শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাদ দিয়ে তাঁর স্বর চাপা দিতে চেয়েছিলেন ঢাকার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটেছে উল্টোটা। বাংলাদেশের রূপান্তরকামী গোষ্ঠীর অন্যতম মুখ হো চি মিন ইসলামের কণ্ঠ গোটা বাংলাদেশে ছেয়ে যাচ্ছে।
কেউ কেউ তাঁকে বিদ্রুপ করলেও বাংলাদেশের অনেকেই এখন হো চি-র নাগরিক অধিকার নিয়ে মুখ খুলছেন। গত ২৪ নভেম্বর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটি আলোচনায় ডাক পেয়েছিলেন হো চি। হো চি অতিমারির সময়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এক জন সাহসী নার্স হিসাবে সামনে এসেছেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনস্বাস্থ্য নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও পেয়েছেন তিনি।
বগুড়ার গরিব নাইটগার্ডের ঘরে জন্মানো ২৯ বছর বয়সি হো চি মিন বাংলাদেশের যৌন সংখ্যালঘু সমাজের অধিকার রক্ষা কর্মী তথা লিঙ্গ সমানাধিকারের লড়াইয়েরও এক জন বিশিষ্ট মুখ হিসাবে পরিচিত। তবু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশের প্রতিবাদের সামনে পিছু হটে হো চি-কে অনুষ্ঠানটি থেকে বাদ দেন আয়োজকেরা। রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারন্যাশনাল লেবর অর্গানাইজ়েশনের প্রতিনিধি, অভিনেত্রী বাঁধনও অনুষ্ঠানটিতে ছিলেন।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে, গত শুক্রবার এই ঘটনার পরে হুমকি, ঘৃণাভাষণে হো চির নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত হয়েছিলেন তাঁর সুহৃদেরা। কিন্তু এর দু’দিনের মধ্যেই ঢাকার গণভবনে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় শরীরগত নারী, পুরুষদের মতো তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদেরও সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় লিঙ্গদের সমানাধিকার ইসলাম বিরোধী নয় বলে বুঝিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আল্লা মানুষের সৃষ্টিকর্তা বলে মানলে, তৃতীয় লিঙ্গদেরও তিনিই সৃষ্টি করেছেন বলে মানতে হয়। ইসলাম তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ফেলে দিতে বলেনি। বাংলাদেশের সংবিধানেও সবার সমানাধিকার।’’
হো চি-র ঘনিষ্ঠমহল জানাচ্ছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর হেনস্থার ঘটনাটির পরে তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিজের মতো পেশা গড়ে তুলতেও তিনি উৎসাহ দিয়েছিলেন। ইসলামে সবার সমানাধিকার বুঝিয়ে হাসিনা বলেন, ‘‘কেউ মেয়েদের মতো থাকতে চাইলে তিনি ইসলামে সম্পত্তি নিয়ে মেয়েদের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তাই পাবেন। কেউ ছেলেদের মতো থাকলে চাইলে ছেলেদের যা পাওয়ার তা-ই পাবেন।’’ মা, বাবাদের বুঝিয়ে হাসিনা বলেন যে, ট্রান্স-সন্তানেরাও মা, বাবাকে দেখবেন।
সব শিক্ষাঙ্গনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে রূপান্তরকামীদের অপমান না-করে সমান সুযোগ দেওয়ার পক্ষেও হাসিনা সওয়াল করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর সমাজকর্মীরা অনেকেই এখন হো চি-র হয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন।
তবে বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইনটি কবে কার্যকর হবে তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশে ৩৭৭ নম্বর ধারাটিও অপরাধ বলে চিহ্নিত। ভারতের সমাজকর্মীরাও ফেসবুকে হো চির হয়ে প্রতিবাদে সরব। যা ঘটেছে, তাতে হো চি এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশে সমপ্রেমীদের পত্রিকা ‘রূপবান’-এর সম্পাদক জুলহাজ় মৌলবাদীদের হাতে খুন হন। তবু হো চি মনে করেন, বৈষম্য সব দেশেই কম-বেশি আছে। বাংলাদেশে থেকেই নিজের লড়াইটা লড়তে চান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy