)-ও শামিল হয়েছে জুন্টা বিরোধী যুদ্ধে। বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে সোমবার জানানো হয়েছে, সীমান্তে স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাঁরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার চেষ্টা চালিয়ে চালাবেন।’ সংগঠনের মুখপাত্র খিন থু খা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘পালেতাওয়ার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নেব আমরা।’’
মায়ানমারের জুন্টা সরকার অবশ্য রাখাইনে পরাজয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। এর আগে চিন সীমান্তবর্তী আর এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য শহর লুক্কেই হাতছাড়া হওয়া নিয়েও নীরব ছিল তারা। প্রসঙ্গত, মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জুন্টা বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। গৃহযুদ্ধের জেরে ঘরছাড়া হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ (যার মধ্যে কয়েক হাজার আশ্রয় নিয়েছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মিজ়োরামে)। এই পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরের গোড়ায় চিনা পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র কয়েক জন উচ্চপদস্থ আধিকারিক যুদ্ধবিরতির জন্য সক্রিয় হয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির চিনা প্রস্তাব খারিজ করে দেয় ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়ান্স’।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিদ্রোহী জোটের তরফে জুন্টা সেনার উপর হামলা চালাতে ‘ব্রিগেড ৬১১’ নামে একটি বাহিনী গঠন করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনজাতিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ওই বাহিনী। তারাই এই মুহূর্তে রয়েছে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল মায়ানমার সেনা। তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম তারা এত বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy