দু’দিন ধরে প্রবল রুশ গোলাবর্ষণ চলছে পূর্ব ইউক্রেনের কসটায়ান্টিনিভকা শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ছবি: রয়টার্স।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন নিয়ে কার্যত উত্তাল গোটা বিশ্ব। কিন্তু সরকারি কার্যকলাপ নিয়ে একেবারে চুপ রাশিয়ার বিরোধী দলগুলি। গত এক বছরে যুদ্ধ নিয়ে টুঁ শব্দটিও করেনি কেউ! কেন? কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা, রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। তিনি অপ্রতিরোধ্য। যাঁরা এক সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন, তাঁরা হয় নির্বাসিত, নয়তো জেলবন্দি। অনেককে মেরেও ফেলা হয়েছে।
এ অধ্যায়ের শুরু বহু বছর আগে। কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, শাসনকালের শুরুতেই পুতিন সবার প্রথমে রুশ ধনকুবেরদের ক্ষমতায় রাশ টানেন। বিশেষ করে যাঁদের রাজনৈতিক উচ্চাশা ছিল। যেমন, রুশ তেল সংস্থা ‘ইউকোস’-এর প্রধান মিখাইল খোদোরকোভস্কিকে ২০০৩ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, কর ফাঁকি, চুরি এবং সেই সঙ্গে বিরোধী দলগুলিকে অর্থসাহায্য। দশ বছর জেলে থাকার পরে মুক্তি পান মিখাইল। কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পরে তিনি আর রাশিয়ায় থাকেননি। আর এক রুশ ধনকুবের বরিস বেরেজ়োভস্কি এক সময়ে পুতিনকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু পরে পুতিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ হয়। দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৩ সালে সেখানেই মারা যান তিনি। শোনা যায়, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। বলাই বাহুল, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। অভিযোগ, রাশিয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলিও প্রায় সরকারি সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ক্রেমলিনের কথায় তারা ওঠেবসে।
রাশিয়ায় এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী নেতা আলেক্সাই নাভালনি। তিনি জেলবন্দি। জেল থেকেই যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। বলেছেন, ‘‘জঘন্য অপরাধ, আগ্রাসনের নামে যুদ্ধ চালিয়েহাজার হাজার মানুষকে হত্যাকরছেন পুতিন।’’
২০১০ সাল নাগাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন নাভালনি। সেই সময়ে তাঁর সরকারি-বিরোধী সমাবেশে অসংখ্য মানুষ যোগ দিতেন। সমাজমাধ্যমেও তাঁর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছিল। একটি দুর্নীতি-বিরোধী প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন তিনি। ২০২১ সালে সেটিকে চরমপন্থী সংগঠন বলে ঘোষণা করে রুশ সরকার। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে অভিযোগ তুলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় সংগঠনটিকে। ইতিমধ্যে ২০২০ সালের অগস্ট মাসে সাইবেরিয়া সফরের সময়ে নাভালনিকে নোভিচক নামে এক ধরনের বিষ দেওয়া হয়েছিল। সেনার কাছে থাকে এ ধরনের নার্ভ এজেন্ট বা বিষ। ওই হামলায় প্রায় মরেই যাচ্ছিলেন তিনি। চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নাভালনিকে। সে যাত্রায় কোনও মতে বেঁচে ফেরেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে রাশিয়ায় ফিরে আসেন নাভালনি। তাঁর দেশে ফেরায় বিরোধীরা অনেকটাই উজ্জীবিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেও সাময়িক। কিছু দিন পরেই গ্রেফতার করা হয় নাভালনিকে। তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। ন’বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। এই ঘটনার পরে নাভালনির সহযোগীরা বিদেশে পালিয়ে যান। নাভালনির ডান-হাত লিয়োনিড ভলকোভের বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয়ের মামলা করা হয়েছিল। তিনিও রাশিয়া ছেড়ে চলে যান।
পুতিনের আর এক সমালোচক ইলয়া ইয়াশিন। যুদ্ধ শুরুর পরে ২০২২ সালের এপ্রিলে তিনি একটি লাইভ স্ট্রিমিং করেছিলেন। তাতে বলেছিলেন, ‘‘এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ঘাতক পুতিন।’’ এর পরে ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর’ অভিযোগে সাড়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড হয় ইয়াশিনের।
একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে রুশ সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী ভ্লাদিমির কারা-মুরজ়াকে। এর আগে ২০১৫ সাল, তার পর ২০১৭, দু’বার রহস্যজনক ভাবে বিষ দেওয়া হয়েছিল এই সাংবাদিককে। এ বারে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে ২৫ বছর জেল হতে পারে কারা-মুরজ়ার।
রাশিয়ায় পুতিন-বিরোধিতার এমন অসংখ্য নিদর্শন। সম্প্রতি এক রুশ গায়কের গান যুদ্ধের স্লোগান হয়ে উঠেছিল। তার পরেই তাঁর মৃত্যুর খবর এল। ভল্গা নদীতে বরফের মাঝে পড়ে রহস্যময় ভাবে মারা গিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy