Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Conflict in Myanmar

সীমান্ত পেরিয়ে মিজ়োরামে ঢুকল মায়ানমারের আরও সেনা, ‘রোহিঙ্গা প্রদেশে’ হামলা বিদ্রোহী বাহিনীর

মিজ়োরামের সঙ্গে মায়ানমারের স্থলসীমান্ত প্রায় ৫১০ কিলোমিটার। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমনে সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন।

মায়ানমার-মিজ়োরাম সীমান্ত।

মায়ানমার-মিজ়োরাম সীমান্ত। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
আইজল শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৮
Share: Save:

মঙ্গলবার দুপুরে ৩৯। সন্ধ্যায় আরও চার। বুধবার সকালে আবার দুই। বিদ্রোহীদের হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মিজ়োরামে ঢুকে পড়ার ঢল নেমেছে মায়ানমার সেনার। মিজ়োরাম পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৪৫ জন মায়ানমার সেনা জ়োকাওথান সীমান্ত চেকপোস্ট পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদের গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে অসম রাইফেলস।

মিজ়োরামের চাম্পেই জেলা লাগোয়া সীমান্তের অদূরে মায়ানমার সেনার রিখাওদর এবং খাওমাওয়ি ছাউনি দু’টি সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্রোহী বাহিনী দখল করে। প্রাণভয়ে ৪২ জন মায়ানমার সেনা জ়োকাওথান সীমান্তে চেকপোস্ট পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আত্মসমর্পণ করেছেন। মিজ়োরাম পুলিশের আইজি লালবিয়াকথাঙ্গা খিয়াংটে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সীমান্তবর্তী একাধিক গ্রামেরও দখল নিয়েছে বিদ্রোহী বাহিনী। তাই মায়ানমারের প্রায় ৫,০০০ গ্রামবাসী আতঙ্কে ভারতে চলে এসেছেন।’’

হাফডজন শহর, কয়েকশো গ্রাম এবং পুলিশ ও সেনার শতাধিক শিবিরের পর মঙ্গলবার মায়ানমার ফৌজের একটি অস্ত্রাগারের দখল নিল বিদ্রোহী বাহিনী। শান প্রদেশের ওই অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং বিস্ফোরকের পাশাপাশি বিদ্রোহীদের যৌথ বাহিনী অন্তত ছ’টি ট্যাঙ্ক এবং বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়িও তাদের দখলে এনেছে। বিদ্রোহীরা জোট বার্তা দিয়েছে, তারা রাজধানী ইয়ঙ্গন থেকেও জুন্টা সরকারকে উৎখাত করবে।

উত্তর মায়ানমারে তুমুল যুদ্ধের পরে বিদ্রোহী বাহিনী মঙ্গলবার নামতু নদীর উত্তরে হেসেনভি শহর ও সেনাঘাঁটি দখল করেছে। মায়ানমার সেনা পিছু হটে নদীর দক্ষিণে অবস্থান নিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার রাতে জানায়। বস্তুত, উত্তর মায়ানমারে কুনলং, মনিক্যাট, নানবেং (লাশিও-টাংইয়ান রোডে) এবং মোনেকো ছাড়া সীমান্তবর্তী অন্য কোনও সেনাঘাঁটি এখন সামরিক জু্ন্টা সরকারের দখলে নেই। রাখাইন প্রদেশের সিওওয়ে শহরের দোরগোড়াতেও পৌঁছে গিয়েছে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ বাহিনী। অতীতে এই প্রদেশেই রোহিঙ্গা মুসলিমরা হিংসার শিকার হয়েছিলেন।

উত্তর মায়ানমারের শান এবং সাগিয়াং প্রদেশে সাফল্যের পরে পশ্চিমের চিন এবং রাখাইন প্রদেশেও হামলা শুরু করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, পশ্চিম মায়ানমারে সক্রিয় দুই বিদ্রোহী বাহিনী ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জুন্টা বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’।

মিজ়োরামের সঙ্গে মায়ানমারের স্থলসীমান্ত প্রায় ৫১০ কিলোমিটার। গত ৭ নভেম্বর বিধানসভার ভোটপর্ব মিটলেও এখনও ভোটগণনা হয়নি মিজ়োরামে। এই পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমনে সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। মিজ়োরাম ছাড়াও উত্তর-পূর্বের অরুণাচল প্রদেশ এবং হিংসাদীর্ণ মণিপুরের সঙ্গেও মায়ানমারের স্থলসীমান্ত রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নজরদারিতে নিযুক্ত বিএসএফ এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম মায়ানমারের শান এবং সাগিয়াং প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিদ্রোহীদের দখলে গিয়েছে। মায়ানমার-চিন সংযোগরক্ষাকারী প্রধান সড়কও বিদ্রোহীদের দখলে চলে গিয়েছে। গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে মায়ানমারের লক্ষাধিক মানুষ ইতিমধ্যেই ঘরছাড়া হয়েছেন বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল মায়ানমার সেনা। আড়াই বছরের সেনা সরকার এই প্রথম এত বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হল বলে মনে করা হচ্ছে। মায়ানমারের ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল’ (এসএসি)-এর প্রেসিডেন্ট মিয়ন্ত শোয়ে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘‘দ্রুত, কার্যকরী পদক্ষেপ না-করলে আমাদের দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।’’ পরিস্থিতি কার্যত সেই দিকেই এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।

অন্য বিষয়গুলি:

Myanmar Myanmar Violence Myanmar Coup Myanmar Military Coup Myanmar Army Mizoram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy