উদ্বাস্তুদের বিরোধিতায়। স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভায়। ছবি: এএফপি।
শরণার্থীদের সমর্থনে আজ পথে নামছে ইউরোপ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম এশিয়ার ভিটেমাটি হারানো মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা নিয়ে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশের রাজধানী এবং বড় শহরগুলোয় আজ মিছিল, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করার কথা ঘোষণা করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী-সঙ্কটের মোকাবিলায় ইতিমধ্যে দ্বিধাবিভক্ত ইউরোপ। হাঙ্গেরি বা গ্রিসের মতো দেশগুলো যেমন কড়া হাতে উদ্বাস্তু-দমনে নেমেছে, তেমনই উদার হয়েছে জার্মানি। ডেনমার্ক বা অস্ট্রিয়ার মতো কিছু দেশ আবার বুঝিয়ে দিয়েছে এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ায় সায় নেই তাদের। সব মিলিয়ে শরণার্থী সঙ্কট ক্রমশই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ইউরোপের। যৌথ ভাবে সঙ্কট মোকাবিলা তো দূর অস্ত্, বরং একে অপরের কোর্টে বল ঠেলতেই ব্যস্ত রাষ্ট্রনেতারা।
শরণার্থী সঙ্কটে ‘খ্রিস্টান ইউরোপের অস্তিত্ব’ বিপন্ন বলে মন্তব্য করে ইতিমধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান। বুদাপেস্টে বিক্ষোভ, আশ্রয় শিবিরে পুলিশি পাহারা, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার পর এ বার হাঙ্গেরি শরণার্থীদের ঠেকাতে নতুন এক নীতি ঘোষণা করেছে। জানিয়েছে, সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দিলে আশপাশের দেশগুলোকে বড় ত্রাণ-অনুদান দেবে হাঙ্গেরি। আর তাতেই চটেছে ইউরোপের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তার প্রেক্ষিতেই আজকের এই প্রতিবাদ। পাশাপাশি, আজ শরণার্থী-বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচিও পালনের ডাকও দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দেশে। তার মধ্যে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র, পোলান্ড এবং স্লোভাকিয়া।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ-উদ্যোগের আর্জিতে কেউ কর্ণপাত করছে না বলে গত কাল প্রাগের একটি বৈঠকে মন্তব্য করেন জার্মানির বিদেশমন্ত্রী ফ্র্যাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার। স্লোভাকিয়ার বিদেশমন্ত্রী মিরোস্লাভ লাজকাককের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত ‘চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে’। স্লোভাকিয়ায় আদৌ শরণার্থীরা আসতে চান না বলেও দাবি তাঁর। ডেনমার্কের দাবি, আশ্রয় দেওয়া বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত মোটেও মেনে নেওয়া হবে না।
এখনও পর্যন্ত ইউরোপে আসা লক্ষাধিক শরণার্থীর সিংহভাগই জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছেন। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের উদারনীতি যে ইউরোপের জন্য বিপজ্জনক হবে তা-ও বলতে শুরু করেছেন বেশ কয়েক জন রাষ্ট্রনেতা। জার্মানিকে বিঁধে টুইট করেছেন ফ্রান্সের প্রাক্তন মন্ত্রী প্যাট্রিক দেভেজিয়ানও।
শরণার্থীদের জন্য দরজা খুলে দেওয়ার পর গত সপ্তাহান্তেই কয়েক হাজার মানুষ এসে পৌঁছেছেন জার্মানিতে। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ সংস্থার মতে, এই শনি-রবিবার আগের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ এসে পৌঁছবেন জার্মানিতে। একই পূর্বাভাষ দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। সিরিয়া-ইরাকের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা দেশ ছাড়ছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট। ইউনিসেফের ডিরেক্টর (উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া সংক্রান্ত দফতর) পিটার সালামার মতে, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শেষ না হলে আরও শরণার্থী আসবেন ইউরোপে।
ইউরোপের শরণার্থী সমস্যা বাড়তে শুরু করায় কূটনৈতিক চাপ বাড়ছিল সৌদি আরবের উপরেও। সম্প্রতি জার্মানির পাশে দাঁড়াতে সে দেশে ২০০টি মসজিদ তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেয় সৌদি প্রশাসন। এই খবর সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পরিবর্তে এমন সাহায্য কেন করতে চাইছে সৌদি?
সৌদি আরবের একটি সংবাদমাধ্যম আজ বিদেশ মন্ত্রকের এক অজ্ঞাতপরিচয় আধিকারিকের দাবির ভিত্তিতে জানিয়েছে, এ বছরই প্রায় কুড়ি লক্ষ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে সৌদি। সেই সংখ্যাটা ঠিক কত তা অবশ্য জানা যায়নি। ওই শরণার্থীরা কোথায় রয়েছেন, সেই প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি। বরং ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আশ্রয় শিবিরে থাকার পরিবর্তে নাগরিকদের জন্য নির্দিষ্ট বাসস্থানে থাকছেন ওই শরণার্থীরা। অজ্ঞাতপরিচয় ওই শীর্ষ কর্তা বেশির ভাগ প্রশ্নেরই কোনও উত্তর দিতে না পারায় এই তথ্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলেও দাবি করছে ওই সংবাদমাধ্যম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy