হোয়াইট আইল্যান্ডে জেগে উঠেছে আগ্নেয়গিরি। ছবি: এপি।
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি দেখতে ভিড় লেগে থাকত প্রতিদিনই। আজ দুপুরেও প্রায় একশো জন পর্যটক ছিলেন নিউজ়িল্যান্ডের হোয়াইট আইল্যান্ডে। আচমকাই জেগে ওঠে সেই দ্বীপ-আগ্নেয়গিরি। মুহূর্তের মধ্যে কালো ধোঁয়া আর পুরু ছাইয়ের আস্তরণে ঢেকে যায় গোটা দ্বীপ। ওই বিপর্যয়ে কোনও পর্যটকেরই আর বেঁচে থাকার আশা নেই বলে জানিয়েছে নিউজ়িল্যান্ডের পুলিশ। একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। তবে মৃতের সংখ্যা ঠিক কত, তা এখনও পর্যন্ত জানাতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন। প্রাথমিক ভাবে পাঁচ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছিল পুলিশ। কিন্তু পরে তারাই জানায়, মৃতের সংখ্যা মোট কত, তা জানার চেষ্টা চলছে।
নিউজ়িল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে হোয়াইট আইল্যান্ড। চোখ ধাঁধানো বে অব প্লেন্টির অন্তর্গত নর্থ আইল্যান্ডে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশ নিতে গরমের এই সময়ে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক জড়ো হন। যাঁরাই নর্থ আইল্যান্ডে আসেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নৌকা অথবা হেলিকপ্টারে করে হোয়াইট আইল্যান্ডে ঢুঁ মেরে যান। ফলে পাকাপাকি ভাবে ওই দ্বীপে কেউ বসবাস না-করলেও সকাল থেকে দুপুর পর্যটকদের ঢল লেগেই থাকে। আজ সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন হলেও অনেকেই ওই সক্রিয় আগ্নেয়গিরি দেখতে গিয়েছিলেন। দুপুর দু’টো বেজে এগারো মিনিট নাগাদ শুরু হয় বিপর্যয়।
আগ্নেয়গিরি যে জেগে উঠতে পারে তার আঁচ পেয়েই একটি সংস্থা তাদের ২৩ জন পর্যটককে ওই দ্বীপ থেকে সরিয়ে আনে। কিন্তু বাকি যাঁরা সেখানে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আর কারওরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার জন টিমস। পর্যটকদের মধ্যে বেশির ভাগই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তবে আজ ঘটনাস্থলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দাও ছিলেন।
দগ্ধ কয়েক জন পর্যটককে হেলিকপ্টারে করে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ কপ্টারের মাধ্যমে চালাচ্ছে তল্লাশি অভিযানও। কিন্তু এখন ওই দ্বীপের যা অবস্থা তাতে, ওখানে নেমে তল্লাশি চালানো কার্যত অসম্ভব বলে জানিয়েছেন পুলিশ-কর্তারা।
মাইকেল স্কেড নামে এক পর্যটক অগ্ন্যুৎপাতের মিনিট খানেক আগে ওই দ্বীপ ছেড়েছিলেন। নৌকা চেপে ফেরার সময়ে তিনি ঘটনার ভিডিয়ো তুলে রাখেন। টুইটারে বেশ কিছু ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, অগ্ন্যুৎপাতের মুহূর্তে দ্বীপের কিনারায় ৫০ জন পর্যটক দাঁড়িয়ে। ভিতরে আরও অনেকেই। মুহূর্তে পুরু ছাইয়ের আস্তরণে ঢেকে যায় দ্বীপ। ছাই আর ধোঁয়া ওঠে প্রায় ১২ হাজার ফুট। আরও এক পর্যটক টুইটারে জানান, পরিবার নিয়ে তিনিও আজ ওই দ্বীপে গিয়েছিলেন। ঘটনার মিনিট কুড়ি আগে তাঁদের নৌকা চলে আসায়, তাঁরা মূল ভূখণ্ডে ফিরে আসেন।
আজকের বিপর্যয় নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠছে। ১৯১৪ সালে এই দ্বীপে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ১২ জন মারা গিয়েছিলেন। তার পর মাঝে মধ্যে ওই আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলেও বড় বিপর্যয় তেমন হয়নি। তবে তিন বছর আগে এক বার জেগে উঠেছিল এই আগ্নেয়গিরি। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞেরাও খুব সম্প্রতি এই আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও অবাধে কেন সেখানে পর্যটকদের যেতে দেওযা হচ্ছিল, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ শেন ক্রোনিন বললেন, ‘‘হোয়াইট আইল্যান্ডের মতো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি যে কোনও সময়ে জেগে উঠতে পারে।’’ আর এক বিশেষজ্ঞ রে ক্যাস অস্ট্রেলিয়া সায়েন্স মিডিয়া সেন্টার দ্বারা প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘‘হোয়াইট আইল্যান্ডে এই বিপর্যয় হওয়ারই ছিল। আমি দু’বার ওখানে গিয়েছি। রোজ রোজ ওখানে এত পর্যটক পাঠানো খুবই বিপজ্জনক বলে মনে হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy