এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চিনের সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার সেনার সংখ্যা এবং অস্ত্রশস্ত্রের বিশ্বকে জানানোর বিষয়ে চেয়ারম্যান মাও জে দঙের জমানা থেকেই গোপনীয়তা বজায় রেখেছে চিন।
০২২৩
২০১৮ সালের হিসেবে চিনের স্থলবাহিনীর (পিএলএ গ্রাউন্ড ফোর্স) সক্রিয় সেনা সংখ্যা অন্তত ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার। সংরক্ষিত বাহিনী ধরলে সংখ্যাটি পৌঁছবে ১৬ লক্ষে। হালকা আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, সিএস সিরিজ এবং টাইপ-৮২ সাব-মেশিনগান, একে এবং কিউবিজেড সিরিজের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল।
০৩২৩
অত্যাধুনিক বুলপপ কিউবিইউ-৮৮ স্নাইপার রাইফেল ও লাইট মেশিনগান রয়েছে চিনা বাহিনীর। রয়েছে, জেনারেল পারপাস মেশিনগান, মাল্টি ব্যারেল মেশিনগান এবং ১২.৭ এমএম ভারী এয়ার ডিফেন্স মেশিনগানও।
০৪২৩
পিএলএ’র পদাতিক ডিভিশনগুলি ৬০, ৮২, ১০০, ১২০ এমনকি, ১৬০ এমএম ভারি মর্টার ব্যবহার করে। কাঁধে নিয়ে প্রতিপক্ষের ট্যাঙ্ক নিশানা করা যায় এমন এইচজেড-১২ মিসাইল রয়েছে কয়েক হাজার। একই গোত্রের মাল্টিপল রিকললেস রাইফেল এবং আরপিজি সিরিজের রকেট লঞ্চারও রয়েছে বিপুল সংখ্যায়।
০৫২৩
মার্কিন সামরিক পর্যবেক্ষণ সংস্তা গ্লোবালসিকিওরিটি’র হিসেবে বলছে, পিএলএ গ্রাউন্ড ফোর্সের আর্মার্ড ডিভিশনে ‘টাইপ-৯৬’ মেন ব্যাটল ট্যাঙ্কের সংখ্যা প্রায় ২,৫০০। এ ছাড়া ১,০০০টি টাইপ-৯৯ এবং হাজার চারেক পুরনো জমানার টাইপ-৬৩ এবং টাইপ-৫৯ ট্যাঙ্কও রয়েছে। রয়েছে ১,২০০ হালকা ট্যাঙ্ক। সব মিলিয়ে প্রায় ৯,৫০০।
চিনা ফৌজের আর্টিলারি ডিভিশনগুলিতে রয়েছে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ৮৫ এমএম কামান থেকে ২০৩ এমএম হাউইৎজার পর্যন্ত হরেক কিসিমের অস্ত্র। এর মধ্যে ট্র্যাকড ভেহিকলে বসানো সেল্ফ প্রপেলড আর্টিলারি ১,২০০-র বেশি। অন্য যানের দ্বারা পরিবাহিত টাওড আর্টিলারি প্রায় ১৪ হাজার।
০৮২৩
চিনের এম-১১০ এবং এম-১১৫ সেল্ফ প্রপেলড ২০৩ এমএম (৮ ইঞ্চি) হাউইৎজারের মতো ভারী কামান ভারতীয় সেনার নেই। পাশাপাশি ১৫৫, ১৫২, ১৩০, ১২২ এমএম কামানের সংখ্যার নিরিখেও এগিয়ে চিন। পাশাপাশি রয়েছে প্রায় ৫,০০০ বিমান বিধ্বংসী কামান ও স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র।
০৯২৩
ট্রাক পরিবাহিত মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের সংখ্যা প্রায় ২,০০০। এর প্রায় অর্ধেকের বেশি ১২২ এমএম পিএইচএল-৮১ এবং পিএইচএল-৯০। এ ছাড়া প্রায় ২০০টি ভারী পিএইচএল-০৩ রয়েছে এই তালিকায়। ১৩০ এমএম রকেটগুলি ১২৫ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে।
১০২৩
পিএলএ স্ট্র্যাটিজিক সাপোর্ট ফোর্স নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সার্ভিস ব্রাঞ্চ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে ভারতের তুলনায় এগিয়ে বলেই সমর বিশেষজ্ঞদের মত। ২০১৫ সালের সামরিক পুনর্গঠনের সময়ের এই বাহিনী সাইবার যুদ্ধের পাশাপাশি মহাকাশে আমেরিকাকে পাল্লা দিয়ে স্পেস ওয়ারের প্রস্তুতিও চালাচ্ছে।
১১২৩
স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্পার ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ব্যবহারের জন্য ‘পিএলএ রকেট ফোর্স’ রয়েছে চিনের। ৫০ কিলোমিটার পাল্পার এইচএন-১ ক্রুজ মিসাইলের পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম একাধিক দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে চিনের।
১২২৩
ডংফেং সিরিজের ১৩,০০০ কিলোমিটার পাল্লার ডিএফ-১৫ এবং ১৫,০০০ কিলোমিটার পাল্লার ডিএফ-৪১ ব্যালিস্টিক মিসাইল রয়েছে তালিকায়। ডিএফ-৪১ একসঙ্গে ১০টি পৃথক লক্ষ্যে পরমাণু হামলা চালাতে পারে। অর্থাৎ ভারতের প্রতিটি বিন্দু এমনকী এমনকী আমেরিকার বিস্তীর্ণ অংশও রয়েছে চিনের পাল্লায়।
