একাধারে বন্দিত এবং বিতর্কিত। একাধারে নন্দিত এবং নিন্দিত। দুয়ে মিলিয়েই গড়ে উঠেছিল তাঁর তারকাদ্যুতি। তাঁর কলমের জোর নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি কখনও। লাতিন আমেরিকার নোবেলজয়ী সাহিত্যিক, বহুপঠিত মারিয়ো ভার্গাস য়োসা প্রয়াত হলেন ৮৯ বছর বয়সে। রবিবার পেরুর রাজধানী লিমায় নিজের বাড়িতেই জীবনাবসান হয় তাঁর। পাঠকের জন্য থেকে গেল দ্য টাইম অব দ্য হিরো, কনভারসেশন ইন দ্য ক্যাথিড্রাল, আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার, দ্য ওয়র অব দি এন্ড অব দ্য ওয়র্ল্ড, ডেথ ইন দি আন্দিজ়-এর মতো পঞ্চাশেরও বেশি উপন্যাস।
মারিয়োর জন্ম পেরুতেই। তবে বেড়ে ওঠার বছরগুলোর বেশ কিছুটা কেটেছিল বলিভিয়া আর স্পেনেও। পরবর্তী জীবনেও লিমার পাশাপাশি মাদ্রিদ আর প্যারিসে থেকেছেন অনেকটা সময়। প্রথম জীবনে বামপন্থী ছিলেন, ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোর অনুগামী। পরে কাস্ত্রোকে নিয়ে খানিকটা মোহভঙ্গই হয়। বন্ধু এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ়-এর সঙ্গে দূরত্বও তৈরি হয়ে যায়। ১৯৭৬ সালে মেক্সিকোর এক সিনেমা হলে মার্কেজ়কে ঘুষি মেরেছিলেন মারিয়ো। ২০০৭ পর্যন্ত কথাই বলেননি দু’জনে তার পর। মারিয়োর দাবি, ঝগড়াটা বেধেছিল কাস্ত্রোকে নিয়েই। তবে কেউ কেউ বলেন, বিষয়টা ব্যক্তিগত। মারিয়োর তৎকালীন স্ত্রী প্যাট্রিশিয়ার সঙ্গে মার্কেজ়ের বন্ধুত্বই নাকি ঝগড়ার কারণ। তবে ইতিহাসে লেখা থাকছে, ১৯৮২ সালে মার্কেজ়-এর নোবেলপ্রাপ্তির পরে সাহিত্যে নোবেল আবার লাতিন আমেরিকায় ফিরল মারিয়ো-র কাছেই, সালটা ২০১০।
তবে মার্কেজ় বা কাস্ত্রো ছাড়াও মারিয়োর জীবনে বিতর্কের অভাব ঘটেনি। ক্রমশই দক্ষিণপন্থার দিকে যাচ্ছিলেন। ১৯৮৩ সালে পেরুতে আট সাংবাদিক হত্যার তদন্ত কমিশনে মারিয়োর ভূমিকা যথেষ্ট নিন্দিত হয়। ১৯৯০-এ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও লড়েছিলেন, জিততে পারেননি। অকপটেই বলতেন, তিনি মনে করেন, নারীবাদ সাহিত্যের শত্রু। আবার একই সঙ্গে মারিয়োর অতি বড় সমালোচকও স্বীকার না করে পারেন না, মারিয়ো সারা জীবন ধরে তাঁর লেখায় রাষ্ট্রের সন্ত্রাস এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধেই কথা বলে গিয়েছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)