পিএনবি কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত মেহুল চোক্সী বেলজিয়ামে আছেন। তাঁর স্ত্রী প্রীতি চোক্সী বেলজিয়ামেরই নাগরিক। আপাতত দু’জনেই সেই দেশে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। অ্যাসোসিয়েট টাইম্সের রিপোর্টে দাবি, মেহুলকে ভারতে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে নয়াদিল্লি। বেলজিয়াম সরকারের সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে মেহুলের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তদন্তকারী সংস্থাগুলি তাঁর বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি। সিবিআই এবং ইডি, উভয় সংস্থাই তাঁকে খুঁজছে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র অ্যান্টিগা ও বারবুডায় ছিলেন মেহুল। তাঁর সেখানকার নাগরিকত্বও রয়েছে। সেখান থেকে মেহুলকে ভারতে ফেরানো যায়নি। মেহুলের আবেদনে সাড়া দিয়ে ২০২৩ সালে অ্যান্টিগা ও বারবুডায় বিচারবিভাগ জানিয়েছিল, তাঁকে ওই দেশ থেকে কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না। ফলে তাঁকে ফেরানোর তৎপরতায় তখনই ইতি পড়ে যায়। কিন্তু চোক্সী বেলজিয়ামে চলে যাওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে ফেরানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। সেই চেষ্টাই শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
স্ত্রীর সাহায্যে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ‘এফ রেসিডেন্সি কার্ড’ জোগাড় করে বেলজিয়ামে থাকতে শুরু করেছেন মেহুল। এই কার্ডের মাধ্যমে অন্য কোনও দেশের নাগরিক বৈবাহিক সঙ্গীর সঙ্গে কিছু শর্তসাপেক্ষে বেলজিয়ামে থাকতে পারেন। তবে মেহুল এখনও অ্যান্টিগা ও বারবুডার নাগরিক, গত ১৯ মার্চ সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের কাছে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী। অভিযোগ, ভুয়ো কাগজপত্র জোগাড় করে মেহুল বেলজিয়ামে থাকার আবেদন জানিয়েছিলেন। নানা কৌশলে ভারতে প্রত্যর্পণ ঠেকানোর চেষ্টাও করে চলেছেন তিনি। বেলজিয়ামে থাকার জন্য যে সাময়িক অনুমতিপত্র পেয়েছেন মেহুল, তা যদি স্থায়ী অনুমতিতে পরিণত হয়ে যায়, তবে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই বিনা বাধায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে ভারতে ফেরানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
কয়েকটি রিপোর্টে দাবি, মেহুল চিকিৎসার জন্য সুইৎজ়ারল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁকে যেন কোনও ভাবেই ভারতে না-ফেরানো হয়, তার যুক্তি হিসাবে শারীরিক এবং মানবিক কারণও দেখাচ্ছেন।
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে পিএনবি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পর ভারত ছেড়ে পালিয়ে যান মেহুল। ২০২৪ সালের মে মাসে মুম্বইয়ের বিশেষ আদালতকে তিনি জানান, তিনি ভারতে ফিরতে পারছেন না এমন কিছু কারণে, যা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেই কারণেই তাঁকে ‘পলাতক আর্থিক তছরুপকারী’ বলা যায় না, দাবি করেছিলেন মেহুল। ইডির একটি মামলায় তিনি আদালতে এই যুক্তি দিয়েছিলেন।
২০২১ সালে অ্যান্টিগা ও বারবুডা থেকে রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন মেহুল। সেই সময় অনেকে দাবি করেছিলেন, ভারত সরকার সেখান থেকে তাঁকে অপহরণ করেছে। কিন্তু এই দাবি কিছু দিনের মধ্যেই নস্যাৎ হয়ে যায়। মেহুলকে পাওয়া যায় অপর ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র ডমিনিকায়। মেহুলের ভাগ্নে নীরব মোদীও পিএনবি-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত। তাঁকে ভারতে ফেরানোর জন্য ব্রিটেন সরকারের সঙ্গে আইনি কথাবার্তা চলছে।