১৩২৩
সব মিলিয়ে দূরপাল্লার আইসিবিএম-এর সংখ্যা প্রায় ২০০। ভূমি থেকে ভূমি মাঝারি এবং স্বল্পপাল্লার হাজার দু’য়েক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে চিনের। ৪,০০০ এবং ২,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ডিএফ-২৬ এবং ডিএফ-১৭। ৫০০-৯০০ কিলোমিটার পাল্লার ডিএফ-১১ এবং ডিএফ-১৫-র বিভিন্ন মডেল।
১৪২৩
১৯৬৪ সালে প্রথম পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা করলেও তার ভাঁড়়ার সম্পর্কে বরাবরই নিরব বেজিং। ২০১৫ সালের একটি মার্কিন রিপোর্টে বলা হয়েছিল, চিনের ‘নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডে’র সংখ্যা অন্তত ২৫০। অর্থাৎ, সেই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা। চিনের জীবাণু ও গণবিধ্বংসী অস্ত্র সম্পর্কেও শঙ্কা রয়েছে পশ্চিমী দুনিয়ার।
১৫২৩
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চিনের বিমানবহরে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা প্রায় ৪,০০০। এই তালিকায় রয়েছে ফাইটার, অ্যাটাক এবং মাল্টি-রোল এয়ারক্র্যাফট। রেডারের নজরদারি এড়াতে সক্ষম ৪০টি অত্যাধুনিক চেংদু জে-২০ এবং শেনইয়ং এফসি-৩১ স্টেলথ ফাইটারও মজুত পিএলএ এয়ার ফোর্সের ভাঁড়ারে।
১৬২৩
চেংদু সিরিজের জে-১০, জে-১৫, শেনইয়ং জে-১১ এমনকী রুশ সুখোই-৩০এমকেকে, সুখোই-৩৫-এর মতো ফাইটার স্কোয়াড্রনও আছে চিনা বিমানবাহিনীর। নানচং জে-১২ হাল্কা যুদ্ধবিমান এবং পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত জেএফ-১৭ মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট।
১৭২৩
১৪টি অত্যাধুনিক গোয়েন্দা বিমান অ্যাওয়াক্স, শ’দেড়েক নজরদারি বিমান, ৪০০টি ছোট-বড় সামরিক পরিবহণ বিমান এবং ৭৫০টির বেশি প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে চিনের।
১৮২৩
ইউটিলিটি ও পরিবহণ হেলিকপ্টার, গানশিপ (অ্যাটাক হেলিকপ্টার) মিলিয়ে চিনা বিমানবাহিনীর হাতে রয়েছে প্রায় দু’শো টি কপ্টার। চিনা স্থলবাহিনীর অ্যাভিয়েশন কোরগুলির মোট হেলিকপ্টারের সংখ্যা হাজার ছুঁইছুঁই।
১৯২৩
চিনের নৌবাহিনীর (পিএলএ নেভি) যুদ্ধবিমান, পরিবহণ বিমান ও হেলিকপ্টারের মোট সংখ্যা প্রায় ৭০০। এর মধ্যে রয়েছে বিমানবাহী রণতরী থেকে উড়ানে সক্ষম সুখোই এবং চেংদু-জে সিরিজের মডেলগুলি।
২০২৩
চিনা নৌবহরে বিভিন্ন ধরনের রণতরী ও অন্যান্য জলযানের মোট সংখ্যা ৭৫০-এরও বেশি। চিনের নৌসেনা প্রায় ২ লক্ষ ৫৫ হাজার। তবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নৌবহরের বড় অংশই মোতায়েন অংশই মোতায়েন রয়েছে দক্ষিণ চিন সাগরে। জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স ও আমেরিকার মোকাবিলায়।
চিনের সাবমেরিনের সংখ্যা ৭৬। অর্থাৎ ভারতের চারগুণেরও বেশি। ৫২টি পুরনো আমলের টর্পে়ডো-নির্ভর ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনের পাশাপাশি ১৪টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন রয়েছে চিনের। টর্পেডো টিউবের পাশাপাশি জাহাজ বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম এগুলি।
২৩২৩
চিনা ডুবোজাহাজ বহরের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ ছ’টি ‘জিন ক্লাসে’র অত্যাধুনিক ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার ব্যলেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন’। গভীর সমুদ্র থেকে পরমাণু অস্ত্রবাহী দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম আরও ছ’টি সাবমেরিন বানানোর কাজও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।