বাংলাদেশের আম এবং কাঁঠাল চেখে দেখেছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সফরে চিনে গিয়েছেন। শুক্রবার সকালে বেজিংয়ে জিনপিংয়ের সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক হয়। সেখানেই বাংলাদেশের আম-কাঁঠালের প্রশংসা করেছেন জিনপিং। ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সমাজমাধ্যমে এ কথা জানিয়েছেন। ইউনূসের সঙ্গে জিনপিংয়ের বৈঠককে ‘অত্যন্ত সফল’ বলেও উল্লেখ করেছেন শফিকুল।
গত বুধবার চিনে গিয়েছেন ইউনূস। প্রথমে হাইনান প্রদেশে একটি বৈঠকে যোগ দেন। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার বেজিংয়ে পৌঁছোন। বেজিং বিমানবন্দরে চিনের উপবিদেশমন্ত্রী সুন ওয়েইডং তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। এর পর শুক্রবার সকালে বেজিংয়ের গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে ইউনূসের সঙ্গে জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরাও ছিলেন। শফিকুল লিখেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট জিনপিং এখনও পর্যন্ত মোট দু’বার বাংলাদেশে এসেছেন। ইউনূসের সঙ্গে সেই দুই সফরের বিষয়ে তিনি কথা বলেন। বাংলাদেশে এসে তিনি এখানকার আম এবং কাঁঠাল চেখে দেখেছিলেন। সেগুলি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। আগামী দিনে এই দুই ফল বিপুল পরিমাণে চিনে রফতানি করবে বাংলাদেশ।’’
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আরও জোরালো ভূমিকা পালন করার জন্য চিনকে আহ্বান জানিয়েছেন ইউনূস। তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রসঙ্গ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে এবং সসম্মানে মায়ানমারে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে চিনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে তিনি জিনপিংকে জানিয়েছেন।
শফিকুল সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘ইউনূস এবং জিনপিংয়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অত্যন্ত সফল হয়েছে। তাঁদের আলোচনা ছিল গঠনমূলক এবং ফলপ্রসূ। এটি ছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপাক্ষিক বিদেশ সফর। তা সফল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চিনের সমর্থন আরও এক বার ব্যক্ত করেছেন জিনপিং।’’ বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য চিনা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শফিকুলের কথায়, ‘‘চিনের উৎপাদন সংস্থাগুলিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়েও জিনপিং কথা দিয়েছেন। চিন থেকে নেওয়া ঋণে সুদের হার কমানো থেকে শুরু করে জলসম্পদ বণ্টন— একাধিক বিষয়েই জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশ যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরেছে, চিন তা বিবেচনা করে দেখবে।’’
উল্লেখ্য, গত বছর অগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কেরও অবনতি শুরু সেই সময় থেকেই। বাংলাদেশে হাসিনা-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে, যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। ঢাকা তা ভাল চোখে দেখেনি। উপরন্তু, সরকার পতনের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসেন হাসিনা। আপাতত তিনি ভারতেই গোপন আশ্রয়ে রয়েছেন। তাঁর প্রত্যর্পণ চেয়ে নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। কিন্তু এখনও তার জবাব দেওয়া হয়নি। হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের মামলা হয়েছে বাংলাদেশে। তার বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে। অভিযোগ, ভারতে থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই হাসিনা যে বার্তা দেন, তা বাংলাদেশে অস্থিরতার পরিস্থিতি তৈরি করছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কথা অবশ্য ঢাকা স্বীকার করেনি। তার মাঝেই প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর হল চিনে।